লন্ডন: শনিবার, ১৮ই চৈত্র ১৪২৩।। জীবনে কি এমন ঘটেছিল যার জন্য ডাঙ্গা গ্রামের লোকমান হোসেন(৪৫) ও তার স্ত্রী সিরিনা আক্তার(৩০) কোলের দুগ্ধপুষ্য শিশু নিয়ে ৫জন সন্তানসহ তারা ৭জন আত্মহননের পথ বেঁচে নিলেন। আধ ঘন্টা ফোনে আলাপ করেও বাবাকে সে বিষয়ে কিছু কি বলে যাননি? মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানায় নিহত ৭ জনের পরিচয় বিষয়ে ইত্তেফাক একটি অনুসন্ধানী সংবাদ দিয়েছে। ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে মৌলভীবাজারের ফতেহপুর(নাসিরপুর) জঙ্গি আস্তানায় আত্মহননকারী ৮জনের মধ্যে ৭জনের বাড়ী দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গা গ্রামে। আত্মহননকারীরা ওই ডাঙ্গা গ্রামের লোকমান আলী ও তার স্ত্রীসহ ৫ সন্তান বলে ধারণা করছেন তার শ্বশুর একই উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক।
গত ৩০ মার্চ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ফতেহপুর(নাসিরপুর) গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আত্মহননকারী সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আত্মহননকারীরা নিজেদের নিঃশেষ করে দেয়ার আগে দিনাজপুরে ফোনে যোগাযোগ করে। অনুসন্ধানের বিষয়ে ইত্তেফাক লিখেছে- বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের লোকমান আলীর শ্বশুর আবু বকর সিদ্দিকের বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যদের বিমর্ষ অবস্থায় দেখা যায়।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘২৯ মার্চ রাত ১টার দিকে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। কল রিসিভ করার পর আমার বড় নাতনি মোছাম্মৎ আমেনা খাতুনের কণ্ঠ ভেসে আসে, যাকে লোকমান আলী ২ মাস আগে বগুড়ায় বিয়ে দিয়েছেন। ফোনে তার নাতনি দু-একটি কথা বলার পর তার মা মোছাম্মৎ সিরিনা আক্তারের হাতে দেয়। সিরিনা আক্তার আমার সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলে। সিরিনা আক্তার জানিয়ে দেয়- আপনারা আমাদের ক্ষমা করবেন। আমাদের সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হবে না। তখন আমি বলি, কয়েকদিন আগেই তোমার নামে আমি ১ বিঘা জমি দিয়েছি। তুমি কোথায় আছো, একটু ঠিকানা বল- আমি সেখান থেকেই নিয়ে আসবো। মেয়ে জানিয়েছিল আমাদের যাওয়ার কোন উপায় নেই। এ সময় আমি বুঝতে পেরেছিলাম পাশেই জামাই লোকমান আলী আছে। পরে বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদে বুঝতে পারি আত্মহননকারী ৭ জনই আমার মেয়ে-জামাই ও নাতনিরা।’
এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইসরাফিল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আবু বকর সিদ্দিকের ধারণা আত্মহনন কারীরা হলো, লোকমান হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মোছা. সিরিনা আক্তার (৩০), বড় মেয়ে আমেনা খাতুন (২১), সুমাইয়া (১২), মরিয়ম (১০), ফাতেমা (৭), খাতিজা (৭ মাস)।
মেয়ের সাথে আধঘন্টা ফোনালাপে মেয়ে কেনো আত্মহননের পথ বেছে নিলো এ বিষয়ে ইত্তেফাক কিছু উল্লেখ করেনি। (ইত্তেফাক অনুসরণে)