বনানীর একটি হোটেলে নিয়ে ধর্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের খাস কামরায় তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই ছাত্রীর পোশাক-আশাক রাসায়নিক পরীক্ষারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া দুই ছাত্রী পুলিশ এবং গণমাধ্যমকে ওইদিনের ঘটনারে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছেন, শাফাত পিস্তল তাক করেছিলো প্রথম ভিকটিমের দিকে। হিস হিস করে বলে, “কিরে চিনস এইটা?” সেই সাথে চলছিলো ভয়ংকর রকমের গালি। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। নাঈম আশরাফ লাফিয়ে লাফিয়ে কিল ঘুষি চড় দিচ্ছিলো । তাদের একটাই কথা, ওদের সাথে “সেক্স্র” করতে হবে। আমরা ছিলাম তিনজন মেয়ে আর একজন ছেলে। তারা এসেছিলো শাফাতের জন্মদিনের পার্টিতে। যে ছেলেটি জন্মদিনের পার্টিতে এসেছিলো সেই ছেলেটি অনেকবার কাকুতি মিনতি করেছে ছেড়ে দিতে। নাঈমের পা ধরে রেখেছে। চিত্কার করে কেঁদেছে। ধর্ষকরা ছেড়ে দেয়নি বরং ছেলেটিকে নিয়ে মজা করেছে। পা দিয়ে লাথি দিয়েছে, চড় দিয়েছে।
আমরা ছাড়া অন্য যে মেয়েটি ছিলো, ধর্ষকরা সেই মেয়েটিকে চেঁচিয়ে বলছিলো জামা কাপড় খুলতে। তারা তার অনাবৃত শরীরের নাচ দেখবে। নাঈম বলে, “ নাচ না, গ্যাং রেইপ হবে আজ।”
আমরা শাফাত আর নাঈমের পায়ে ধরে কাঁদতে থাকি। বলি ভাইয়া প্লিজ এই মেয়েটাকে ছেড়ে দেন। ধর্ষক নাঈম বলে উঠে, “তাহলে তুই আয়”। এই বলে মেয়েটিকে ৭০২ নাম্বার রূমে গিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। এদিকে শাফাত টেনে নেয় আরেক জনকে। সারা রাত ধরে চলে নির্যাতন। এক পর্যায়ে শাফাতের দুই পা ধরে বলি “ভাইয়া প্লিজ মাফ চাই আপনাদের কাছে…প্লিজ” শাফাত গোংরাতে গোংরাতে পশুর মত চিল্লাতে থাকে। নানান ভাষায় গালিগালাজ করে বলে বলছিলে না, আসবি না!!! দেখ কি করেছি তোদের” শাফাত এরই আগে বলে রাখে তার ড্রাইভার বিল্লালকে। বিল্লাল ঘুরে ঘুরে দুইটি রূমে ভিডিও করতে থাকে। রেইনট্রি’র দুইজন কর্মকর্তা, বেয়ারা এসে খোঁজ নিয়ে যায় সব ঠিকমত চলছে কিনা। বাইরে দাঁড়ানো শাফাতের বডি গার্ড আবুল কালাম আজাদ। সে বন্দুক হাতে দরজার বাইরে পাহাড়া দিতে থাকে।
শাফাত চিল্লাতেই থাকে, “আমার বাপ কি …ফালায়? সোনা বেচে…সোনা। এই দেশের এয়ারপোর্টের সব সোনা কই যায়? কইত্থেইকা আসে? সব আমার বাপের আন্ডারে। তোগো মতো এমন দুই একটারে কাইটা ভাসায়া দিলে কেউ টের পাইবো না”
তারা জানায়, ধর্ষন শেষ হয়ে ক্লান্ত ধর্ষক আমাদের সাথে আশা ছেলেটিকে ইচ্ছেমত লাথি দেয়। বলে, “যা তুইও ওই ঘরে গিয়ে …আয়”। ছেলেটি অপমানে আর কষ্টে ঘরের একটি কোনে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
এই ঘটনার পর কত বার মনে হয়েছে মরে যাই। কত বার ভেবেছি সব কিছু ছেড়ে পালাই। কিন্তু পারিনি। “এর মধ্যে আমাদের সে দিনের ভিডিও ওরা ছেড়ে দিয়েছে বলে আমাদের ফোন করে জানায়”, বলে, “তোরা হইলি এখন আমাদের কেনা…। যখন ডাকমু আসবি”
একটা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেই ধর্ষকদের সঙ্গে সমোঝোতা করবো। সেই কথা মত ধর্ষক নাঈম আর শাফাতের দুই বড় ভাইকে ধরি। দুই বড় ভাই বোঝায় ধর্ষকদের। ধর্ষক নাঈম আর শাফাত দাঁত বের করে হাসে। শাফাত বলে, “তাইলে বেইবী আমাদের বিয়া করবা?” এই বলে হাসতে থাকে সেই বড় ভাইদের সামনেই। কোনো সমঝোতা-ই হয় না আর। একপর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেই পুলিশের কাছে যাব। যা থাকে কপালে। সব বলবো। এইভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
পুলিশে জানাবার আগে আমরা জানতে পারি শাফাতের ওয়াইফ আছে। সিদ্ধান্ত নেই তাঁকে জানাবো। শাফাতের প্রথম স্ত্রী পিয়াসকে খুঁজে বের করে জানতে পারি গত ৮ মার্চ তার সঙ্গে শাফাতের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
পিয়াসাকে অনুনয় বিনয় করে বলি, আপু প্লিজ আমাদের সঙ্গে একটু থানায় চলেন। পিয়াসা আমাদের সতর্ক করে দেন যে এই ছেলেদের যতটা খারাপ সে দেখেছে তার থেকেও দ্বিগুণ খারাপ তাদের বাবা। পিয়াসা শুধু প্রথম দিন আমাদের সঙ্গে থানায় যায়।
এরপর গুণে গুণে তিন দিন থানার ওসি ফরমান আলী আর তদন্ত কর্মকর্তা মতিন আমাদের নানা কথা বলে ঘুরায়। “এই সব কইরা কি হইবো, বাসায় যাওগা, জানাজানি হইলে বিয়া হইবো না, এরা প্রভাবশালী, এই বয়সে বিপদে পড়লে কিন্তু আর উঠতে পারবা না…এই সব বলতে থাকে ওসি ফরমান।” একটা পর্যায়ে নাছোড়বান্দার মতো থানায় পড়ে থাকি। থানা মামলা নেয়। ফরমান আর তদন্ত কর্মকর্তা মতিন যথাসাধ্য চেষ্টা করে মামলাটা শেষ করে দিতে। ইত্তেফাকের খবর।