1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আমার মুক্তিযুদ্ধ - মুক্তকথা
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

আমার মুক্তিযুদ্ধ

হারুনূর রশীদ॥
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৩২২ পড়া হয়েছে
 হারুনূর রশীদ

সে পঞ্চাশ বছর আগের কাহিনী। আমরা সকলেই তখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েছি। আমি সেসময় মহাবিদ্যালয়ের শেষ পাঠ স্নাতক পাশ করে নিয়েছি। বাকীদের প্রায় সকলেই উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে মহাবিদ্যালয়ে দ্বাদশ-ত্রয়োদশ বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। আমাদের দেশে তখন চলছে ইংরেজদের বানানো কল্পিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ। কিছুসংখ্যকের মতে সেটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধ। সে সময় আমাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাযুদ্ধের ভেতরের মর্মার্থ বুঝতাম না। দু’টোকেই আমরা এককরে দেখতাম।

যাত্রী আমরা ১৩জন। একটি সামরিক ট্রাকে চড়ে রওয়ানা দিয়েছি। গন্তব্য নিজেদের দেশের যাওয়া। একটু খোলাসা করে বলাই ভাল। এই দেশে যাওয়া অর্থাৎ ভারতে যুদ্ধের প্রশিক্ষন শেষে দেশের ভেতরে চোরাগুপ্তা যুদ্ধের জন্য ফিরে যাওয়া। আমরা সকলেই বয়সে বিংশ সংখ্যা পাড় করেছি। গাড়ীতে আমি, ওহাব, মুকিত, রাণু, শহীদ, সুদর্শন, খোকন, রব, সফিক, মতিন ও সাব্বির আহমদ মোমেন।

যতদূর আমার মনে আছে ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল আমি, সিলেটের আওয়ামীলীগ স্বেচ্ছাসেবক নেতা প্রয়াত আখতার আহমদ আমার কাছে থাকা একখানা লক্কড়-ঝক্কড় ধরনের জিপ গাড়ী যোগে ভারতে প্রবেশের নিমিত্তে শ্রীমঙ্গল থেকে গভীর রাতের দিকে ভানুগাছের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। রওয়ানা হওয়ার কিছুক্ষন আগে আমরা দু’জনের সাথে এসে যোগ দেন মাহমুদুর রহমান(তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে আয়কর উকীল)।

আমরা সামরিক প্রশিক্ষন সমাপ্ত করে রাতাছড়া বিশ্রাম তাবুতে দেশের ভেতরে ঢুকার দিন গুণছিলাম। মাসটা তখন আগষ্ট। একদিন আমাদের শেষ বিদায় জানাতে আসলেন আমাদের নেতা আসম আব্দুর রব ও আব্দুর রাজ্জাক। তাদের সাথে ছিলেন সিলেটের আক্তার আহমদ। বেশ কিছুক্ষন আমাদের সাথে সময় কাটালেন রাজনৈতিক কিছু গল্প-ইতিহাসের মধ্য দিয়ে। আমাদের বিশেষ করে আমার খুব ভালই লাগলো। গল্পের শেষ দিকে আমাদের বুঝালেন দেশের ভেতরের বিভিষিকাময় আসল অবস্থা। দু’জনই বললেন দেশের ভেতরে আমাদের ৩পক্ষ শত্রু। প্রথম পক্ষ পাক-সামরিক তস্করেরা। দ্বিতীয় পক্ষ পাকিদের সহযোগী রাজাকার- আলবদরেরা। তৃতীয় পক্ষ চরম বাম দলের সদস্য সমর্থকরা যারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে স্বীকার করে না বরং ধনিক শ্রেণী ও আন্তর্জাতিক ষঢ়যন্ত্রের যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করে আমাদের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে এরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে যা প্রকারান্তরে পাকি বাহিনীকেই সহায়তা করছে।

moulovibazar

রব ভাই বললেন, এই তিন পক্ষ শত্রুকে মোকাবেলা করে বিজয়ী হওয়া বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু আমাদের কোন উপায় নেই। এই কঠিন কাজটিই আমাদের করতে হবে। এই তিন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবার কাজ করতে হলে আমাদের বিভিন্ন কৌশল গ্রহন করতে হবে। প্রথমতঃ নিজেদের নিরাপত্তা সবার আগে। নিজে বাঁচলে তো লড়াই। মরে গেলে আর লড়াই করবে কে। বাঁচতে হবে আগে। এই বাঁচার কৌশল হিসেবে আমাদের শিখিয়ে দিলেন পরিচয় পত্র সংগ্রহ করতে। ঘনিষ্ট মুসলিম লীগ আত্মীয়-স্বজন দ্বারা কিংবা যে, যেভাবে পারেন পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে নেয়া। তখন পাকি সামরিক জান্তা পরিচয় পত্র দেয়ার নিয়ম চালু করেছে। পরিচয় পত্র সংগ্রহ করতে পারলে অবাধে চলাফেরা করা যাবে। এতে আমাদের যোগাযোগ এবং বিভিন্ন চোরাগুপ্তা হামলা পরিচালনা করতে সহজ হবে। শত্রু মারা পড়বে। অতএব যে যেভাবে পারেন আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে চেষ্টা করা যাতে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা যায়। তারা দু’জনই কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে আমাদের বিদায় জানালেন। বললেন- এমন তো হতে পারে তোমাদের অনেকের সাথেই আমাদের কারো আর এ জীবনে দেখা হবে না। যুদ্ধতো যুদ্ধই। যুদ্ধে জিতলেও মরতে হয়, হারলেও মরতে হয়। কিছু লোকের আত্মবলিদানের ভেতর দিয়েই তো যুদ্ধে বিজয় আসে। তোমরা খুবই সাবধানে থেকো। সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ থাকবে, নির্দেশনা পাবে। লোক থাকবে, তোমাদের আশ্রয় ঠিক করে দেয়ার কাজে যেসব লোক থাকবে তাদের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করা হবে। যোগাযোগ রক্ষার জন্য আমাদের ‘সাইপার’ থাকবে।  আমরা ‘সাইফার’এর মাধ্যমে তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবো। অস্ত্র-গোলাবারুদ কোন নিরাপদ স্থানে পলিথিন দিয়ে মোড়িয়ে রাখবে যাতে সামান্য কিছুতেই নষ্ট না হয়। আরো বললেন, আমাদের ধারণা যুদ্ধ লম্বা হয়ে যেতে পারে। অতএব সাবধান, মনে রাখবে- বেঁচে থাকাটাই প্রধান। বাঁচার ব্যবস্থা করে তারপর লড়াই যুদ্ধ যা যা প্রয়োজন তাই আমরা করবো।

ওখানেই তারা ঠিক করে দিলেন আমাদের এগারো জনের দলপতি হবে আব্দুল মুকিত। সহকারী দলপতি আমি নিজে। এবং সাইপারের কাজ করবেন দেওয়ান আব্দুল ওহাব চৌধুরী।

তারিখটা ছিল ১৪ আগষ্ট। বার আজ আর মনে নেই। খুব মনে আছে দিনটি ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ এ তারিখটাকেই ঠিক করলেন চোরাগুপ্তা হামলা পরিচালনার জন্য আমাদের দেশের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ার উপযুক্ত তারিখ হিসেবে। তাদের গোয়েন্দা খবর ও সাধারণ জ্ঞান থেকে তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে এ দিন যেহেতু পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস অতএব সামরিক লোকজন কিছুটা ব্যস্ত থাকবে উৎসব উদযাপন নিয়ে। আর রাতের সুরার উৎসবইতো আসল উৎসব। সুতরাং এ সুযোগে আমাদের দেশের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হবে মামুলি কিছু অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে। রাতের আঁধারে আমাদের নিয়ে আসা হলো ত্রিপুরার প্রান্তিক সীমান্ত এলাকা আসারামবাড়ী সীমান্তে। একজন খবরিয়া গোয়েন্দা পাঠানো হলো আমাদের যাবার রাস্তা শত্রুমুক্ত আছে কি-না দেখে আসার জন্য।

আমরা ১১জন রাতের আঁধারে একটি বিশাল গাছের নিচে বসে আছি সময়ের অপেক্ষায়। কিছুটা পরে আরো দু‘জন  সৈয়দ নাছির উদ্দীন আর মোহাম্মদ আসকির মিয়া আমাদের সাথে যোগ দিলেন।(চলবে)

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT