বি বি চৌধুরীর মৃত্যুতে নাগরিক শোকসভার উদ্যোগ
লন্ডন: আনসার আহমদ উল্লাহ: লন্ডনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানবতাবাদী নেতা ডা: বি বি চৌধুরীর মৃত্যুতে একটি নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি সদ্য প্রয়াত বেনু ভূষন চৌধুরী স্মরণে আয়োজিত এক শোকসভায় উপস্থিত হয়ে কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এই নাগরিক শোকসভা উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান শরীফ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, যুক্তরাজ্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি এডভোকেট হারুনূর রশীদ, নির্মূল কমিটি নেতা আনসার আহমেদ উল্লা, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, জামাল খান, ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা ওয়ালিউর রহমান, সাবেক কাউন্সিলার হেলাল রহমান, কমিউনিটি নেতা গিয়াস উদ্দিন, আশরাফ আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা জোবায়ের আহমেদ, সিপিবি নেতা মশুদ আহমেদ, সত্যব্রত দাশ স্বপন, আপ্তাব আহমেদ, সাবেক কাউন্সিলার শাহাব উদ্দিন বেলাল, সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ, সৈয়দ আনাস পাশা, শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, এডভোকের আবিদ আলী, নারী নেত্রী নাজনিন সুলতানা শিখা, স্মৃতি আজাদ, রুবি হক, নাজমা রহমান, কবি মুজিবুল হক মনি ও কলামিষ্ট আব্দুল আজিজ তকি প্রমুখ।
বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরী সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রয়াত বেনু ভুষন চৌধুরীর দীর্ঘ কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। বক্তারা কমিউনিটি সেবায় ড: চৌধুরীর বিশাল ভুমিকার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাঁর সেবা কারযক্রম নিজের কর্মক্ষেত্রের নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো পুরো কমিউনিটিতে। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কমিউনিটির সেবা করতে গিয়ে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে মানবতাবাদী এই চিকিৎসককে। বক্তারা প্রয়াত ডা: বেনু ভূষন চৌধুরীকে মানবতার প্রতীক আখ্যায়িত করে বলেন, মানুষের সুখে দুঃখে তিনি ছিলেন খুবই কাছের একজন বন্ধু। ব্রিটেনে থেকেও বিভিন্ন রাজনৈতিক উত্থান-পতনে বাংলাদেশের পাশে থাকার চেষ্টা করতেন বি বি চৌধুরী এমন মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার, বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও কুপমন্ডুকতার বিরোদ্ধে ডা: বেনু ভুষন চৌধুরী ছিলেন একজন লড়াকু সৈনিক। অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতেন তিনি। ব্রিটেনে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের বিরোদ্ধেও ড: চৌধুরী ছিলেন সোচ্চার, এমন মন্তব্যও করেন বক্তারা।
সভায় প্রয়াত বেনু ভুষন চৌধুরী স্মরণে একটি নাগরিক শোকসভা আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, তৎকালীন সময়ে হাতেগোনা যেকজন বাঙালি জিপি (ডাক্তার)ছিলেন, তাদের মধ্যে বেনু ভূষন চৌধুরীই একমাত্র ব্যতিক্রম, যার কর্মপরিধি নির্দিষ্ট কোন এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিলনা। নিজের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গিয়েও রাত বিরেতে তিনি সেবা দিয়েছেন রোগিদের। মৃত্যুর পর তাঁর রোগিদর মধ্যে যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, সেই শোক ভাগাভাগি করে নিতেই প্রয়োজন একটি নাগরিক শোকসভা। ডা: বেনু ভূষন চৌধরী একক কোন প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ছিলেন না, তিনি নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান, এমন মন্তব্য করে সভার ঘোষনায় বলা হয়, কমিউনিটির সম্পদ এই প্রতিষ্ঠানকে প্রজন্মান্তরে বাচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগের সূচনাই হবে তাঁর স্মরণে নাগরিক শোকসভা। বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আনসার আহমেদ উল্লাকে আহবায়ক ও যুবনেতা শাহরিয়ার বিন আলীকে সদস্য সচিব করে একটি নাগরিক শোকসভা কমিটি ঘোষণা করা হয় বুধবারের সভায়। এই কমিটি নাগরিক শোকসভা আয়োজনে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহন করবে।
উল্লেখ্য, গত ১লা মে, রোববার বাংলাদেশ সময় সকালে ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বি বি চৌধুরী নামে পরিচিত ডা: বেনু ভুষণ চৌধুরী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর।
লন্ডনে দীর্ঘদিন জিপি’র (ডাক্তার) দায়িত্ব পালনকালীন প্রবীন এই চিকিৎসক কমিউনিটির সাধারন মানুষের উপকারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তখনকার সময়ে হাতে গোনা যেকজন বাঙালী ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) জিপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ড: চৌধুরী ছিলেন তাদের অন্যতম। দেশ থেকে ভ্রমনে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া বা চিকিৎসার জন্য আসা অনেকেই বিভিন্ন সময় ড: চৌধুরীর সহায়তায় ব্রিটেনের উন্নত চিকিৎসা সেবা লাভে সক্ষম হয়েছেন। কমিউনিটির সাধারন মানুষদের সেবা দিতে গিয়ে বর্ণবাদী হামলার শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। মাতৃভূমি বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগ দু:সময়ে যে কজন কমিউনিটি নেতা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে পাশে দাড়াতেন ড: চৌধুরী ছিলেন তাদের অন্যতম। সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার পর সার্বক্ষনিক রাজনীতি ও সমাজ কর্মে মনোনিবেশ করেন প্রয়াত এই নেতা। বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতিসহ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টসের অন্যতম সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এই নেতা। বিগত কয়েক বছর যাবত মাতৃভূমির গরীব জনগনের সেবার লক্ষ্য সামনে নিয়ে সারা জীবনের অর্জন সবকিছু মূলধন করে বাংলাদেশে হাসপাতালসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রতিষ্ঠান তৈরীর চেষ্টায় বাংলাদেশে তিনি ছিলেন বিরামহীন ভাবে কর্মরত। এই অবস্থায়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন ডা: চৌধুরী।