মুক্তকথা সংবাদ।। স্বামী অসুস্থ, স্ত্রী তাই হুইলচেয়ারে করে স্বামীকে প্রয়োজনীয় চলাচলে সহায়তা করেন। নিউজিল্যান্ডের পৈশাচিক ওই হত্যাযজ্ঞের দিন শুক্রবার স্বামীকে যথারীতি মসজিদে পুরুষদের জন্য নির্ধারিত নামাজের স্থানে রেখে নিজে যান মসজিদে থাকা মহিলাদের নামাজের কক্ষে। হঠাৎ গুলাগুলির শব্দে সবাই যখন প্রান বাঁচাতে ছুটাছুটি শুরু করলো তখন বাঙ্গালী হুসনে আরা পারভীন প্রানভয়ে পালিয়ে গেলেন না। অচল হাটতে অক্ষম স্বামীর খুঁজে ছুটে গেলেন বন্দুকধারীর অস্ত্রের নলের মুখে। স্বামীকে বাঁচাতে এসে নিজেই নিহত হলেন নিষ্ঠুর বন্দুকধারীর গুলিতে। এক পৈশাচিক উন্মত্ত্বতায় ঠাণ্ডা মাথায় সামনা সামনি গুলি করে হত্যা করে যাচ্ছিল ওই নরপশু সন্ত্রাসী। ততক্ষণে স্বামীকে অন্যরা বাহিরে বের করে নিয়ে আসে। মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে রইলেন নিথর দেহে সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটা গ্রামের নুর উদ্দিনের কলিজার ধন হোসনে আরা। আর কোন দিন মা-বাবার কোলে ফিরে যাবেন না।
নিহত হুসনে আরা পারভীনের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সাথে সাথেই। ছবিখানা দেখে বলতেই হয় এতো হুসনেআরা নয় এ যে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা মানবতা। কি এর প্রতিকার! যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগাপ্লুত অনেকেই মন্তব্য করছেন এই বলে যে, স্বামীর প্রতি একজন নারীর অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শন এমনি হয়। স্বামীর জন্য স্ত্রী’র এই আত্মাহুতি সভ্য মানুষের সভ্যতার পাতায় অমর উজ্জ্বল হয়ে যুগ যুগ কালের পর কাল ধ্বনি তোলে যাক- হিংসার মাধ্যমে সত্য সুন্দর শান্তি আসে না। হিংসা নয়, একমাত্র ভালবাসাই মানুষের সভ্যতাকে আলো আর শান্তির পথ দেখাতে পারে।
উল্লেখ্য নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে শুক্রবার, ১৫ই মার্চ সন্ত্রাসী হামলায় যে ৫০ জন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ বাংলাদেশির একজন এই হুসনে আরা পারভীন। সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটা গ্রামের নুর উদ্দিনের মেয়ে তিনি। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট হুসনে আরার স্বামী ফরিদের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার ১নং মীরের চর গ্রামে। ১৯৯২ সালে ফরিদ আহমদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হুসনে আরা। এরপর ১৯৯৪ সালে স্বামীর হাত ধরে পাড়ি জমান ‘স্বপ্নে’র দেশ নিউজিল্যান্ডে। তাদের সংসারে শিপা আহমেদ নামে সতেরো বছরের এক মেয়ে রয়েছেন। সূত্র:দেশরিভিউ.কম