গত ১৩ই এপ্রিলের “ইভিনিং ষ্ট্যান্ডার্ড” পড়িলাম। সাংবাদিক ‘‘মেথিউ ডি’এনকোনা’’ উপসম্পাদকীয় লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরুনের সম্পদ নিয়ে। তিনি খুব সুচতুরভাবে ক্যামেরুণের পক্ষে ঢোল বাজানোর চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়েছে। আমেরিকান কমেডিয়ান ক্রিস রক এর এক উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি লিখেছেন- ‘‘ক্রিসরক’’একসময় বলেছিলেন-“যদি গরীবেরা জানতো ধনী মানুষেরা কি রকম তা’হলে রাস্তায় রাস্তায় দাঙ্গা শুরু হয়ে যেতো। হয়তো আক্ষরিক অর্থে তা সত্য ছিল না কিন্তু ঐ রক শিল্পী নিশ্চয়ই কিছু বুঝতে পেরেই এমনতর উক্তি করেছিলেন।”
তার লিখা থেকেই জানতে পারলাম আমাদের এই দেশে অর্থাত বৃটেনে সর্বাধিক ধনী সংখ্যায় শতকরা ১০ভাগ মানুষ গোটা দেশের সমুদয় সম্পদের ৪৫ভাগের মালিক। অথচ দেশের ৫০ভাগ মানুষ মাত্র ১০ভাগ সম্পদের অধিকার রাখেন। এই চমকপ্রদ পরিসংখ্যান অনেক সময় নিরবে নিভৃতে ঘুমায় কারণ মানুষ জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে এদিকে নজর দেয়ার সময় তাদের নেই। কিন্তু মাঝে মধ্যে সম্পদ বন্টনের এই অসমতা উন্মুক্ত হয়ে ক্ষুব্ধ রাজনীতিকে মথিত করে তোলে আর অসম সম্পদ মালিকদের এক করুণ বিব্রতকর উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে দেয়। তিনিই আবার লিখছেন- প্যানামা ভিত্তিক সিটি ফার্ম ‘মোজাক ফোনসেসা’ থেকে হেকিং এর মাধ্যমে ক্যামেরুণের সম্পদের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মোটাদাগে না হলেও অনুরূপ ঘটনাই ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরুণকে নিয়ে। ক্যামেরুণ ইটনে পড়ুয়া ছাত্র ছিলেন, তিনি অভিজাত ‘বুলিংডন’ ক্লাবের পোষাক পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে আনন্দ উল্লাসে সময় কাটিয়েছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে খুবই সচ্ছল ছিলেন সে এক বিষয়; আর তার বিশাল সম্পদ পাহাড়ের বর্তমানে উন্মোচিত হিসাব সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন বিষয়।
তার দেয়া হিসাবে এবং গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে বিবিসি সহ অন্যান্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হিসাবে নগদ অর্থের যে বিবরণ পাওয়া যায় যেমন তিনি ২০১১সালে তার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ২০০শত হাজার পাউন্ড, এর সাথে যদি যোগ হয় উত্তরাধিকার সূত্রে বাবা ‘ইয়ান’ থেকে পাওয়া ৩০০শত হাজার পাউন্ড, তা’হলে পরিমান যা দাঁড়ায় তা বৃটেনে বার্ষিক গড় বেতনের কমপক্ষে ১০গুন বেশী। তা’হলে ১৯৮২সালে ক্যামেরুণ সিনিয়রের প্রতিষ্ঠিত ব্লেয়ারমোর হুল্ডিংস এর অংশীদারীত্বের লাভ হিসাবে ২০১০সালে পাওয়া ৩০হাজার পাউন্ডের কথা আর না বললেও চলে। আরামদায়ক বিলাসি জীবন কাটানোর জন্য উপরের দু’টি বিনিয়োগই যথেষ্ট।
সম্পাদক আরো ইনিয়ে বিনিয়ে লিখেছেন- ক্যামেরুণ গলা উঁচিয়ে বলতেই পারেন যে তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ কখনও অবৈধভাবে কোন সম্পদ আহরণ করেননি। আরো দু’কদম এগিয়ে তিনি বলছেন-কিন্তু ক্যামেরুণের সম্পদ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে, দেশের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জনের ঝড় উঠেছে ঐ অর্থের কোন প্রতারণাময় ব্যবহারের জন্য নয়, কিংবা নয় অবৈধভাবে সম্পদ আহরণের জন্য। বরং প্রশ্ন উঠেছে রক্ষণশীল দলের প্রবীণ একজন নেতার প্রয়োজনাধিক বিলাসী জীবন যাপনের উপর।
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন বৈধ কি অবৈধ তিনি আগেভাগেই জানেন কি করে? আর মায়ের কাছ থেকে বাবার কাছ থেকে টাকা পাওয়ার এ ধরনের চাতুরীময় হিসেব দেখানো এদেশে অহরহই ঘটছে। আমরা জানি, সুখে শান্তিতে গড় বিলাসে জীবন কাটানোর জন্য দুনিয়ার কোথায়ও বিশেষ করে বৃটেনের মত দেশে একজন মানুষের এতো অর্থের প্রয়োজন হয় না।
ঐ বিজ্ঞ সম্পাদক একটি সত্য কথা অবশ্য বেফাঁসভাবে বলে ফেলেছেন যে ক্যামেরুণ তার উত্তরাধিকারের সম্পদের রাজনৈতিক সমস্যার বিষয়ে খুবই অবহিত আছেন তিনি জানেন এবং বুঝেন এদেশে শ্রেণী রাজনীতি মরে যায়নি বরং ঘুমন্ত। তিনি বুঝেন এবং জানেন যে রক্ষণশীল গুত্রের দ্বারা ধনী, ক্ষমতাশালী ও সফলদের পক্ষে কোন বিশেষ একটি বিষয় নিয়ে প্রচারাভিযান চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে দেশের সর্বশেষ অর্থনৈতিক ভাঙ্গনের পর থেকে তা কি মাপের ঝুঁকিময় তা তার নখদর্পণে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, যে খাল বা খন্দক তাকে সাধারণ ভোটার থেকে সরিয়ে রাখছে বিষয়টি উদার উন্মুক্তভাবে কথনও দেখা হয়নি। তার মতে ক্যামেরুণের রাজনৈতিক কৌশলের জবাব পেয়েছেন দ্বিমাত্রিক। প্রথমত: তিনি ঐন্দ্রজালিকভাবে পেয়েছেন একটি জাতীয় বর্ণনামুলক হিস্যার দূর্দশা-“আমরা সকলেই এই নিদারুণ সময়ের ভাগিদার”। যেখানে ধনীরা অত্যন্ত ন্যায্যভাবেই সমস্যার একটি বৃহত বোঝা কাঁধে তুলে নেবে। দ্বিতীয়তঃ তিনি ঘোষণা করেছেন-“যে কোন কাজের সূচনার চেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় তার লক্ষ্য নির্ধারণ।” তিনি আরো বলেছেন এটি বিষয় নয় তুমি কোত্থেকে এসেছো, বরং এটাই বিষয় যে তুমি কোথায় যাচ্ছো।