আব্দুল ওয়াদুদ।। মৌলভীবাজার: শুক্রবার, ২৮শে পৌষ ১৪২৩।। মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। রোগীদের দীপ্ত পদচারণায় এখন মুখরিত প্রাঙ্গন। কিছুকাল আগেও এমন ছিলনা। এখন প্রতিদিন বহিঃবিভাগে শত শত রোগী টিকেটের জন্য লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকেন। হাসপাতালও সেবার অঙ্গিকার নিয়ে তৎপর।
মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত “২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল” মানুষের দুরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দিতে নানা উদ্যোগসহ সেবার মান বৃদ্ধি করেছে। মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষের জন্য সেবার একমাত্র ভরসা ২৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। ২০১২ সালের পয়লা ডিসেম্বর হাসপাতালটির শুভ উদ্বোধণ করেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে এর উন্নয়ণমূলক কার্যক্রম শুরু করেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান। আগের ওই ১০০ শয্যা হাসপাতালের পুরোনো ভবনটি স্বাস্থ্য সেবা দিতে নিজেই হিমশিম খাওয়ায় নানান প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হতো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এর পর আসে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, যা বাস্তবে মানব সেবা দিতে নতুন এক রূপে ফিরে আসে।
বর্তমানে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে আগের চেয়ে বেশী সচেতন হওয়ায় বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য শত শত রোগী সাত সকালে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকেন একটি টিকেটের জন্য। সন্ধ্যায় প্রাইভেট ক্লিনিক অথবা চেম্বারে যেসকল চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে থাকেন তারা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাসপাতালে বিনামূল্যে সেবা দেবার কারণে রোগীরা হাসপাতালমুখী হতে শুরু করেছেন। এতে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে রোগীদের। এছাড়াও মানুষকে সচেতন করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিড়িতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক স্বাস্থ্যকথা লিখে রেখেছেন। পাশাপাশি তীর চিহ্ন দিয়ে ভিতরে চলাচলের সাহায্য করা হয়েছে। জাতীয় দিবস উপলক্ষে রোগীদের আকর্ষণ করার জন্য হাসপাতালের ভেতর ৪০টি স্পিকার দিয়ে শিক্ষামূলক বিভিন্ন সংগীত পরিবেশন করা হয়। হাসাপতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুল্লাহ আল বাকি-এর কাছে আসেন রাজনগর উপজেলার শাহাপুর গ্রামের রাসনা ও রাজনা বেগম। ছেলে-মেয়ের চিকিৎসা নিতে এসে দুই বোন বলেন, স্যারকে চেম্বারে প্রাইভেট দেখাতে হলে রাত অনেক হয়ে যাবে তাই দুপুরে এসে টিকেট কেটে বিনামূল্যে সেবা নিলাম।
২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী জানান, এই হাসপাতালের সেবা বৃদ্ধির জন্য নতুন আরেকটি এ্যাম্বুলেন্স সংযোজন করা হয়েছে। এই নিয়ে যোগ হলো ৩টি এ্যাম্বুলেন্স। তবে একটি ত্রুটিপূর্ণ আছে বলে জানান তিনি। তিনি হাসপাতালের সেবামুলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথা উল্যেখ করে বলেন, নতুন ২৪জন নার্স যোগদান করার পর নার্সের ১২টি পদ খালি আছে। ৫২ পদের মধ্যে ডাক্তার আছেন ৩৭জন। হাসপতালে শুন্য আছে চক্ষু ডাক্তার পদ ও চর্ম ও যৌন বিভাগের কনসালটেন্ট পদ। বর্তমানে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আউট সোর্সিং ও স্থায়ী ২০জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োজিত আছেন। তিনি জানান, জটিল কিডনি রোগীর চাপ বেশী থাকায় এখন থেকে কিডনি রোগীদের প্রতিদিন দুবার চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ পার্থ সারথি দত্ত কাননগো জানান, ২০১২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। হাসপাতালটির সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্ঠা করে যাচ্ছি।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি সৈয়দা সায়রা মহসীন এমপিও আমাদের সহযোগীতা করছেন। হাসপাতালের সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, আউটডোরে প্রতিদিন ৭শ থেকে ৮শ রোগী এসে সেবা নিয়ে যান। রোগীর সেবা বৃদ্ধির জন্য মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের চাহিদামাফিক দাবী তুলে ধরলে তিনি একটি এ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের একটি লিফট আছে পাশাপাশি আরো একটি লিফট ও যাতায়াতের জন্য লেম্প এর প্রয়োজন। সবকিছু মিলিয়ে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল পর্যটন জেলার সকল মানুষের সেবায় সদা তৎপর থাকবে বলে এ প্রতিবেদককে অবহিত করেন হাসাপাতাল সুপার।