হারুনূর রশীদ।। অনেক চীনা মানুষই ক্ষমা করতে পারবে না যদি জানতে পারে যে এই মহিলা এখনও বেঁচে আছে। চাই লিং, ১৯৮৯ সালের তিয়েনানমেন স্কোয়ার এর সেই প্রতিবাদ আন্দোলনের নেত্রী। একটি বিদেশী সংবাদ সংস্থার সাথে সাক্ষাতে চাই লিং স্বীকার করেছেন যে, গণতন্ত্র ও তার অনশন ধর্মঘট যে ব্যর্থ হবে বিষয়টি বুঝার কমতি ছিল ছাত্রদের মধ্যে। তিনি খুব দুঃখ প্রকাশ করেন কারণ তিনি বিষয়টি ছাত্রদের বলতে পারেননি। এগুলো গোপন কথা এসব খোলামেলাভাবে বলা যায় না। চাই লিং এর নিজের কথা- “মুলত তাদের ইচ্ছা ছিল রক্ত দেখার; এবং এতে সরকার চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তো এই ভেবে যে অবশেষে তারা তাদের মানুষদের খশাইয়ের মত হত্যা করলো।” তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ওই স্কোয়ারে কেবলমাত্র এক নদী রক্ত বইয়ে দিতে পারলে তখনই দেশের মানুষ চোখ খুলে দেখতো এবং ঐক্যবদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু এ উদ্দেশ্যের কথাটি কিভাবে আমাদের সাথী বন্ধুদের বলা যায়?”
ওই সাক্ষাৎকারে শেষের দিকে তিনি তাদের সমালোচনা করেন যারা ওই রক্তবন্যা বইতে দেন নি। এরপর তিনি সেই পুরানো কথা উচ্চারণ করেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এখানে এই স্কোয়ারে রক্ত বইছে দেখা। জীবন আর রক্তের বিনিময়ে গণমানুষকে জাগিয়ে তোলা।”
হাস্যকর হলেও সত্য যে ওই সাংবাদিক যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলো, যদি তিনি নিজে স্কোয়ারে থাকতেন তা হলে কেমন হতো? উত্তরে তিনি বলন, “আমার মনে হয় আমার থাকা উচিৎ ছিল না। আমি অন্যান্যদের থেকে আলাদা মানুষ। আমি সরকারের কালো তালিকায় আছি। এই সরকারের বর্বর নিপীড়নের শিকার হতে আমি চাই না। আমি এসব উৎরে যেতে চাই। টিকে থাকতে চাই।” এখানে একটু পাল্টিয়ে এই প্রবাদ বাক্যটি না বলে পারছিনা-“ভ্যালারে বিভিষণ বেঁচে থাক চিরকাল।”
১৯৮৯ সালের ৪ঠা জুন রাতে, সামরিক আইন জারীর পরও চাই লিং বার বার নতুন প্রজন্মের উঠতি চাইনীজদের বেইজিং এর রাস্তায় প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বান জানিয়ে তিনি আমেরিকায় পালিয়ে যান। আমেরিকার সিআইএ তাকে পালাতে সাহায্য করেছিল।
চীনের তিয়েনানমেন স্কোয়ারে এই ঘটনা ঘটানোর পূর্ব পরিকল্পনা করেছিল আমেরিকা, বৃটেন ও ফরাসীরা। তাদের ওই অভিযানের সাংকেতিক নাম ছিল “অপারেশন ইয়েলো বার্ড” বা “অপারেশন সিসকিন”। হংকং এ বসে সিআইএ(U.S. Central Intelligence Agency (CIA), এসআইএস(Britain’s Secret Intelligence Service (SIS) ও ফরাসীরা এ ফন্দি আঁটে। হংকং এর ফরাসী দূতাবাস তাদের সর্বোচ্চ দূতিয়ালী চালায় অনশন ও আন্দোলনকারী নেতানেত্রীদের নিরাপদে হংকং হয়ে বিদেশ পাচার করার কাজে। তারা অত্যন্ত সফলভাবে ৪ শত আন্দোলনকারীদের গোপন পথে হংকং হয়ে বিদেশ পাচার করেছিল। এই আন্দোলনের ২১জন প্রধান ছাত্রনেতার মধ্যে ১৫ জনকেই তারা উদ্ধার করে পাচার করতে সক্ষম হয়। এই চাই লিং তাদেরই একজন। হংকং ভিত্তিক ৩জন মাত্র আন্দোলনকারীকে চীন সরকার গ্রেফতার করেছিল কিন্তু পরে হংকং সরকারের হস্তক্ষেপে এদেরও ছেড়ে দেয়। (কোরা ও উইকিপিডিয়া অবলম্বনে)