হারুনূর রশীদ।।
আমাদের দেশীয় গ্রামীন ভাষায় একটি কথা আছে- ‘বড়লোকের কথার ঠিক নেই’। ছোটবেলায় এ কথাটির মর্ম সঠিকভাবে মাথায় যায়নি। এখন এই পরিণত বয়েসে বুঝি কথা কয়টি হাড়ে হাড়ে সঠিক। হালে, বড়লোক মানেইতো টাকাওয়ালা। আর এই ধনবানদের কথার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। সে তিনি রাজাই হোন আর সাধারণ মানুষের কাতারের কেউ কেটা হোন। চরিত্র একই। আর গ্রামীণ সাধারণ মানুষের এই কথাটির তাৎপর্য মর্মে মর্মে উপলব্দি করছি বিশ্ব রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী চৌকুষ রাজনীতিক ট্রাম্প সাহেবের চমক লাগানো কিছু কাজে।
নির্বাচনের আগে তিনি রাশিয়ার পুতিনের জানি দোস্ত হিসেবে উদ্ভাসিত ছিলেন। ‘গণতন্ত্রীরা’ স্বয়ং বলেছে এবং এখনও বলছে যে নির্বাচনে পাশ করাতে তাকে সহায়তা দিয়েছে রাশিয়া। সেই ট্রাম্প সাহেব ক্ষমতায় আরোহণের সাথে সাথেই কেমন যেনো মনে হচ্ছে সুর পাল্টিয়ে নিয়ে বিপক্ষ এক অক্ষ গড়ে তোলতে চেষ্টা করে চলেছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন শক্তি বলয়ের আবির্ভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শক্তির সমীকরণের পরিবর্তন হতে চলেছে।
কলকাতার বর্তমানের খবরে প্রকাশ, গত পরশু রাতে রিপাব্লিকানদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীকে ফোন করে বলেছেন যে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ সহ হাল আমলের তাবৎ গুরুত্বপূর্ণ দুনিয়াবী সমস্যা নিয়ে ভারতের সাথে ‘এক জোট হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে’ কাজ করতে চান। বর্তমান পত্রিকার ভাষায়- “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতকে প্রকৃত বন্ধু বলে মনে করে। এবং বিশ্বজুড়ে চলা আর্থিক ও ‘স্ট্র্যাটেজিক’ অস্থিরতার মোকাবিলায় ভারত এবার থেকে আমেরিকার প্রধান অংশীদার হিসাবে বিবেচিত হবে।”
আমাদের খেয়াল আছে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর আমল থেকেই আমেরিকা ভারতের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছিল। তাই ভারতের মত বিশাল বাজারের দিকে ট্রাম্প সাহেবের চোখ যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতো সাততাড়াতাড়ি রাশিয়া থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে পাকিস্তানকে তালাক দিয়ে ভারতের দিকে সখ্যতার হাত বাড়াবে এতোটুকু হয়তো অনেকেই ভাবেনি। লাদেন হত্যাকান্ডের নাটকীয়তা থেকে ধীরে ধীরে পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার বৈরীভাবের প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল। তখন থেকেই রাশিয়াকেও দেখা গেছে বিভিন্ন ফোরামে বৈঠকে চীন আর পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে কথা বলতে। ফলে মনে হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতি নতুন মেরুকরণের পথে হাটছে।
লন্ডন: শুক্রবার, ১৩ই মাঘ ১৪২৩