শ. ই. সরকার জবলু, মৌলভীবাজার।। মৌলভীবাজারে গৃহকর্তার বিরুদ্ধে ৫/৬ বছর যাবৎ ধর্ষণের অভিযোগ কিশোরী গৃহকর্মীর। ফেসবুক সূত্রে জানাজানি হওয়া ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলাসদরের ৬নং একাটুনা ইউনিয়নস্থিত খোঁজারগাও গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে। এ ঘটনায় ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার ধর্ষক আব্দুর রহমান এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকারী কিশোরীর মা, খালা, নানী, তোফায়েল মেম্বার, জিলু মিয়া ও সজ্জাদ মিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে এইচআরআরএস (হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি), মৌলভীবাজার জেলা শাখা।
সরেজমিন মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার দক্ষিনভাগ ইউনিয়নস্থিত সুনামপুর গ্রামে ধর্ষিতার সৌদিআরব প্রবাসী চাচার বাড়ীতে কথা হয় ধর্ষিতা ও তার চাচীর সাথে। ধর্ষিতার চাচী জানান, মেয়ের মা শিপি বেগম হঠাৎকরে রাত ৮টার দিকে মেয়েকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসে। আমি মেয়ের মাকে জিজ্ঞেস করি, মেয়ের কি হয়েছে? সে বলে, মেয়ে একটু বমি করেছে। ওষুধ খাইয়েছি ঠিক হয়ে যাবে। কিছুদিন পর এসে নিয়ে যাব। পরদিন সকালে মেয়ে জানায়, তার গৃহকর্তা আব্দুর রহমান ৫/৬ বছর যাবৎ তার সাথে খারাপ কাজ করে আসছে। বিষয়টি আমি আমার সোদিআরব প্রবাসী স্বামীকে জানালে তিনি ৬নং একাটুনা ইউনিয়নের তোফায়েল মেম্বারের সাথে কথা বলেন। তোফায়েল মেম্বার এলাকার জিলু মিয়া ও সজ্জাদ মিয়াকে নিয়ে বিষয়টি দেখে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু, কিছুদিন পর তোফায়েল মেম্বার বলেন, কিসের বিচার? মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়নি। এখন লোকমুখে শুনছি তোফায়েল মেম্বার, জিলু মিয়া ও সজ্জাদ মিয়া মিলে মোটা অংকের টাকা খেয়ে মেয়েটিকে ধর্ষনের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
ধর্ষিতা কিশোরী ছায়া বেগম(ছদ্মনাম) জানায়, আমি যে বাড়িতে কাজ করতাম সেই বাড়ির মালিক আব্দুর রহমান ৫/৬ বছর যাবৎ মাঝে মাঝে আমার সাথে খারাপ কাজ করেছে। এসব যে খারাপ কাজ তা আমি বুঝতাম না। যখন বুঝতে পারলাম, তখন আমি আমার মা শিপি বেগম, আমার খালা পারভিন বেগম ও আমার নানী মনোয়ারা বেগমকে বিষয়টি জানাই। তারা বলেন এসব কিছুনা। একথা কাউকে বলিসনা, বিষয়টি আমরা দেখছি। কিছুদিন পর জানতে পারলাম, আমার মা, খালা ও নানী আমাকে দিয়ে আব্দুর রহমানের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। সেজন্য তারা এর কোন প্রতিবাদ করছেন না। আব্দুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম, পুত্র মাওলানা ওলিউর রহমান ওয়ালী ও কন্যা বিষয়টি জানতো। প্রায় দু’মাস আগেও আব্দুর রহমান আমার সাথে খারাপ কাজ করে। তখনও আমি আমার মা, খালা ও নানীকে জানাই। কিন্তু, তারা কোন প্রতিবাদ করেননি। এর ২৫/৩০ দিনের মধ্যে আমার বার বার বমি হয়। তখন আমার মা, খালা, নানী ও আব্দুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম আমাকে কিছু ঔষধ খাওয়ান। ঔষধ খাওয়ার পর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমার পড়নের কাপড় ভিজা। এসময় আব্দুর রহমান ও তার স্ত্রী নাজমা বেগমের মধ্যে খুব ঝগড়া হয়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এলাকার কয়েকজন জানান, এএময় আব্দুর রহমানের পুত্র মাওলানা ওলিউর রহমান ওয়ালী, তোফায়েল মেম্বার, জিলু মিয়া ও সজ্জাদ মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে ওলিউর রহমান ওয়ালী তার পিতা আব্দুর রহমানের উপর খুব ক্ষিপ্ত হন। তোফায়েল মেম্বার ধর্ষিতা ছায়া বেগমকে(ছদ্মনাম) তার পিত্রালয়ে নিয়ে যেতে বললে তার মা, খালা ও নানী এতে রাজী না হলে তোফায়েল মেম্বার, জিলু মিয়া ও সজ্জাদ মিয়াসহ আব্দুর রহমানের পরিবারবর্গ তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করেন। বিদায়কালে বলে দেয়া হয়, এ ব্যাপারে মামলা করলে অবস্থা খারাপ হবে।
এ বিষয়ে তোফায়েল মেম্বার বলেন, মেয়েটা ছোটবেলা থেকে আব্দুর রহমানের বাড়িতে কাজ করতো। ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। মেয়ের সৌদিআরব প্রবাসী চাচা আমাকে ফোনে বলেছেন বিচারের কোন প্রয়োজন নেই। মেয়েকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে দিলে ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুর রহমান উত্তেজিত হয়ে বলেন, যারা এসব বলেছে তাদের কাছ থেকে জেনে নিন।