1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
বিপন্ন হাওর-পাহাড়! নিত্য সঙ্গী বন্যা - মুক্তকথা
রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ অপরাহ্ন

বিপন্ন হাওর-পাহাড়! নিত্য সঙ্গী বন্যা

নুরুর রহিম নোমান॥
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪
  • ১৭৫ পড়া হয়েছে

 

বন্যা নিয়ে
কিছু কথা, কিছু ভাবনা!

 

নূরুর রহিম নোমান

লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিক

বাংলাদেশে ফি বছর বন্যা হয়। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসতেছি, বন্যা নিয়ন্ত্রনের নামে কত সহস্র প্রজেক্ট, তারপরও বন্যা হয়, হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে। নিয়ন্ত্রনের নামে বরাদ্ধ আসে, এসেছে, আসবে এবং হরিলুটের মতো, সেই টাকা লুঠ হয়ে যাবে, ফের বন্যা হবে…!

বাংলাদেশে অর্থবছর শুরু হয় জুন মাস থেকে! আধুনিক বিশ্বে অর্থবছর শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে। জুন মাসে অর্থবছর শুরু হওয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় বর্ষা মওসুমে। এতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হয়, কাজের দীর্ঘসূত্রিতায়, বন্যা-বানের জলে ভেসে যায় সব, অর্থেরও অপচয়, কাজও শেষ হয় না!

নদী মাতৃকদেশ, বন্যাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়, কিন্তু বন্যার প্রকোপ কমানো যায়, জানমাল, ফসল, সহায় সম্বল রক্ষায় নদী পরিবেশ প্রকৃতির সহিত বৈরী আচরণ না করে সহাবস্থান করেই তা করা যায়।

মৌলভীবাজারে মনু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকেই বন্যা ও বন্যার আতঙ্ক স্থায়ী রূপ নিয়েছে। সেটি শুরু হয়েছে ১৯৭৭ এর পর থেকেই। নদীর নাব্যতাও কমছে, শুকনো মওসুমে নদীর তলানিতে ছোট্ট নালার মত পানির প্রবাহ থাকে!

নদীর তলদেশ এবং আশপাশের ও শহরের ভূমি লেভেল একই সমতলে হয়ে গিয়েছে। সে কারণে বর্ষায় নদীর পানি জনপদ ও শহরের লেভেলের অনেক উপর দিয়েই প্রবাহিত হয়, আতংক সৃষ্টি হয় জনপদের মানুষের মনে। কোথাও ভাঙন সৃষ্টি হলে, আশপাশ পানিতে তলিয়ে যাবে, বাসা-বাড়ি ডুবে যাবে বিস্তৃত অঞ্চলের।

শুকনো মওসুমে নদীগুলো খনন করা যায়, কিন্তু সেই কাজ কখনোই করা হয় না। যা চাইলেই করা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভার মাধ্যমে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী-কার্যকর করে। ছোট বেলা দেখেছি, থানা সার্কেল অফিসারদের(C. O Development) কাজ ও তাঁদের কর্মপরিধি, সিও অফিসে আমার বাবার কাজের সুবাধে। এখন তো, আরো পরিবর্তন হয়েছে, শুধু সদিচ্ছা দরকার। কিন্তু হাল আমলের অধিকাংশ আমলা কিংবা কর্মচারিদের সেই মানসিকতা আছে বলে মনে হয়না!

নদীর অবহাহিকায়ও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ভাবে, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবেই! পানির অবাধ প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ করে বন্যার প্রকোপ বাড়ানো হচ্ছে। মেধাহীন দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর আমলা-কর্মচারীরা অতিউৎসাহিত এসব কর্মকান্ডে আর প্রকল্পে।

নদী-নালা-ডুবা-খাল-বিল হাওর জলাশয় নাই হয়ে যাচ্ছে, দখল হয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বন্যার অন্যতম কারণ। শুকনো মওসুমে খরা আর বর্ষায় বন্যা, এই পরিনতি, লুটেরা পুঁজির আগ্রাসনে।

মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জের হাওর জলাশয় অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে পারতেছেনা। তার উপর প্রতিবন্ধকতা! পানির ধর্মই প্রবাহে বাঁধা পেলে, ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সবকিছু।

মুনপ্রকল্পের নামে কুয়েত সরকারের অর্থায়নে মনু-কুশিয়ারা নদীতে ১৯৭৬-৭৭ এ বেঁড়িবাধ দিয়ে কাউয়াদিঘী হাওরে ইরিগেশন প্রজেক্টের নামে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণে যে ব্যয়, তা কি এই ইরিগেশন প্রজেক্ট থেকে উঠে আসে? আমার তো মনে হয়- না, উঠে আসে না! এটা একটা লস প্রজেক্ট এবং কতিপয় লোভী মানুষের লাভ হচ্ছে!

 

 

মনু নদীর উত্তরপাড়ে আমাদের গ্রাম এবং আমাদের বাড়ীর উত্তর দিক দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম অভিমুখে মনুপ্রকল্পের বাঁধ! নদী ও বাঁধের মধ্যবর্তী দূরত্ব গড়ে এক কিলোমিটার হবে এবং এই বাঁধ ধানি জমির উপর দিয়েই করা হয়েছে, কতশত সহস্র হেক্টর জমি অধিগ্রহন করে বন্যাকে স্থায়ী করণ করা হয়েছে!

তিনবছর আগে মনু নদী সংস্কারে প্রায় একহাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ হলো। তারপর কি হলো? কে তার জবাব দেবে? আগের সংসদ সদস্য কি করলেন? অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদেরই-বা কি ভূমিকা ছিলো, এই মনু সংস্কারের কাজে? স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোও কি কোন খোঁজ খবর রাখেন এসবের?

এখন আবার, কাউয়াদিঘী হাওরে দুটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে। দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে, তার একটি ইন্ট্রাককো নামক প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে হাওরে জমি কেনা হচ্ছে বা অধিগ্রহন চলছে। হাওর ভরাট করে ইকোসিস্টেম ধ্বংস করা হবে, হাওরের মানুষের জীবিকার উপায় বন্ধ হবে বসতবাড়িসহ নিঃশ্ব হবেন! প্রাণ-পরিবেশ, জীব-বৈচিত্র বিপন্ন হবে, জলবায়ুর পরিবর্তনে ব্যাপক বিধ্বংসী প্রভাব বাড়বে, খরা-বন্যার প্রকোপ আরো বৃদ্ধি পাবে। সৌর বিদুৎ প্রকল্পের জন্য যথেষ্ট পাহাড়ির ভূমি আছে। পরিবেশ বিপন্ন না করেই তা করা যায়।

সম্প্রতি ‘কাউয়া দীঘি হাওর রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছে হাওর-প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-জীববৈচিত্র সুরক্ষার দাবিতে। মৌলভীবাজারের সকল জনগণ, রাজনৈতিক সংগঠন, ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহবান, এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার জন্য। একই সাথে, মনু নদীর সংস্কারের টাকাগুলো অপচয় কিংবা আত্মসাৎ এর বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে বলবো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যথাযথভাবে কাজ সম্পন্ন ও তদারকি করার জন্য। জেলাপ্রশাসন যেন নজর রাখেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

শুকনো মওসুমে নদীগুলো খনন করে নাব্যতা বাড়ানো প্রয়োজন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়ে বন্যার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রনে প্রাণ প্রকৃতির সহঅবস্থান নিশ্চিত করবেন।

কাউয়াদীঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব স্নেহভাজন খছরু-এম. খছরু চৌধুরী এবং আহবায়ক আ স ম ছালেহ সোহেলের প্রতি আহবান, হাওর রক্ষা আন্দোলনকে বিস্তৃত করে— হাওর বাচাঁও-নদী বাচাঁও- প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে পরিণত করা যায় কিনা? আরো অনুরোধ, আগামী শুকনো মওসুমে বিস্তৃত উদ্যোগ নিয়ে, একদিনের জন্য স্বেচ্ছশ্রমে ‘নদী খনন’ কর্মসূচির আয়োজন করে, স্থানীয় প্রশাসনকে চাপ দেওয়া নদী খননে। আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে সারা জেলায়।

 

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT