‘আমার ছেলেটাকে কাজের ভিসায় সৌদি আরবে পাঠাইছিলাম। চার লাখ সত্তর হাজার টাকায় কোম্পানির ড্রাইভিং ভিসার চুক্তি করেছিলাম। কিন্তু আমার ছেলেকে বিদেশে কাজ না দিয়ে, সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করছে তারা। এখন আমি কি করব। নিজের জমিজমা বিক্রি করে ছেলেকে সৌদি আরব পাঠালাম। কিন্তু আমার এলাকার জসিম উদ্দিন আমার ছেলেটার জীবনটা শেষ করে দিল। আমার ছেলেরে কেউ ফিরৎ আনিয়া দেইন।’ এভাবেই সৌদি আরবে কাজের জন্য পাঠানো ছেলের জন্য আকুতি করে বলছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের চিতলীয়া এলাকার বাসিন্দা ওয়ারিছ খান।
একই এলাকার বাসিন্দা চিতলীয়া বখশীটিলা জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন জসিম উদ্দিনের সঙ্গে চার লাখ সত্তর হাজার টাকার লিখিত চুক্তি করে তার ভাই ফারুক উদ্দিনের কাছে ওয়ারিছ খান তার ছেলে খয়ের আহমেদ খানকে সৌদি আরবে পাঠান। তবে সৌদিতে গিয়ে কাজ নয়, বরং নির্যাতন করে তার ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে। তিনদিন ধরে তার ছেলের মোবাইল বন্ধ, কোন যোগাযোগ নেই। সে কেমন আছে, কি করছে তাও কেউ জানাচ্ছে না বলে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চিতলীয়া বখশীটিলা জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন জসিম উদ্দিনের সাথে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকায় সৌদি আরবের একটি কোম্পানির ড্রাইভিং ভিসার লিখিত চুক্তি করেন ওয়ারিছ খান। চুক্তিমত জসিম উদ্দিনকে প্রথমে আড়াই লাখ টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বাকি ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে আরও ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বাকি ৮০ হাজার টাকা বিদেশে গিয়ে দুই মাসের বেতন পেয়ে পরিশোধের কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ি খয়ের আহমেদ খান বিদেশে পাড়ি দিয়ে জসিম উদ্দিনের ভাই ফারুকের কাছে যায়। সেখানে ফারুক তাকে চুক্তিনামায় উল্লেখিত কাজ না দিয়ে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করা শুরু করেন বলে জানান ভূক্তভোগী বাবা।
অভিযুক্ত জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে এলাকায় পাওয়া যায়নি, তার মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। তার বাড়িতে গেলে জসিমের ছোট ভাই মুহিত বলেন, ‘আমার ভাই তাকে মারধর করেনি। খয়েরকে তার সহযোগী এক সুদানি এক ব্যক্তি মারধর করে আহত করে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।’ চিতলীয়া বখশীটিলা জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘জসিম ঢাকায় একটি বিয়েতে গেছে। ইমাম সাহেব জানালেন সে সোমবার আসবে। আমরাও তার ফোন বন্ধ পাচ্ছি।’
তবে জসিমের বড় ভাই সৌদি প্রবাসী ফারুক উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার এখানে আসার পর খয়েরকে কাজে লাগিয়ে দেই। কিন্তু সে কাজ তার পছন্দ না হওয়ায় আমাকে গালমন্দ করে তার রুমে চলে যায়। সেখানে সে তার সহযোগীদের সাথে ঝগড়া করে আহত হয়। পরে বিষয়টি পাকিস্থানী কফিল সমাধান করে দেন। তাকে আমি কখনো মারধোর করিনি, মারধোরের প্রশ্নই উঠে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়াজ মোর্শেদ রাজু বলেন, বিষয়টি শুনেছি। উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করবো।