হাওরে ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার ফলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে |
নিষিদ্ধ থাকলেও প্রতি বছরই শীত ঘুরে আসলে এখানকার হাওরগুলোতে বিভিন্ন পদ্বতিতে নিরীহ পাখী শিকার পুরোপুরি নিয়মে পরিণত হয়েছে। মৌলভীবাজারের হাওরগুলোতে প্রকাশ্যে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে, ক্ষেত্রবিশেষে বিষ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার শুরু হয়েছে। শিকার বন্ধে বন বিভাগ ও প্রশাসনের তৎপরতা দৃশ্যমান নয় বলে অভিযোগ উঠছে৷ এ কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন৷
সরাসরি সদর উপজেলায় অবস্থিত কাউয়া দীঘি হাওরে গিযে দেখাযায়, হাওরের গিরিম, মাজের বান, কুবজারি বন, কইলতা, মিটিপুর সহ হাওরের বিভিন্ন এলাকায় শিকারিরা বাঁশের খুটি ব্যবহার করে পাখি শিকারের জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে প্রকাশ্যে অতিথি পাখি শিকার করছে। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, শিকারিরা দিনের বেলা জাল দিযে ফাঁদ পেতে রাখেন ও রাতে খাবার সন্ধ্যানে আসা অতিথি পাখিরা এই ফাঁদে আটকা পরেন। পরে সকাল বেলা শিকারিরা আটকা পরা পাখিগুলোকে উদ্ধার করে স্থানীয় পাইকারের কাছে বিক্রয় করে। যার ফলে দিনে দিনে কমছে হাওরগুলোতে অতিথি পাখির সংখ্যা। শুধু জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে নয় বিভিন্ন জায়গায় বিষ দিয়েও পাখি শিকার করছে শিকারিরা। আরো জানাযায়, হাওর কাউয়াদিঘি ছাড়াও জেলায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, হাইল-হাওর, বাইক্কা বিলে আসা অতিথি পাখিগুলো কোথাও জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে ধরা হয় অনেক জায়গায় গোপনে বিষ দিয়ে শিকারিরা পাখি ধরছে। সাইবেরিয়া, চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে অতিথি পাখি শীতের শুরুতে ছুটে আসেন নিরাপদ আশ্রয়ে ও খাবার সন্ধানে হাওর গুলোতে। এসব অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে হাওর এলাকার আশপাশের গ্রাম ও বিলগুলো। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পাখি খাবারের সন্ধানে হাওরের বিলগুলোতে নির্বিঘ্নে খাবার সংগ্রহে নামতে পারছে না। পাখি জলে নামার আগেই শিকারিরা জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। দেশের যে কয়টি স্থানে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে তার মধ্যে হাকালুকি, হাওর কাউয়া দীঘী, বাইক্কা বিল অন্যতম। অতিথি পাখির সর্ববৃহৎ এই সমস্ত সমাগমস্থলে প্রতি বছর পুরো শীত মৌসুম হাওরে বিচরণ করে পাখিরা আবার গরমের শুরুতেই তারা ফিরে যায় স্ব-স্ব আবাসস্থলে। হাওর পারের একাধিক জনের সাথে কথা হলে তারা জানান, শিকারীরা দিনের বেলা জাল দিয়ে ফাঁদ পাতান। রাতের বেলা পাখিরা খাবারের সন্ধানে দল বেঁধে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে উড়ে যাওয়ার সময় একেকটি জালে ১০ থেকে ১৫টি পাখি আটকা পড়ে৷ এ ছাড়া বিলের পানিতে কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করা হয় এবং সকালে পাখি বিক্রি করেন। তাদেরকে পাখি শিকার না করার কথা বললে তারা উল্টো আমাদেরকে ধমক দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এক হালি পাখি ১ হাজার থেকে ১হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে৷ পাখিদের মধ্যে সরালি, লেনজা, সাদা বক ও কিছু অচেনা পাখি রয়েছে৷ স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, পাখি শিকার বন্ধে বন প্রশাসনিক পদক্ষেপ খুবই জরুরী। পাশাপাশী সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। অবাদে পাখি শিকারের কারণে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে৷ পাখি শিকার বন্ধ করতে বন বিভাগকে আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই৷ তবে যেসব এলাকায় পাখি শিকার হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে সেখানে অভিযান চালানো হবে৷ এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম খুঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। |