মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। বাবা এ তুমি কি করলে? আমিতো নিজ থেকে আসতে চাইনি। তুমিইতো তোমার আনন্দের খেলা থেকে আমাকে ডেকে আনলে। তবে কেনো আমাকে এমন কষ্ট দিয়ে বিদেয় করে দিলে আমার প্রানের বাপধন! আমাকে ছেড়ে তুমি কি থাকতে পারবে বাবা! যখনই আমার কথা তোমার মনে পড়বে তখন তোমার মনকে কি সান্তনা দেবে! পারবে বাবা মনকে শান্ত রাখতে! আমাকেতো বিদেয় করে দিলে। আমি চলে গেলাম। কিন্তু যে আনন্দের ধনকে তুমি নিজে ডেকে আনলে, দুনিয়ার মুখ দেখালে তাকে কোন অপরাধে এ দুনিয়াকে দেখতে দিলে না। স্বাদ ভোগ করতে দিলে না দুনিয়া কেমন? আমি কি তোমার কোনই কাজে আসতাম না বাবা? আমাকেতো বিদেয় করে দিলে কিন্তু বড় কষ্ট দিয়ে ফেরৎ পাঠালে বাবা!
এ বাস্তব জগতের কোন বাবার প্রতি কোন হতভাগি কন্যার আর্তি নয়। সাংবাদিকের কল্পনায় আসা ৪০দিন বয়সী এক কন্যার আর্তি। সংবাদ লিখতে গিয়ে একজন সাংবাদিকের মনোজগতে আর্তনাদের এই তোলপাড় তুলেছে ৪০দিন বয়সের জিদনীর মৃত্যু!
মর্মান্তিক এমন ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী গ্রামে। পরপর ৩টি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ায় রাগে ক্ষোভে ৪০ দিন বয়সী এক কন্যা সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে তার বাবা। গত ১৬ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মানব মরমে আঘাতি সে হত্যা ঘটনার শিকার ওই কন্যার নাম ছিল জিদনী। তার পশু হৃদয়ের পিতার নাম জাহাঙ্গীর সিকদার।
বাবার হাতে শিশু কন্যা হত্যার এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিক কারণেই। মানব মরমে আঘাতকারী এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষজন হতবাক। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক সুবিচার দাবি করেছে। শনিবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর সিকদার তার শিশু কন্যা হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ সূত্র থেকে জানা গেছে। রবিবার ১৯ জানুয়ারী তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী গ্রামের জাহাঙ্গীর সিকদার ও সীমা দম্পতির সোহাগী (৯) এবং জান্নাতী (৩) নামে দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর ওই দম্পতির জিদনী নামের আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বাবা জাহাঙ্গির কন্যা সন্তান জন্মের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। সে একটি পুত্র সন্তানের আশা করেছিল। এ কন্যা শিশু জন্মের পর থেকেই জাহাঙ্গির ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছিল।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, কন্যা সন্তান জন্মের পর থেকেই জাহাঙ্গির স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতো না এবং কন্যা সন্তানটিকে না-কি ছুঁয়েও দেখেনি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাবা জাহাঙ্গীর সিকদার জিদনিকে নিয়ে ঘরে শুয়ে ছিল। এ সময় তার স্ত্রী সীমা বেগম এবং তার শ্বাশুরী পারুল বেগম ঘরের বাহিরে গৃহস্থালী কাজ করছিলেন। শিশুটির মা সীমা বেগম এবং নানী পারুল বেগম কাজ শেষে রাত ১১টার দিকে ঘরে প্রবেশ করে শিশু জিদনি ও তার বাবা জাহাঙ্গিরকে দেখতে না পেয়ে ডাক চিৎকার দেয়। এতে প্রতিবেশীরা এবং বাড়ির অন্যান্য লোকজন ছুটে আসে।
পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘরের পেছনের ডোবা থেকে কাঁথায় মোড়ানো বিছানাপত্রসহ জিদনির মরদেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে আমতলী থানার পুলিশ রাত ৩টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাষণ্ড বাবা জাহাঙ্গীর সিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পাষণ্ড বাবা জাহাঙ্গীর শিকদার নিজের কন্যা শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় জিদনীর মায়ের করা মামলায় একমাত্র আসামি হিসেবে জাহাঙ্গীর সিকদারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, পাষন্ড বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। হত্যার কথা স্বীকার করায় শনিবার তাকে সন্তান হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রবিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সূত্র: গণমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যম