ছিলাম কেমন, আছি কেমন। কেনো এমন হয়! কোনখান থেকে কি দিয়ে শুরু করবো আসলেই ভেবে পাচ্ছি না। একটি প্রশ্ন বার বারই মনে উঁকিঝুঁকি দেয়। এ কোন সমাজে আমরা বসবান করছি। আজকের এ শহুরে সমাজের(মৌলবীবাজার) অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী অন্য ভাষায় যুবক-যুবতীগন দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে ভীষণভাবে উন্মুখ। জানিনা সারা বাংলাদেশই এমন কি-না! মা-বাবা সকলেই চান তাদের প্রানপ্রিয় সন্তানকে যে কোন বয়সেই বিদেশ পাঠিয়ে দিতে। মেয়েকে যেকোন একজন বিদেশ যাত্রীর স্ত্রী বানিয়ে পাঠাচ্ছেন। মিথ্যা আর প্রবঞ্চক হয়ে ভিন্নলোককে বাপ ডেকে বিদেশগমন আমাদের অনেক আদি কাহিনী। মা-বাবারা সদা জাগ্রত আছেন সে রকম কোন সুযোগের আশা-ভরসায়। এমন এক প্রবঞ্চনামূলক সমাজ জীবনে আমরা বাস করছি আর আমাদের ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে উঠছে। যেখানে নেই কোন নীতি-নৈতিকতা, ভক্তি-শ্রদ্ধা, নেই সত্যিকারের কোন প্রেম-ভালবাসা ও তার মান-অভিমান। আছে শুধু ভাওতাবাজী আর যেকোন প্রকারে অন্যকে প্রবঞ্চনা। সে ধর্মের নামেই হোক কিংবা ভালবাসার নামেই হোক। নিজের কাজটা আদায় হলেই হলো। সে কাজ ন্যায় কি অন্যায় তা’দেখার কোন প্রয়োজনই আমাদের নেই। এমন সমাজে ধর্ম শুধুই হাসির খোরাক জোগায়। এমন সমাজে মসজিদ-মন্দির কিংবা গীর্জাকে আমার বড় অসহায় মনে হয়।
দেশ স্বাধীন হবার পর আমাদের শহরের পবিত্র গীর্জাঘরসহ পুরো গীর্জা এলাকাকেতো বাজারদরে বিক্রি করে দেয়া হলো। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই শহরের নামীদামী মানুষ ছিলেন। বিক্রেতা কোন অবস্থাতেই গীর্জার দালানঘরসহ এমন জমির মালিক হতে পারেন না। বড়জোর তিনি একজন ‘রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রহরী বা তত্ত্বাবধায়ক’ হতে পারেন। ক্রেতার মধ্যে ছিলেন শহরের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ অনেক গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ যারা এখনও গর্বে-দর্পে গাড়ী হাকিয়ে শহরে বসবাস করছেন। এখানে নাম বলে ব্যক্তি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার মাঝে কোন সাহসিকতার কাজ বলে আমি মনে করিনা। জনৈক ব্যবসায়ী শহুরে সমাজের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ আকড়ে ধরে আছেন যা, তিনি কোনভাবেই ছাড়তেও চান না বলে অনেক সুধিজনেরই অভিযোগ আছে। এ ধরনের আরো কতিপয় নামী-দামী মানুষজন মিলে-ঝোলে গীর্জা এলাকা পানির দরে কিনে নিয়ে শহরে টাকাওয়ালা হয়েছেন। এদের লজ্জ্বা-শরমেরও কোন বালাই নেই।
এখানে লিখতে গিয়ে এতদসংক্রান্ত কিছু বিষয় উল্লেখ না করলে সত্যের অপলাপ হবে। ওই সময়টায় আমি মৌলবীবাজার দেওয়ানী আদালতে আইনের ব্যবসায় একজন উকিল হিসেবে কাজ করছিলাম। একই সাথে ওই সময় আমি দৈনিক ইত্তেফাকেরও মৌলবীবাজার প্রতিনিধি হিসেবে কাজে নিয়োজিত ছিলাম। যে ঘটনার উল্লেখ করতে যাচ্ছি সে ঘটনার দিন সকালের দিকে আমার এক অনুজ সাংবাদিক প্রয়াত সৈয়দ আতহার ওরপে নছর ও আমি মৌলবীবাজারের তৎকালীন প্রেসক্লাব বারান্দায় বসে কিছু সংবাদ সংগ্রহ বিষয়ে আলাপ করছিলাম। হঠাৎই হন্ত-দন্ত হয়ে আমাদের এক ব্যবসায়ী সাংবাদিক বন্ধু এসে হাজির। বিষয় কি? তিনি একটি আধা সরকারী জমির জবরদখল নিতে যাচ্ছেন। আমাদের কাছে তার সবিনয় অনুরোধ আমরা দু’জন যেনো তার ওই জবরদখলের খবরটা পত্রিকায় না দেই। আমাদের পক্ষ থেকে কোন কিছু জানতে চাওয়ার আগেই তিনি নিজে থেকে বলতে লাগলেন যে আমরা দু’জন বাদে বাকী যে দু’তিনজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আছেন তাদের তিনি মোটামুটি তার পক্ষে নিয়ে আসতে পেরেছেন। উনারা, তার দ্বারা সরকারী ভূমি দখলের খবরটি লিখবেন না। শুধু আমাদের দু’জনকে অনেক খুঁজেও সময়মত পান নি তাই আলাপ করতে পারেননি। তার সবিনয় অনুরোধ আমরাও যেনো অন্যান্যদের পদাঙ্ক অনুসরণ করি। আমি সবসময়ই একটু হালকা ধরনের মানসিকতায় চলতে সাচ্ছন্দ বোধ করি। কোন বিষয়েই খুব শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে দ্বিধান্বিত থাকি। আমার এমন মনোভাবের বিষয়ে একটি মাত্র কারণ, প্রথমেই চিন্তায় আসে আমার লিখনী কারো ক্ষতি করছে না-তো(?)।
প্রয়াত ভাই আবু নসর কিন্তু নাছোড় বান্দা। একজন সাংবাদিকের এমন অপকর্মের খবর সে দেবেই। সাংবাদিক বন্ধুটি তখন আমাকেই শেষ ভরসা মনে করে আমাকে অনুনয়-বিনয় করতে লাগলেন ভাই আবু নসরকে বুঝানোর জন্য। সাংবাদিক বন্ধুটি আমাকে বুঝাতে চাইলেন যে তিনি অন্যায় কিছু করছেন না। তিনি জায়গাটি খরিদ করেছেন এখন দখলে যাবেন। আমি তখন তার কাছে জানতে চাইলাম যে, যদি তিনি ন্যায়সংগতভাবে খরিদ করে থাকেনই তা’হলে আমাদের খবর দিতে বারণ করছেন কেনো? (বাকী অংশ পরবর্তীতে)