লন্ডন: বৃহস্পতিবার, ১১ই ফাল্গুন ১৪২৩।। মরে ভেসে এসে ফিলিপাইনের উপকূলে উঠে এসেছিল গভীর সাগরের মাছ “অরফিস”(oarfish)। গভীর সাগরের এ মাছটি এভাবে মরে ভেসে আসায় স্বাভাবিক প্রশ্ন জেগেছে যে আমরা এ প্রাণীটি সম্পর্কে কতটুকু জানি বা জানতে পেরেছি।
দ্বিতীয় দফায় আবারো সংবাদ হয়ে আসলো এই “অরফিস”। এবারো সংবাদের ক্ষেত্র ফিলিপিনস। “ন্যাশনেল জিওগ্রাফি” ছবি সহ এ খবরটি দিয়েছে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭। ওরা লিখেছে, বিশালাকৃতির এই “অরফিস” সাধারণতঃ গভীর সাগরের মাছ জাতীয় প্রাণী। তবে অনেকেই একে সাপ জাতীয় বলে মনে করেন।
সমুদ্র জলরাশির উপর থেকে তলানির দিকে কমপক্ষে ২শত মিটার থেকে ১ হাজার মিটার জলের নিচে এ প্রাণীটি বসবাস করে। সম্ভবতঃ সাগরের গভীরে জলস্রোতের দমকা আলোড়ন এ ধরনের দু’একটি মৎস্যকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে স্রোতের ঠেলায় মারা যায় এবং উপরে ভেসে উঠে।
লুইসিয়ানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক গবেষক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী মার্ক বেনফিল্ড ন্যাশনেল জিওগ্রাফিতে লিখেছেন যে, গভীর জলরাশির শক্তিশালী আলোড়নে “অরফিশ” যখন উপরে উঠে আসে তখন তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। উপর সমুদ্রে তাদের খাদ্য মেরুদন্ডহীন ও কাকড়া জাতীয় প্রাণী না পেয়ে অনেক সময় এরা খাদ্যাভাবে মারা পরে। তবে খাদ্যাভাবের চেয়ে বিপুল জলরাশির আলোড়ন তাদের জন্য ক্ষতিকর বেশী।
বেনফিল্ড আরো লিখেছেন- নতুন করে ফিলিপাইনে দেখা যাবার পর প্রাণীটি সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে আর তা পৌরাণিক কাহিনীর দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে ঐতিহাসিকভাবে জাপানে একে দেখা হয় “সাগর স্রষ্টার প্রাসাদের বার্তাবাহক” এবং ভূ-কম্পনের ঘোষক হিসেবে। পৌরাণিক কাহিনীতে আছে ভূ-কম্পনের আগে “অরফিস”কে দেখা যাবে অগভীর পানিতে। বিশেষকরে ফিলিপিনের উপকূলে বিগত ভূমিকম্পের আগে প্রায় ৬টি “অরফিস”কে সাগর উপকূলের বিভিন্ন স্থানে দেখা গিয়েছিল। ওই ভূমিকম্পে ফিলিপিনের সুরি গাঁও শহরের ৮জন মারা পড়েন এবং ২শতের মত জখম হয়েছিলেন। এতে করে পৌরাণিক কাহিনীকে আরো মজবুত করে মানুষের সামনে নিয়ে এসেছে।
এই মূহুর্তে এটি বলা মুষ্কিল যে সাগরজলের গভীরে এমন কি অবস্থার সৃষ্টি হয় যাহা, ওই “অরফিস”কে দ্বিতীয় ভূ-তাত্বিক যুগীয় পানির গভীর অঞ্চলের স্তর ত্যাগ করতে বাধ্য করে। তবে বেনফিল্ডের মতে যদি সাগরের তলদেশে ভূমিকম্পের আগে এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে, তা’হলে শুধু “অরফিস” কেনো? আরো অনেক প্রজাতির জলজ প্রাণীকে ভেসে উঠতে দেখা যাবার কথা।
এই “অরফিস” দুনিয়ায় প্রথম মানুষের দৃষ্টিতে আসে ১৭৭২ সালে। এ মাছটি সাধারণতঃ ৩০ফুটের মত দীর্ঘ হয়। (ন্যাশনেল জিওগ্রাফি থেকে অনুদিত)