টানা বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সম্প্রতি মৌলভীবাজারে সৃষ্ট বন্যার কারণে জেলার রাজনগর উপজেলায় কৃষিতে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রান্তিক ও বর্গা চাষীরা। জেলায় মনু নদীতে ৪টি স্থানে ভাঙ্গন দিয়েছিল রাজনগর উপজেলায়। ভাঙ্গন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে প্রথমে উপজেলার উপরি অংশের প্রায় ৯০শতাংশ পাঁকা আউষ ও জমিতে আবাদ কৃত রোপা আমন ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে উপজেলার উপরি অংশের পানি হাওর কাউয়াদিঘিতে নিমজ্জিত হয়ে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরের আশ পাশের আবাদ কৃত আউষ ও আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, এবছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩হাজার ১৪৬ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৮৭০ হেক্টর। চলতি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৬ হাজার ৩১০ হেক্টর জমি। পাঁকা আউষ ধান নষ্ট হয়েছে ৬৩২ হেক্টর, বীজ তলা ৩৪ হেক্টর, শাকসবজি ৪০ হেক্টর।
সরেজমিনে, রাজনগর উপজেলার উপরি অংশের মনসুর নগর ইউনিয়নের চাটুরা, হংশকলা, ভাঙ্গারহাট, মহলাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অত্র এলাকায় আবাদকৃত আউষ ও আমন শতভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এসময় মহলাল এলাকার এক বর্গাচাষী আজাদ মিয়া বলেন, আমি অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে জীবন জিবিকা নির্বাহ করি। চলতি বন্যায় আমার ২০বিঘা রোপা আমন নষ্ট হয়েছে। ২০ বিঘা জমি আবাদ করতে আমার প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে যা আমি ধার দেনা করে এই ক্ষেত আবাদ করেছি। এখন জমি থেকে পানি সড়ে গেছে। পুনরায় আবার জমিতে আবাদ করবো যে সেই সামর্থ আমার আর নেই।
হাওর পারের পশ্চিম ভাগ গ্রামের জুয়েল মিয়া বলেন, হাওরে পানি বেড়ে আমার ১০ বিঘা জমি পানিতে নিমজ্জত হয়েগেছে। ক্ষেতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল আমিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি আমরা সব সময় কৃষকদের পাশে থেকে সার্বক্কনিক খুঁজ খবর রাখছি।
মৌলভীবাজারের বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ৫০০ প্যাকেট শোকনো খাবারের প্যাকেট প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা ২০০ জন বন্যার্তদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার(২৭ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব এর নিকট খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট হস্তান্তর করেন শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. কামাল হোসেন জানান, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে ৪০০ প্যাকেট এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের কাছে ১০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী আমরা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করেছি। এসব খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, আলু, লবন, পানি, চিড়া, আটা, হলুদ মসলা, মরিচ মসলা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন উপকরণ।
খাদ্য সামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম ইয়াহিয়া খান, সহ-সভাপতি দেবাশীষ ধর পার্থ, সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. কামাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কদর আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আখতার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল বাছিত, প্রচার সম্পাদক ফারুক মিয়া, কার্যকরী সদস্য মোঃ আমজাদ হোসেন বাচ্চু, কার্যকরী সদস্য জসিম উদ্দীন পলাশ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।