লন্ডন: রোববার, ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ) এর ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই সময়োপযোগী সংলাপের আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)।
একাত্তুরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েই এই আদালত গঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালের “বাংলাদেশী কোলাবোরেটরস(স্পেশিয়েল ট্রাইব্যুনেলস) ওর্ডার কে অনুসরণ করে। করা হয়েছিল তাদের বিচারের জন্য যারা উনিশ শ’ একাত্তরে পাক-সামরিক হায়েনাদের সাথে সহায়তা করেছে। ওই সময় সারা বাংলাদেশে এ দায়ে অপরাধিদের সংখ্যা বিতর্কিত হলেও ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ছিল।
পাকিস্তান সামরিক জান্তার সহযোগীদের বিচারের ঘোষণায়, ১৯৭৩ সালের মে মাসে, গণহত্যার অপরাধে অপরাধি তদানিন্তন পাকিস্তান সরকার, বিপুল সংখ্যক বাংগালী সরকারী চাকুরেদের আটকিয়ে দেয় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে। ওই সময় পাকিস্তান, পাঁচ পাঁচ দফা “আন্তর্জাতিক বিচার আদালত”এ তাদের গণহত্যাকে জায়িজ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। আন্তর্জাতিক আদালত তা মেনে নেয়নি বরং গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তার পক্ষেই রায় দিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক আইন অমান্য, ১৯৪৯ সালের “জেনেভা কনভেনশন” লঙ্ঘন, শান্তি ও মানবতা বিরুধী অপরাধ সংগঠনের জন্য যে বা যারা দায়ী হবে, তাদের বিচারের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনে প্রথমে ঘোষিত হয়েছিল “ইন্টারনেশনেল ক্রাইমস (ট্রাইবুনেলস) এক্ট ১৯৭৩। এ সময় বাহাত্তরের “কোলাবোরেটরস(স্পেশিয়েল ট্রাইব্যুনেলস) ওর্ডার” এর আওতায়, যাদের ১৯৭৩ সালে সাধারণ ক্ষমা দেয়া হয়নি, তাদের বিচারের আওতায় এনে আইনীভাবে বিচার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই এক্ট ১৯৭৩ ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সুপরিকল্পিতভাবে পরিবারসহ হত্যা করে এ বিচার প্রক্রিয়াকে বন্ধ রাখা হয়।
আসে ১৯৯১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর, একাত্তরের ঘাতক দালালদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতাকারী প্রয়াত গোলাম আযম জামাত ই ইসলাম দলের চেয়ারমেন মনোনীত হলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে মহা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মূলতঃ এ ঘটনার কারণে একাত্তরের ঘাতক দালালদের প্রতিহত করার প্রয়োজনীয়তা সারা জাতি অনুভব করে এবং পরবর্তীতে লেখক রাজনীতিক পরলোকগত জাহানারা ইমামের প্রস্তাবনার সাংগঠনিক রূপ ছিল- “ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি”। ওই সময়ই ২৬শে মার্চ ১৯৯২, একটি প্রদর্শনীমূলক “গণআদালত” গঠিত হয় এবং আদালতে গোলাম আযমের মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয়।
ইতিহাস কোথায়ও থেমে থাকেনি। মানুষ এগিয়ে যায়। অপরাধিদের বিচারে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে উপলব্দি করে ২০০৬ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর অষ্ট্রেলিয়ার ফেডারেল আদালতে, পাকসামরিক জান্তা ও তাদের দোসর সহযোগীদের একাত্তুরের গণহত্যার বিচারের আবেদন জানিয়ে সোলায়মান নামের একজন একটি মামলা দায়ের করেন।
ততোদিনে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে এসেছে। খুনিদের, ধর্ষণকারীদের, বিধর্মী মহিলা “মাল ই গণমত” হাদিসদানকারী পশুদের বিচারের শপথে এগিয়ে আসে। ২০০৯ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক আদালত। সোলায়মান এসোসিয়েটসও অষ্ট্রেলিয়ার আদালত থেকে তাদের মামলা তুলে নেন। বাংলাদেশে শুরু হয় বিচার। যদিও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৭টি মামলার রায় হয়েছে। তবুও বিচার থেমে থাকেনি। চলছে এবং শেষ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলবে। কারণ এটি ইতিহাসের কথা, এটি কালের গতি।
বিচারের চলমান এ কাজটিকে তার পূণ্যার্থ স্থিতিতে পৌঁছে দিতে ও এর ঐতিহাসিক বিবরণী ন্যায় বিচারের গাঁথায় পূর্ণ মহিমায় ও মর্যাদায় স্থাপন করতে এখনও অনেক পথ বাকি। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ) এর ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই সময়োপযোগী সংলাপের আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)। তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।