প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, কমলগঞ্জ।।মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরে বিদ্যুতায়িত হয়ে কামরুল ইসলাম(১৮) নামে এক ওয়েল্ডিং শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সে ভানুবিল গ্রামের মছদ্দর মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় আদমপুরের উত্তরগাঁওয়ের সুভাস সিংহের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, উত্তরগাঁও এর সুভাস সিংহের বাড়িতে ওয়েল্ডিং-এর মাধ্যমে একটি রড কাটতে গেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতরভাবে আহত হয় কামরুল। সাথে সাথে তাকে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্বজনরা তার মৃত দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিযনেরর পদ্মছড়া চা বাগানে পাহাড়ি ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রায় ৩০০ ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মছব্বির মিয়া এক ব্যক্তিকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী হাকিম ও কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমী আক্তার। বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় বালু জব্দ করে জরিমানা করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেশকিছু দিন ধরে কমলগঞ্জে ধলাই নদীসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের গুঞ্জন চলছিল। গত ২ সপ্তাহ আগেও ধলাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পরিবহনের সময় বালু ভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার নির্বাহী হাকিম সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমী আক্তার আকস্মিকভাবে পদ্মছড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদারত পরিচালনা করে অবৈধভাবে উত্তোলিত ৩০০ ঘনফুট বালু জব্দ করেন। সাথে সাথে বালু উত্তোলনকারী মছব্বির মিয়াকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমী আক্তার বালু জব্দ ও নগদ জরিমানার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের বড়লাইন এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মনিন্দ্র বাউরী (৭২) গত বুধবার (২২) মে দিবাগত রাত ২ টা ২০মিনিটের সময় বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি নিজ বাড়ীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে, ১ মেয়ে, নাতি নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১ টায় আলীনগর চা বাগান নাচ ঘর প্রাঙ্গনে মনিন্দ্র বাউরীর মরদেহে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করা হয়। পরে তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
আশেকুল হক, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্তÑ সুধীন চন্দ্রদাস, মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী, কমলগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ, আলীনগর চা বাগান সহকারী ব্যবস্থাপক মনির হোসেন প্রমুখ। পরে বেলা ২ টায় আলীনগর চা বাগানস্থ ইটখলায় মনিন্দ্র বাউরীকে সমাহিত করা হয়।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বিয়ের পর থেকে প্রতি বছরই বাবার বাড়ি থেকে বেশ আয়োজন করে মেয়ের বাড়ি ইফতার সামগ্রী পাঠানো হয়। যুগ যুগ ধরে এ প্রথা চলে আসছেই। মেয়ের বাবার বাড়ি স্বচ্ছল হোক আর অস্বচ্ছল হোন রমজান মাসে বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী দিয়ে ইফতার পাঠাতেই হবে। এসময় পুরো রমজান মাস জুড়ে গড়ে উঠে মৌসুমী ইফতার সামগ্রী বিক্রেতাদের দোকান। এখন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মেয়ের বাড়ির ইফতার নিয়ে ব্যাাপক বেচাকেনা চলছে। ইফতার সামগ্রীর মাঝে বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের সাথে বেশী চাহিদা দেখা গেছে মুম্বাই জিলাপি,বিরিয়ানি ও বুনা খিচুড়ির। ইফতারের দোকানে বসে খেতে আবার নরম খিচুড়ির চাদিা বেশী লক্ষ্য করা গেছে। কমলগঞ্জর বড় বাজার শমশেরনগর বাজারের স্থানীয় দোকান মৃদুল হোটেল রেস্তুরা, ভাই ভাই হোটেল, আলী ফুডস, জয়গুরু ফুডস, কুমিল্লা হোটেলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ইফতার সামগ্রীর দোকানে মালিক ও কর্মচারীরা বেস্ত ইফতার সামগ্রী বিক্রি নিয়ে। বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় মৃদুল হোটেল রেস্তুরায় গিয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র মেয়ের বাড়ির ইফতার বিক্রিতে তারা ব্যস্ত।
দোকানের টাঙানো মূল্য তালিকায় দেখা যায় সাদা মিষ্টি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা,লাল ও সাদা মিলে ১৫০ টাকা, ১নং নিমকি ১২০ টাকা, সাধারণ নিমকি ১০০ টাকা, জিলাপি বড় (মুম্বাই জিলাপি) ১০০ টাকা, জিলাপি ছোট) ৮০টাকা, দই ১৬০ টাকা, বিরিয়ানি ১৬০ টাকা, খিচুড়ি (বুনা খিচুড়ি) ১০০ টাকা ভাজি চানা (ছোলা ভাজি) ১২০ টাকা, কাঁচা চানা ১২০ টাকা,পিয়াজু ১২০ টাকা, শাক বড়া ১৪০, আলুর চপ ১২০ টাকা বেগুনি ২০০ টাকা ও জালি বড়া ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দোকানী হাজী আকমল হোসেন বলেন রমজানের প্রথম দিকে সাধারণ রোজাদাররা ইফতার কিনে বাড়ি নিয়েছেন। এখন রমজান যতই বাড়ছে মেয়ের বাড়ির ইফতার সরবরাহের কাজে তারা এখন ব্যস্ত। তিনি আরও বলেন, দোকানে বসে যারাই ইফতার করেন তাদের চাহিদা বেশী নরম খিচুড়ির। আর মেয়ের বাড়ির ইফতারে মিষ্টি নিমকি, মুম্বাই জিলাপি আর বিরিয়ানির চাহিদা বেশী। প্রতিদিন গড়ে এ দোকানে দেড়’শ থেকে দুই’শ কেজি মিষ্টি বিক্রি করছেন। কোন দিন ৫০০ কেজিও বিক্রি করতে হয়। একই অবস্থা দেখা যায় শমশেরনগর স্টেশন রোডের ভাই ভাই হোটেল, কুমিল্লা হোটেল, আলী ফুডস ও মৌসুমী দোকান গুলিতে। আর শুধু মাত্র মিষ্টি, নিমকি,লবঙ্গ ও প্যাড়া মিষ্টি বিক্রি করছেন জয়গুরু ফুডস। কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এলাকায় শাহজালাল হোটেল, ভানুগাছ বাজারে গ্রামের বাড়ি, রাজমহল, পানাহার, রাধুনী ও আল আকাবায়ও ইফতার সামগ্রী বিক্রিতে এখন ব্যস্ত দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। কমলগঞ্জের আদমপুর, পতনউষার ও মুন্সীবাজারেও ইফতারের বাজার জমজমাট। ইফতার সামগ্রীর সাতে আরও যুক্ত রয়েছে খেজুর, আঙ্গুর আপেল ও আম।
মেয়ের বাবা জয়নাল আবেদীন বলেন, বিয়ে দিলেই মেয়ের সাথে সম্পর্ক শেষ হয় না। তার সাথে ও তার শ্বশুর বাড়ির সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় রমজানে ইফতার ও মধু মাসে আম কাঁঠালি দিয়ে। দেওয়া কোন বাধ্যবাধকতা না হলেও দিতে হয় আন্তরিকতার কারণে। আর বছরের পারিবারিক বাজেটে এর হিসেব ধরে রাখতে হয়। শমশেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ম. মুর্শেদুর রহমান বলেন, মেয়ের বাড়ি ইফতার ও আম কাঁঠালি দেওয়া সিলেট অঞ্চলের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। এটাকে সবাই এখনও ধরে রেখেছেন।