লন্ডন: বৃহস্পতিবার, ১৩ই পৌষ ১৪২৩।। প্রায় ডজনখানেক নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব আজ বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমার নেত্রী অং সাং সু চি’র সমালোচনা করে বলেছেন, মায়ানমারের রাখাইন স্টেটের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে সু চি ব্যর্থ হয়েছেন। যেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাড়ী-ঘর হারিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত মানবিক সংকট।
সাম্প্রতিক কয়েক মাসে মায়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযানে শত শত রোহিঙ্গার মৃত্যু থেকে শুরু করে বাড়ী-ঘর পুড়িয়ে দেয়া, মহিলাদের ধর্ষণ এমনকি বিধিবহির্ভুতভাবে রোহিঙ্গাদের আটককরে রাখার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে কয়েকজন নোবেল বিজয়ীসহ ২৩জন বিভিন্ন রাজনীতি ও ব্যবসায়ী নেতা জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে প্রেরিত এক খোলা চিঠিতে এসব বলেছেন।
ওই পত্রে তাঁরা বলেন, “এ ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনার পরও আজ অবদি মানবাধিকার সংস্থা ও কর্মিদের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ফলে এমনিতেই গরীব একটি এলাকায় আতংকজনক মানবিক সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।” “হাজার হাজার পালিয়ে গিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে যাদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়া হবে।”
জাতিসংঘের মায়ানমার মিশন বৃহস্পতিবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উত্তর চেয়ে একটি ইমেইল বার্তা পাঠানো হয়েছিল যা সাথে সাথে কোন জবাবও মিলেনি।
এ মাসেরই প্রথমদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনদের উপর মায়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযান, মানবাধিকারের লংঘন জাতীয় অপরাধই হবে। রোহিঙ্গাদের উপর সামরিক বাহিনীর শক্তিপ্রয়োগের ঘটনায় মায়ানমার প্রকট সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং এমেনেস্টিসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো মায়ানমার সামরিক বাহিনীকে ব্যাপক হত্যা, লুন্ঠন ও ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
নোবেলজয়ীদের উক্ত খোলা চিঠিতে জাতিসংঘকে বলা হয়েছে, মায়ানমার সরকারকে উৎসাহিত করার জন্য যাতে তারা মানবিক সাহায্যের উপর থেকে নিষেধারূপ তুলে নেয় এবং সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মিদের রাখাইন এলাকায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে যাতে রাখাইন রাজ্যে কি ঘটেছে তার উপর একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তানুষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা যায়।
চিঠিতে তারা, রোহিঙ্গাদের অবস্থাকে জরুরী ঘোষণা দিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন এবং এই সপ্তাহেই জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদককে মায়ানমার সফরের ব্যবস্থা করার কথা বলেন।
ওই চিঠিতে তারা আরও বলেন, “যদি ব্যবস্থা নিতে আমরা ব্যর্থ হই, তা’হলে ওখানে মানুষ নাখেয়ে মারা যেতে শুরু করবে, যদি তাদেরকে গুলি করে মারা না হয়, এবং আমরা মনে হয় মানবতা বিরুধী জঘন্য এক অপরাধের নেতিবাচক দর্শক হয়েই থাকবো।”
উক্ত খোলা চিঠিতে নোবেল বিজয়ী যারা সাক্ষর করেছেন তারা হলেন পূর্ব তিমুরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জোস রামোস-হর্তা, দক্ষিণ আফ্রিকার সামাজিক অধিকার কর্মি আর্চবিশপ ডেসমন্ড টিটু এবং বিশ্বের সর্বকণিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানের নারী শিক্ষার প্রবক্তা মালালা ইউসুফজাই। অন্যান্যদের মধ্যে ইটালির প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী রোমানো প্রদি এবং বৃটেনের ব্যবসায়ী নেতা রিচার্ড ব্রন্সন। (অনলাইন মেইল থেকে অনুদিত)