মুক্তকথা নিবন্ধ।। ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশীদের মহান বিজয় দিবস। খুব ঘটা করে দিবসটি বাংলাদেশে পালিত হয়ে আসছে সেই ১৯৭১সাল থেকে। ঠিক তেমনি সারা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রধান ৮টি দেশসহ অষ্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা ও নিউজিল্যাণ্ড পালন করে আসছে আরেক বিজয় দিবস।
১১ই নভেম্বর, যুদ্ধবিরতির দিন। ফ্রান্সের কমপিন শহরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির সাথে কেন্দ্রীয় শক্তি জার্মানীর যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এই দিনে। দিনটি পালিত হয় বৃটেনসহ ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রায় সর্বত্র।
এই ১১ই নভেম্বর তারিখের বেলা ১১টা থেকে ১ম বিশ্বযুদ্ধের পশ্চিম ফ্রন্টে শুধুই যুদ্ধ বিরতি নয় বরং বিরতির পরিণতিতে যুদ্ধ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ তারিখে সারা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পপি নামের একটি ফুল পড়ে থাকেন। দিনটির একটি বিশেষ দিক হলো বছরের ১১নম্বর মাস নভেম্বরের ১১ তারিখে বেলা ১১টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্য্যকর হয়েছিল।
বাস্তবের মাঠের পপি। ছবি: ইন্টারনেট
পপি নামের লাল রংয়ের এই অসাধারণ সুন্দর ফুলটি পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আনাচে কানাচে জন্মে থাকে। সবুজ পাঁপড়ির টকটকে লাল এই ফুলটি দীর্ঘ যুদ্ধের গোলাবারুদের গন্ধে ভরা, বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত মাঠে ভয়াবহ খারাপ অবস্থার মাঝেও জন্ম নেয় ও বেড়ে উঠে। আর এমন অবস্থাকে স্মরণ করেই যুদ্ধবিরতীর দিন ১১ই নভেম্বর ‘পপি দিবস’ পালিত হয়ে আসছে সেই ১৯২০সাল থেকে।
এই ‘পপি দিবস’ বৃটেন ছাড়াও বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মেনী, ক্যানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, সার্বিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়াসহ আরো বহু ইউরোপীয় দেশে ঘটা করে পালিত হয়। বিশেষ করে বৃটেনে পালিত হয় খুব আড়ম্বরে।
যুদ্ধাহত-নিহত মানুষের পরিবার-পরিজনদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে বানানো কৃত্তিম ‘পপি’। ছবি: টেলিগ্রাফ
আন্তরিকভাবে দিবসটি পালনের ফলে ব্যবহারের জন্য এখন বাস্তবে এতো পপিফুল পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। তাই এখন আসল পপিফুলের পাশাপাশি পপির মত করে ফুল বানানো হয়। এটি এখন ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন জুড়ে বিশাল এক স্বেচ্ছাসেবা কর্মযজ্ঞ।
এ তারিখে বৃটেনের রাণীর পক্ষে ওয়েলসের রাজকুমার, রাষ্ট্র প্রধান, বিভিন্ন দলীয় প্রধান এবং ক্যানাডা, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যাণ্ডসহ ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বহুদেশের প্রতিনিধিগন নিজেদের অবস্থান অনুসারে লণ্ডনের হোয়াইট হাউসের সামনে অবস্থিত বিজয় স্তম্ভে পপি দিয়ে বানানো পুষ্পস্তবক অর্পন করেন এবং সম্মান প্রদর্শন করেন।
কৃত্তিম পপি বানিয়ে বিক্রিকরে প্রাক্তন সমরসেবি ও তাদের পরিবারের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের কাজ প্রথম শুরু হয় ১৯২১সাল থেকে। তার পর থেকে আর কাউকে বসে থাকতে হয়নি। ক্রমান্বয়ে এই পপির ব্যবহার এমনভাবে বেড়ে যায় যে এখন এটি একটি বিশাল ব্যবসাও বটে।
|