1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
ফুটবল খেলোয়াড় আব্দুল ওয়াহেদ চাঁন মিয়া - মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

ফুটবল খেলোয়াড় আব্দুল ওয়াহেদ চাঁন মিয়া

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭
  • ৩৬৮ পড়া হয়েছে
আব্দুল ওয়াহেদ চাঁন মিয়া

লন্ডন: বৃহস্পতিবার, ৯ই চৈত্র ১৪২৩।।জন্ম ১৯২৭ ইংরেজীর ১৫ই মার্চ। এ সুবাদে বয়স দাঁড়ায় ৯০বছর। কিন্তু চেহারায় তার কোন ছাপই নেই। প্রথম দর্শনে আমি মনে করেছিলাম বয়েস হবে ৬০ কিংবা ৬৫ বছর। এর বেশী হবার বিষয়ে চেহারা কোনই সাক্ষী দেয় না। খুবই স্বচ্ছ সুন্দর লম্বাটে মুখ। চেহারায় ভাঁজ পড়েছে বয়সের তবে তা সত্তুরের নিচে। উপরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। গলার স্বর, বাচনভঙ্গী কোনটাই সায় দেয় না। দাঁতও পড়েনি। পক্ক কেশ সে তো অনেকেরই পঞ্চাশেই হয়ে যায়। লুঙ্গি পড়ে একটি সার্ট গায়ে দিয়ে ভেতর থেকে আমার কাছে একটি চেয়ারে এসে বসলেন। দেখেই আমার কেমন আশ্চর্য্য লাগছিল!
আশ্চর্য্য লাগার কারণও ছিল। আমার ছয়নম্বর ছোট ভাইয়ের ক্লাসমেইট বর্শীজুড়ার শামীম। আমাকে বলেছিল ওনার কাছ থেকে মৌলভীবাজারের অনেক প্রাচীন গাল-গল্প শোনা যাবে। নব্বুইয়ের উপরে বয়স। তার সাথে মাঝে মধ্যে আলাপ হয়। সে তখন তন্ময় হয়ে নিজের জন্মমাটির পুরনো ইতিহাস শুনে। মনে মনে বললাম, এমন ইতিহাস শুনার কার না ইচ্ছে হয়। আর তাই আমিও আনন্দ চিত্তে শামীমকে বললাম, একদিন আয়োজন কর। উনার সাথে বসি। জবাবে শামীম জানালো, আয়োজন করতে হবে না। উনিতো আমারই বাবা। আমরা আগে এক ঘরেই থাকতাম। ইদানিং আমি অন্যত্র ঘর কিনে চলে গিয়েছি। সপ্তাহে একদিন এসে বাবা-মা’কে দেখে যাই। একদিন সময় সুযোগ করে আপনাকে নিয়ে যাবো। দেখবেন আলাপ করে ভাল লাগবে। মনে মনে খুবই চিন্তায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে শামীম কোন বিশেষ কারণে আমার সাথে মিথ্যা বলছেনাতো? এমন মানুষের বয়স নব্বুই হতে পারে? বিশেষ করে বাঙ্গালী মানুষের! তাই আশ্চর্য্য আর বিভ্রান্তিতে ভুগেছি কিছু সময়।
শামীমের সাথে আমার পরিচয় লন্ডনে। আমাদের বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে তার সাথে পরিচয় হয়ে যায়। ঠিক কি ভাবে হয়েছিল সে আজ আর হুবহু মনে নেই। তবে আমাদের বাঙ্গালী সংগঠনের বহু কাজের সাথে শামীম ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত ছিল। খুব ভদ্র (অন্ততঃ আমার কাছে), উচ্ছ্বল, বুদ্ধীমান আর পরিশ্রমী যুবক শামীম। পরিচয়ে সেই বলেছিল আমার ভাই জেরিনের সাথে সে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন তার সাথে চলার পর বুঝলাম আমার প্রতি তার শ্রদ্ধা আবেগ কৃত্তিম নয় বরং সহজাত। দেশে ছাত্রাবস্থায় জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতি ছুঁয়ে এক অবস্থায় বিএনপি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিল। এখন আর ওসব নিয়ে ভাবে না। জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত কাজ নিয়েই সময় কাটে। তবে দেশ নিয়ে ভাবে। আমার মত পরিচিতজনদের সাথে দেখা হলে দেশের কথা জিজ্ঞাসা করে। অভয় পেলে আলাপ জমাবার চেষ্টা করে জানার ইচ্ছে থেকে।

আব্দুল ওয়াহেদ চাঁন মিয়া

তরতাজা জোয়ান মানুষই মনে হয়। কেমন আশ্চর্য্য লাগছিল আমার। বাঙ্গালী মানুষ এমন বয়সেও এতো তেজোদ্দীপ্ত থাকতে পারে। কথা হচ্ছিল এক দুপুরে জনাব আব্দুল ওয়াহেদ ওরফে চাঁন মিয়ার সাথে। থাকেন লন্ডনের ওয়েস্টবর্ণ পার্ক এলাকায়। বৃটেনে বেশীদিন নয়। আশীর দশকে এসেছিলেন এখনও আছেন, খুবই সুস্থ সবল স্বাস্থ্য নিয়ে। দেশে থাকতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি কাগজকলে কাজ করতেন। একসময় কাজ চলে যায়। বেকার হয়ে আনসারে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বড়লেখার নিকটে সীমান্তে প্রহড়ায় ছিলেন তবে সীমান্ত ফাঁড়ীর নাম মনে করতে পারেননি। যতই আলাপ করছিলাম বয়সের বিষয়ে ততই সন্দেহ বাড়ছিল।
সন্দেহ নিরসনের জন্য প্রথমেই তার বয়সের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। আমার জিজ্ঞাসা- আপনার জন্ম তারিখ কত? একটু গভীর নেত্রে আমার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললেন কেনো, সন্দেহ হচ্ছে মনে হয়। কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই জন্ম তারিখটা বললেন। তবুও আমার সন্দেহ যাচ্ছিল না। জানতে চাইলাম কোন স্কুলে পড়েছিলেন। -আমাদের বাড়ী খুশহাল পুর। খুশহালপুর প্রাথমিক স্কুল থেকে আমার লেখা-পড়ার শুরু। আমাদের শিক্ষক ছিলেন আনন্দ কুমার সেন। এসময় আমতৈল এইচ.ই. স্কুল বিজয় কুমার দাসের বাড়ীতে ছিল। শশিমোহন ধর, বিজয় কুমার দাস ওই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তিনি বলতে থাকেন- আমাদের সময় সম্বদ পুরের তরাজ মিয়া খুবই নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। ওই সময় আরো যারা ফুটবল খেলতেন তাদের মধ্যে কনকপুরের কমরু খান, জিলা মিয়া ও তদীয় ভ্রাতা মখলিছ মিয়া খুবই নামকরা খেলোয়াড় ছিলেন। কোনা গাঁওয়ের ছমির মিয়াও ওই সময়ের একজন নামজাদা ফুটবল খেলোয়াড়। আকাটুনার কমরু মিয়ার বড়ভাই আযাদ মিয়া, আমরা একসাথের খেলোয়াড়। মাঝখান থেকে আমি জানতে চাইলাম ঘড়োয়া’র প্রয়াত হাসিম মিয়া তাদের সমসাময়িক কি-না? উত্তর এলো- হাশিম মিয়া আমাদের জুনিয়র।
তিনি বলছেন- মৌলভীবাজারে তখন দু’টি খেলার ‘টীম’ ছিল। একটি ‘টাউন ক্লাব’ আর অপরটি ‘মোহামেডান’। আমি ‘টাউনক্লাব’এর হয়ে খেলেছি বহুদিন। আমাদের সময় রেফারী যে কয়েকজন ছিলেন তাদের মধ্যে নাম মনে পড়ছে ছহবত মোক্তার, জগৎজ্যোতি বাবু। এরা আমাদের সময়ের খুববেশী না হলেও সিনিয়র। তিনি বলেই চলেছেন- ১৯৫২-৫৩ সালে টাউন ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবে রাজনগর খেলতে গিয়েছিলাম। তখন রাজনগরের জামাল-কামাল দুই ভাই ভাল ফুটবল খেলতো। কামাল আমাকে রাজনগর নিয়ে যায়। কিন্তু খেলতে পারিনি। প্রথমেই হঠাৎ করে বল ধরতে গিয়ে পেটে পড়ে যায়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আর খেলতে পারিনি। এসব ছাড়াও অন্তেহরি ভাড়াউড়া, ভৈরববাজার গিয়ে খেলেছি। খেলেছি শ্রীমঙ্গলে গিয়েও।
তার স্মরণীয় কোন ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, তরাজ মিয়ার কথা। তরাজ মিয়া ফুটবলের প্রতি এতো উৎসাহী ছিলেন যে সংসারের দিকে বলতে গেলে কোন নজরই দিতেন না। তার বিধবা মা শেষে তাকে নিয়ে হজ্বব্রত পালন করেন শুধু ফুটবল থেকে তার নেশা কমানোর জন্য। কিন্তু তাও হয়নি। ফুটবল তিনি ছাড়তে পারেননি।
প্রয়াত এই কৃতি ফুটবলার তরাজ মিয়াকে নিয়ে আমি চমৎকার গ্রামের সজলের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি আজ থেকে ৪-৫ বছর আগে তরাজ মিয়া শতবর্ষী হয়ে পরলোকগমন করেছেন। সজল জানায় তরাজ মিয়ার বাড়ী সম্বদপুরেই। গ্রামে উনার বহু আত্মীয়স্বজন রয়েছেন।
জীবনের অফুরান স্মৃতি নিয়ে আজো আমাদের মাঝে সুস্থ সবল শরীর নিয়ে বেঁচে আছেন খোশহাল পুরের ওয়াহেদ মিয়া(চাঁন মিয়া)। তার বাবার নাম ছিল হাজী মোহাম্মদ কুরফান আর মাতার নাম হালেমা খাতুন। আব্দুল ওয়াহেদেরা ৭ ভাই-বোনের মাঝে এখনও তারা ৪জন বেঁচে আছেন।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT