লন্ডন: বুধবার, ৩রা ফাল্গুন ১৪২৩।। সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা এবং এ জন্য সংসদে প্রস্তাব আনা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে জানাব যে পাকিস্তান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। এ বিষয়ে সারা বিশ্বে প্রচার চালাব, যাতে দিনটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।’
সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে আমাদের ইতিহাস জানানো উচিত।’
পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত জুনায়েদ আহমেদের লেখা ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ, মিথস এক্সপ্লোডেড’ বইয়ের বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ আলোচনার সূত্রপাত ঘটান এবং ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানান। বইটিতে তথ্য বিকৃতি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে তারা গণহত্যা শুরু করেছিল। সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার, পুলিশ বাহিনীকে হত্যা করল। পিলখানায় ইপিআর, আনসার বাহিনী, সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে। আমি মনে করি, আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৫ মার্চ আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর কিছুদিন পরে আমার মা, আমার ভাই জামাল, রাসেল, রেহানা ও আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। বন্দিখানায় থেকে অনেক কিছুই দেখেছি। স্যাঁতসেঁতে বাড়িতে রেখেছিল। দেশজুড়ে শুধু গণহত্যা নয়, রাজাকার-আলবদর বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আমাদের মেয়েদের তুলে দিয়েছে। তাদের কথা ছিল, এ দেশের সবাই হিন্দু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ খুঁজে বের করে শেষ করো। তাদের কথা ছিল, মানুষ চাই না, মাটি চাই। সে জন্য তারা গণহত্যা চালিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের চোখে দেখেছি, ঢাকা শহরে বিভিন্ন রাস্তায় লাশ পড়ে আছে। যে বাড়িতে আমাদের বন্দী করে রেখেছিল, ঠিক তার সামনের বাড়িটায় মেয়েদের নিয়ে এসে ধর্ষণ করত। তাদের চিৎকার কান পাতলে শোনা যেত। ১৩-১৪ বছরের মেয়ে। পাকিস্তান এখন বই লিখে নিজেদের অপকর্ম মুক্তিবাহিনীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এটা পাকিস্তানের জন্য লজ্জার। এই বই লেখার দুঃসাহস তারা কোথা থেকে পেল? গণহত্যার জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। তা তো করেইনি, উল্টো দোষ চাপায়। তাদের ধিক্কার জানাই। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানানো হবে।’
আজ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি অনুষ্ঠানে বইটি দেখেছেন জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বইটিতে দেখলাম আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, ৩০ লাখ শহীদ—সবকিছুর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্য উত্থাপন করেছে। বইটি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল আমাদের হাইকমিশনে পাঠিয়েছেন।’
তোফায়েল আহমেদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বহুল প্রচারিত বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে বলেন, রিকশাওয়ালার মৃতদেহ পড়ে আছে। এই ছবিটাকে তারা ক্যাপশন করেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর ম্যাসাকার। হাজার হাজার ডেডবডি পড়ে আছে। লিখেছে, মুক্তিবাহিনী হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে। পরে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের দাবিসংবলিত একটি নোটিশ ইতিমধ্যেই পেয়েছি। অগ্নিঝরা মার্চের যেকোনো দিন সংসদের বৈঠকে নোটিশটি নিয়ে আলোচনা হবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সব সদস্য টেবিল চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। (ভিনিউজ থেকে: ছবি-ইন্টারনেট)