বাঙ্গালী মানুষকে নিয়ে একটি কল্পিত ছবি। ছবি-অন্তর্জাল
মুক্তকথা সংবাদকক্ষ॥ বৃটেনে এ পর্যন্ত ৪০ ৬২ ৫০১ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ এর টীকা নিয়ে বৃটেনের প্রায় সকল শ্রেণীর সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরণের অনাস্তার ভাব সৃষ্টি হয়েছে। বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এই টীকাকে মোটেই কোন করোণা মহামারী ঔষধ বলে মনে কোন আস্তাই আনতে পারছে না। তারা মনে করছে এটি ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ একটি ভাওতা। মানুষের ধারণা একটি টীকা তৈরী করতে চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে যে সময়ের প্রয়োজন এ টীকা তৈরীতে আদৌ সে ধরণের কোন সময় লাগেনি। তরিঘড়ি করে টীকা নাম দিয়ে একটা কিছু তৈরী করে বাজারে এনে মূলতঃ ব্যবসা করা হচ্ছে। মানুষের ভাবনা, টীকা যারা তৈরী করেছে তারা নিজেরাই বিভিন্ন সময় বলেছে তাদের টীকা ৯০ভাগ কার্যকর। আবার কেউ বলেছেন তাদের টীকা ৭০ভাগ কার্যকর। মুসলমানদের কিছু মৌলভী-মৌলানা বলেছেন এ টীকা ধর্মমতে হারাম কারণ এতে পশুর চর্বি ব্যবহার করা ছাড়াও আরো এমন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল। এ টীকা ব্যবহার করলে বাঁচার বদলে মানুষের গোটা জীবনের ক্ষতিসাধন হবে। এমন ধরণের ঘটনা যে ঘটেই চলেছে তারই বাস্তব প্রমাণ মিললো গত শুক্রবারের ‘স্কাই নিউজ’ এর এক খবরে।
স্কাইনিউজ’এর ওই খবরে বলা হয়- বৃটেনের ‘জরুরী সময়ের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা দল'(Scientific Advisory Group for Emergencies (SAGE) তাদের গবেষণায় পেয়েছেন যে, করোণা ভাইরাসের টিকা নিতে ‘কালো এবং সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের'(BAME) মানুষজন খুবই কম উৎসাহী। এই উপদেষ্টা দল দেখেছেন যে, কালো ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন এই টীকা নেয়াকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। উপদেষ্টাদের মতে এসব মানুষজনের টীকার উপর ভরসা নেই এবং টিকা অনুমোদনেও রয়েছে আস্তাহীনতা।
ভেকসিন নিতে এই ইতঃস্তত মনোভাব কালো এবং কালো ব্রিটিশদের মাঝে খুবই বেশী। শতকরা প্রায় ৭২% ভাগ বলেছেন তারা টীকা না-ও নিতে পারেন। এর পরেই হলো পাকিস্তানী আর বাংলাদেশীগন। তাদের শতকরা ৪২ভাগেরই ওই একই কথা- না-ও নিতে পারি। সাদা বৃটিশ ও আইরিশ জাতিগত সাদাদের চেয়ে পূর্ব ইউরোপীয়ান সম্প্রদায় সহ অন্যান্য সাদা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের মাঝেও টীকা নেয়ার বিষয়ে যথেষ্ট উচ্চ মাত্রার ইতঃস্তত ভাব বিরাজ করছে। গত শুক্রবার ১৫ জানুয়ারী’২১-এ ‘স্কাই নিউজ’ এ খবর প্রকাশ করেছে।
খবরে বলা হয়েছে, টীকা নিতে এসব মানুষের এ অনীহার কারণ হিসেবে SAGE উপদেষ্টাগন মনে করেন ওই একই- বিশাল ঝুঁকির ধারণা, যারা টীকাদানের দায়ীত্বে আছেন তাদের উপর আস্তাহীনতা, সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের কাছ থেকে অনুমোদনের অভাব এবং টীকার উপর কম ভরসা ফলে মনের দিক থেকে অনুমোদনে অনাস্থা। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা যে ব্যবস্থাপত্র বা পরামর্শ দিয়েছেন তা হলো- টীকার বিষয়ে মানুষের মাঝে যে বদনাম ছড়ানো হয়েছে, টীকাকে সে কলঙ্ককালিমা থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য বহুভাষিক যোগাযোগকারী মানুষজনকে সংগ্রহ করে কাজে লাগাতে হবে।
এ কাজের পরামর্শ হিসেবে SAGE উপদেষ্টাগন আরও বলেছেন যে এভাবে কাজ করতে হলে প্রথমতঃ বিশ্বস্ত ব্যবস্থাপনা থেকে টীকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে এ মহামারী ও টীকা বিষয়ে মানুষের বুঝা ও জানাজানিটা হয় সুন্দর ভাবে।একই সাথে এ কাজের জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে সংগ্রহ করে কাজ করতে হবে।
লীডস মসজিদের সভাপতি ও জাতীয় ইমাম উপদেষ্টা বোর্ডেরও সভাপতি একজন কারী অসিম, যিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে টীকা নেয়ার জন্য উৎসাহিত করার একটি প্রচারণা শুরু করেছেন। এই টীকা নেয়াকে সামনে রেখে দেশে যে অপপ্রচার ও কিংবদন্তীর কাহিনী শুরু হয়েছে সেগুলো যে মিথ্যে ওই ইমাম মুসলমান মানুষদের তাই বুঝানোর কাজ ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি মানুষদের বুঝিয়ে বলছেন চরম ডানপন্থিরা টীকার বিষয়ে যে প্রচারণা চালাচ্ছে তা যে একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট। টীকায় জিলেটিন বা পশুচর্বি রয়েছে এবং টীকাটি হালাল নয় কিংবা টীকা নিলে মানুষের DNA বদলে যাবে বলে যে প্রচারণা চলছে তা যে সঠিক নয় তাও ওই ইমাম মানুষদের বুঝিয়ে বলছেন। দেশে প্রায় একশত মসজিদ শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়াচ্ছে এই কোভিড ও তাকে নিয়ে যে সকল কল্পকাহিনী গড়ে উঠেছে সে সকল মিথ্যা কল্পকাহিনী বিষয়ে মানুষকে সজাগ করে দেয়ার জন্য।
ইমাম অসিম বলেন, এই সব মিথ্যা গুজবের কারণে কেউ তার জীবন হারাতে পারে যা ধর্মের দৃষ্টিকোন থেকে খুবই নিন্দনীয়। কারণ ধর্মে জীবন রক্ষাই হলো আসল কাজ। ইমাম অসিম সকল মুসলমানদের প্রতি বলেছেন যে যখনই সুযোগ পাওয়া যাবে তখনই টীকা নেয়া আমাদের ধর্মীয় নীতিগত বাধ্যবাদকতা। জীবন বাঁচাতে কখনওই টীকা নিতে ভুলবেন না। টীকা নিয়ে সৃষ্ট সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ অবিশ্বাস দূর করতে মুসলমান জ্ঞানীগুণীজন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসার জন্য এবং মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য যে, টীকা ইসলামী বিধানে অনুমোদন যোগ্য। সূত্র: স্কাইনিউজ, অনুবাদ হারুনূর রশীদ
|