লন্ডন: রোববার, ১লা মাঘ ১৪২৩।। পৌষ সংক্রান্তি যা তামিলনাড়ুতে ‘পোঙ্গল’, প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতারই এক অবিচ্ছেদ্য উৎসব। সারা ভারতব্যাপী বিভিন্ন নমুনায় এই পার্বণটি পালিত বা উদযাপিত হয়ে আসছে অতীতের সেই আবচা অজানা সময় থেকেই। ভারতের তামিলনাড়ুতে প্রতিবছরই খুব ঘটা করে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এই পার্বণের শুরু হয়। এবারও তাই গেল শনিবার থেকে তামিলনাড়ুতে শুরু হয়েছে পোঙ্গল বা নবান্ন উৎসব। কিন্তু গেল বারের মত এ বারেও হচ্ছে না ওই উৎসবের মূল আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী আর ভয়ঙ্কর “জাল্লিকাট্টু”। ২০১৪ সালেই এই ‘জাল্লিকাট্টু’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু কেন ‘জাল্লিকাট্টু’কে নিষিদ্ধ করল সুপ্রিম কোর্ট? একটি ছুটন্ত ষাঁড়কে কৌশলে কাবু করার ঐতিহ্যবাহী এই খেলায় পশু নির্যাতন হয়— এই কারণ দেখিয়ে এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তামিলনাড়ু সরকার গত বছর এই রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানায়। কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালত সে আর্জি খারিজ করে দেয়। এর পর তামিলনাড়ু বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাল্লিকাট্টুর সমর্থনে বিল পাশ হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্ডিন্যান্স এনে জাল্লিকাট্টুকে বৈধতা দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়। জাল্লিকাট্টু নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে এ বছর ফের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় তামিলনাড়ু সরকার। কিন্তু পোঙ্গলের আগে কোনও ভাবেই আগাম রায়দান সম্ভব নয়, বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যবাহী অথচ ভয়ঙ্কর এই জাল্লিকাট্টু খেলা আসলে কি?
‘জাল্লিকাট্টু’ মানুষ আর ষাড়ের এক ভয়ঙ্কর খেলা। এই ‘জাল্লিকাট্টু’কে তামিল ভাষায় বেশ কয়েক নামে ডাকা হয়। যেমন ‘চাল্লিকট্টু’ বা ‘এরুতাঝুবাল’ অথবা মাঁজুবিরাট্টু। অবশ্য এ খেলাটি তামিল জাতির প্রাচীন পরম্পরাগত একটি ক্রীড়ানৈপূণ্য। যেখানে একটি ষাঁড়কে তার শিং ধরে কাবু করতে হয়। এই খেলা তামিলনাড়ুর আরও এক প্রাচীন উৎসব ‘পোঙ্গাল’ উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয়। ‘জাল্লিকাট্টু’ শব্দটি এসেছে ‘চাল্লিক্চু’ ও ‘কাট্টু’ সন্ধি হয়ে। ‘চাল্লিক্চু’ অর্থাৎ মুদ্রা আর ‘কাট্টু’ অর্থাৎ উপহার থেকে। এই ক্রীড়া সেইসব প্রাচীন ক্রীড়াগুলির মধ্যে একটি যা আজও বর্তমান। ‘জাল্লিকাট্টু’ খেলাটি তামিলনাড়ুর গ্রামীণ উৎসবগুলির অংশ মনে করাহয়। নীলগিরির কাছে করিক্কিয়ুর-এ পাথরে খোদাই করা কিছু ষাঁড়ের মূর্তি পাওয়াগেছে, যা প্রায় ২০০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বলে ধারনা করা হয়। এই খেলাতে যে ষাঁড়গুলি ব্যবহার করা (খেলানো) হয়, সেইসব ষাঁড়গগুলিকে বাচ্চাবস্থা থেকেই বিশেষভাবে লালনপালন করাহয়।
‘জাল্লিকাট্টু’ নিয়ে গত মঙ্গলবার প্রশ্ন উঠেছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। জাল্লিকাট্টু বা তামিলনাড়ুর ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, শতাব্দী প্রাচীন প্রথা বা শুধু ঐতিহ্য বজায় রাখতেই কি টিকিয়ে রাখতে হবে? তামিলনাড়ু সরকারের যুক্তি ছিল, ‘জাল্লিকাট্টু’ তামিলনাড়ুর সুপ্রাচীন প্রথা এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। তার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, প্রাচীন প্রথা বলেই কি জালিকাট্টু চালিয়ে যেতে হবে? এটা একেবারেই আইনসঙ্গত নয়। বাল্য বিবাহও তো প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু তার মানে কি এটা আইনসঙ্গত? আগামী ৩০ আগস্ট জাল্লিকাট্টু নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে।(উইকিমিডিয়া ও আনন্দবাজার অবলম্বনে)