বয়স ১৮১ বছর
ভারতীয় একজন চর্মকারের (মুচি) ভূয়া দাবী
মুক্তকথা: লন্ডন, শুক্রবার ৩রা নভেম্বর ২০১৬।। মাহাশ্তা মোরাশি নামে ভারতীয় একজন চর্মকারের (মুচি) বয়স ১৭৯ বছর বলে “গিনিস ওয়ার্লড রেকর্ড” এর একটি খবরকে নিয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ খবরকে কেন্দ্র করে দুনিয়ার সর্বত্র হুলুস্থুল কান্ড শুরু হয়েছে। বিশেষ করে স্পেন, পর্তুগাল ও ইটালি ভাষায় ব্যাপক প্রচার হয়েছে এবং খুবই সত্য সংবাদ মনে করে। বাংলা অনলাইন সংবাদ মাধ্যম সাড়া বাংলাদেশে বয়স ১৮১ বছর লিখে খবরে বাজার সয়লাব করে দিয়েছে। দর্শক সংখ্যা দেখে অনেক বিজ্ঞাপনি সংস্থা অনলাইন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দিয়েছে। অথচ বিখ্যাত “মিউজিয়াম অব হোওক্স” এর মুখপত্র “হোওক্সেস টাইমলাইন” খবর দিয়েছে যে বয়সের এ দাবীটি সম্পূর্ন ভুয়া।
তারা লিখেছে, “গিনিস ওয়ার্লড রেকর্ডস” এর ওই খবরটির নায়ক মাহাস্তা মোরাশি নামক ভারতীয় অবসরপ্রাপ্ত ওই চর্মকার(মুচি) এর দাবী তিনি ১৮৩৫ সালের জানুয়ারী মাসে জন্ম গ্রহন করেছিলেন এবং এখনও বেঁচে আছেন।
ভারতীয় সরকারী নথিভুক্তি দফতরের কর্মীদের মতে ওই লোক ১৮৩৫ সালের ৬ই জানুয়ারী তারিখে বেঙ্গালুরে নিজ গৃহে জন্মগ্রহন করেন এবং নথিতে আছে যে তিনি ১৯০৩ সাল থেকে ভারানসি শহরে বসবাস করে আসছেন। তিনি ভারানসি শহরে মুচি হিসেবে ১৯৫৭ সাল অবদি কাজ করেছেন। এই সনে তিনি অবসরে যান। তখনই তার বয়স হয়েছিল ১২২ বছর।
“মোরাশি বলেন, আমি এতোদিন ধরে বেঁচে আছি যে আমার নাতি-নাতনিরাও মরে গেছে অনেক আগে।” “খুব সম্ভবতঃ মৃত্যু আমাকে ভুলে গিয়েছে। না হলে ১৮১ বছর পর্যন্ত কেউ বাচতে পারে?” “১৭০ বছর তো দূরের কথা ১৫০ পর্যন্তই কেউ বাঁচতে শুনিনি। আমার মনে হয় আমিই অমর একজন। আমি আর মরবো না!”
মোরাশি’র জন্ম সনদ আর পরিচয় পত্র তার দাবীর পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়। শুধু কোন ডাক্তারী পরীক্ষা তার বয়সের দাবীকে স্বীকার করেনা। সর্বশেষ যে ডাক্তার মিস্টার মোরাশি’কে দেখেছিলেন তিনি ১৯৭১ সালে মারা গেছেন। ফলে আগের কোন ডাক্তারী তথ্য অল্পই পাওয়া যায়। এতো বয়স কি করে হতে পারে এমন একটি কথার জেরে মুরাসির উত্তর, “সংযম। ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হত। সেই থেকেই অল্প খাওয়া অভ্যাস হয়ে যায়। তার পরেও কোন দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাইনি।” এ কথা বলে হাসলেন ১৮১ বছরের মোরাশি।
কিন্তু ওই সংবাদটি যে আদৌ সত্য নয় সেই কথায় আসি। ওই খবরটির মূল সূত্র হলো “ওয়ার্লড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট.কম” নামের একটি ভূয়া সংবাদ অনলাইন। তাদের ওই সংবাদগুলো রস-রহস্য পরিবেশনের জন্য অলীক কাহিনী বলে “ডিসক্লেইমার” বলা আছে। অবশ্য “ওয়ার্লড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট.কম” মোরাশি’র ছবিখানা নিজেরা তৈরী করেনি। দীর্ঘদিন যাবৎ এই ছবিখানা দিয়ে প্রচার চলছে আর শেষে “ওয়ার্লড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট.কম” ‘ডিসক্লেইমার’ দিয়ে রহস্যভরে খবরটি পুরঃ প্রচার করেছিল মাত্র। তবে ওই ছবিটি কার সে বিষয়ে “হোওক্সেস টাইমলাইন” কোন সুরাহা করতে পারেনি।
শেষ বয়সে বয়সকে বাড়িয়ে বলা মানুষের এক সাধারণ অভ্যাস। অনেক মানুষ সমাজে তাদের কদর বাড়াতে নিজের বয়স মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে বলে থাকে। এতে সমাজে অন্যান্যরা তাদের একটু সমীহের চোখে দেখবে বলে তাদের
এ ধরনের খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত জাল বয়স দিয়ে গোল বাঁধানোর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭০ সালে ইকুয়েডরের শহর ভিলকাবাম্ভায়। ওখানে বেশ কয়েকজন শতবর্ষেরও অধিক বয়স দাবী করে বসে। পরে গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে তাদের কেউই শতবর্ষি নয় বরং তার নিচে। এপর্যন্ত নথিভুক্ত শতাধিকবর্ষি মানুষ ছিলেন ফ্রান্সের মহিলা “জিন কালমেন্ট”। তিনি ১২২ বয়সে ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।