লন্ডন: শেখ হাসিনা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে পা রাখার আগেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে পর্দার পিছনের আলোচনা শুরু হয়ে গেল। রাজধানীতে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয়কুমার দে। আজ প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন মিশ্রর সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক হয়েছে তাঁর। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব ভাস্কর খুলবেও। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে রাজ্যের আপত্তির জায়গাগুলি শুনেছেন নৃপেন। সূত্রের খবর, মলয়বাবুকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সমস্যার ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে।
তিস্তা নিয়ে মমতার বক্তব্য— সিকিমে অসংখ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও ৮টি বড় বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। সিকিম এ ভাবে অপরিকল্পিত ভাবে যথেচ্ছ বাঁধ দেওয়ায়, শুখা মরসুমে তিস্তায় জল তাকছে না। আবার বর্ষায় বাঁধ বাঁচাতে সিকিম জল ছাড়লে ভেসে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিঙের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী, সুষমা, রাজনাথকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, ঢাকার সেই সফরের পরে এক বছরের বেশি কেটে গেলেও সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এক সঙ্গে বসিয়ে তিস্তা নিয়ে কোনও বৈঠক করেনি কেন্দ্র। সিকিমকেও এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, শুখা মরসুমে তিস্তায় জল সঙ্কটের জন্য উত্তরবঙ্গে জলের সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য ছোট ছোট জলাধার গড়ার কথা বলা হয়েছিল। মমতা নিযুক্ত নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের কমিটিই এই প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এখনও কেন্দ্র এ নিয়ে উদ্যোগী হয়নি। উত্তরবঙ্গে বিকল্প জল প্রকল্পের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজও বরাদ্দ হয়নি।
প্রাধনমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফ থেকে বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে সমাধানের আশ্বাস আজ দিয়েছেন ভাস্কর খুলবে। আগামিকাল দিল্লি পৌঁছবেন মমতা। পরশু দুপুরে হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত থাকবেন তিনি। সেখানে শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর কথা হবে। পরের দিন রাষ্ট্রপতির নৈশভোজেও মমতা এবং মোদী উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া শনিবার হায়দরাবাদ হাউসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনা-কলকাতা বাস এবং খুলনা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসের সূচনাতে মোদী এবং হাসিনার সঙ্গে তিনিও উপস্থিত থাকবেন।
সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট— শেখ হাসিনার চলতি সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও অদূর ভবিষ্যতে যাতে তা করা যায়, সে জন্য কিছুটা নমনীয় হতে শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। অন্য দিকে কেন্দ্রও তাঁকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজে অন্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিমন্ত্রণও করা হয়নি।
তিস্তা নিয়ে মমতা শিবিরের বক্তব্য— বাংলাদেশের মানুষ জল পাক, এটা কাম্য। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা করে যদি তা সম্ভব হয়, তবে আপত্তির কারণ নেই। অন্য দিকে ২০১৮-র শেষে হাসিনার নির্বাচন। তার আগে তিস্তা চুক্তির সাফল্য হাতে নিয়ে ভোটে যেতে চান তিনি। কারণ তিস্তার বাড়তি জল পেলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিটাই বদলে যাবে। পশ্চিমবঙ্গেও পরের বিধানসভা নির্বাচনের ঢের দেরি। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, চলতি বছর অথবা আগামী বছরের গোড়ায় এই চুক্তি সই করতে মমতারও অসুবিধা থাকার কথা নয়। তবে রাজ্যের স্বার্থরক্ষার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে কেন্দ্রকে। -আনন্দবাজার থেকে