স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে বিশেষ পরামর্শ সভা, উদ্দেশ্য
‘চক্ষুসেবায় নারীদের অভিগম্যতা নিশ্চিৎকরণ’
আজ কুলাউড়ায় স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে ‘চক্ষুসেবায় নারীদের অভিগম্যতা নিশ্চিৎকরণ’ বিষয়ক এক বিশেষ পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কুলাউড়ায় অবস্থিত তার নিজস্ব শাখা, হাসপাতালে সভাটি আয়োজন করে। এতে সহায়তা করে অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক চক্ষুসেবা বিষয়ক উন্নয়ন সংন্থা ‘ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন’। পরামর্শ সভায় কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫ জন স্থানীয় সংগঠক অংশগ্রহণ করেন।
চক্ষুসেবায় নারীদের অভিগম্যতা নিশ্চিৎকরণ নিয়ে সভায় মূল আলোচনা করেন ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল -এর সহকারী পরিচালক নিকোলাস বিশ্বাস। তিনি বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০১৬-২০৩০ -এর মূল চিন্তাই হল ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়’। দারিদ্র বিমোচন, ক্ষুধা নিবারণ, মান সম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অসমতা হ্রাস এবং টেকসই নগর ও জনপদ সুনিশ্চিৎ করতে চাইলে অবশ্যই প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও তাদের অভিগম্যতা সুগম করতে হবে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে নারীদের অনুপাত পুরুষদের তুলনায় অধীক যা প্রতি ১০০ জন নারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৯৮ জন। সুতরাং কোন অবস্থাতেই নারীদের পিছনে রাখা বা একপাশে সরিয়ে রাখা যাবে না।
তিনি আরো বলেন; অষ্টম পঞ্চবার্ষীক পরিকল্পনায় (২০২০-২০২৫) অন্যান্য সূচকের সাথে স্বাস্থ্য ঝূঁকি মোকাবেলায় বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন ও গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কারণ স্বাস্থ্য ঝূঁকির সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সূচকের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ সুস্থ্য না থাকলে কাজ করতে পারে না। এজন্য তার দৈনিক আয়-রোজগার কমে যায়। শুধু তাই নয়, অসুস্থ্যতার জন্য যথেষ্ঠ চিকিৎসা ব্যয় রয়েছে যা তার পুঁজি থেকে বের হয়। ফলে তার আর্থীক স্বচ্ছলতা দিন দিন কমতে থাকে এবং দারিদ্রতার দিকে ধাবিত হয়।
নিকোলাস বিশ্বাস জোরালোভাবে বলেন, জাতীয় চক্ষুসেবা পরিকল্পনা তথা ‘ভিশন ২০২০’ (সম্প্রসারিত ২০৩০) অনুযায়ী জনগণের দ্বারপ্রান্তে চক্ষুসেবা পৌছে দেওয়া ও সেবাগ্রহীতাকে এই কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা এই নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী সমগ্র সমাজকে কেন্দ্র করে চক্ষুসেবাকে এখন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো আমাদের সমাজের অসংখ্য মানুষ চক্ষুসেবার আওতায় আসেনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী হল এই কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল সহ অত্র এলাকার চা বাগানে কর্মরত দরিদ্র শ্রমিকগণ; বিশেষভাবে নারী শ্রমিকেরা চক্ষুসেবার আওতায় উল্লেখযোগ্যভাবে আসেনি। এই জনগোষ্ঠীকে চক্ষুসেবার মত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হলে এখানে উপস্থিত সকল সংগঠকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা কেউ কেউ এই সেবাকে আমলে নিতে চাই না। এর মানে হল; আমরা চোখের গুরুত্ব, এর যত্ন ও চক্ষুসেবাকে অবহেলা করছি।
পরামর্শ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল-কুলাউড়া শাখা হাসপাতালের ডাক্তার শরিফ মোঃ শাহ্ আলম ভূঁইয়া এবং হাসপাতাল প্রশাসক জনাব রঞ্জন চক্রবর্তী। পরামর্শ সভার মূল উপস্থাপনা শেষে শুরু হয় উন্মুক্ত আলোচনা যেখানে সকল অংশগ্রহণকারী চক্ষুসেবা কার্যক্রম বেগবান করার জন্য বিশেষভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোকপাত করেন এবং নানামূখী পরামর্শ তুলে ধরেন। তারা বলেন; চোখ ভালোতো শরীর চলবে; নয়তো বসে বসে কাঁদবে।