একটি জলপাই গাছ
যার বয়স ৪ হাজার বছর(?)
আর কিছু মিথ্যাকথন
আজকের খবরের বিষয় একটি জলপাই গাছ। বিশ্বাস করুণ আর নাই করুণ দেশের কিছু কিছু পত্র-পত্রিকা, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এ খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। অন্তর্জালে খোঁজাখুজি করতে গিয়ে দেখা গেছে ২০২৩সালেও কিছু কিছু সংবাদ ও গণমাধ্যমে বিষয়টি খবর আকারে ছাপা হয়েছিল।
সংবাদের বিষয়বস্তুটি খুবই কৌতুহলোদ্দীপক ও আলোড়নসৃষ্টিকারী একটি ‘জলপাই গাছ’ তাই আমরাও বিষয়টি খবরাকারে পুনঃপ্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করলাম না। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হলো একেক মাধ্যম প্রকাশিত বিষয়টিকে নিয়ে নিজেদের অনুমান থেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে বয়সের কথা উল্লেখ করেছেন। অনুমান থেকে বলছি এজন্যই যে প্রকাশকারী মাধ্যম কোনটাই বয়সের বিষয়ে কোন সূত্র উল্লেখ করেনি। বলতে গেলে আমাদের মতোই একে অপরকে নকল করে খবরটি প্রকাশ করেছেন বলে ধরে নিলে মনে হয় অত্যোক্তি হবে না। ফলে, এও মনে হয় বলা যায় যে, এ অত্যাধুনিক বিশ্বের বহুকিছু নিয়েই এমনসব অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনী তৈরী করে প্রকাশিত আকারে নিয়ে এসেছেন যা সত্য বলে সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছে। এতে করে, সারা বিশ্বব্যাপীই চলছে মিথ্যার বেশাতি!
এমনতরো লেখা-লিখি করিয়েরা তাদের ইচ্ছেমতো তথ্যহীন লাগাম ছাড়া লেখালেখি করতে গিয়ে বিশাল এ বিশ্ব জগতের কতকিছুকেই না যে, বদলে দিয়েছেন মিথ্যা বেশাতির সোনালী দীপ জ্বালিয়ে, খুঁজে খুঁজে তার হিসেব বেড় করে নিয়ে আসা একেবারেই অসম্ভব!
উদাহরণ স্বরূপ বলছি, গ্রীসের একটি জলপাই গাছের বিবরণ দিতে গিযে একজন ফেইচবুকার
‘আব্দুল্লা বিন মাহবুব [Abdullah Bin Mahbub(ফেইচবুক)] গত
6 জানুয়ারি, 6:27 AM-এ · তার ফেইচবুকে লিখেছেন-
গ্রিসে ৪০০০ বছরের পুরোনো একটি জলপাই গাছ! এই গাছটি প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে, ব্রোঞ্জ যুগের সময় বেড়ে উঠতে শুরু করেছিল, যখন শেষ বাচ্চা তুষার হাতি শিকার করা হয়েছিল, মিশরের সপ্তম রাজবংশের অবসান ঘটেছিল এবং মানবরা কাঁচের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল।
এই গাছটি মানুষের ইতিহাসের সঙ্গী হয়েছে, ব্রোঞ্জ যুগ থেকে পারমাণবিক যুগ পর্যন্ত এটি আমাদের পরিবর্তিত পৃথিবীকে দেখেছে। এটি বহু যুদ্ধ, রাজা, রাজনীতিবিদ, যোদ্ধা এবং ধর্মপ্রচারকদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাক্ষী থেকেছে, এবং এখনও প্রতি বছর জলপাই উৎপাদন করে!
এই একই খবর ‘সময় নিউজ’ ও ‘বিডি নিউজ২৪.কম’ নামের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম দু’টি তাদের ইচ্ছেমত ভাব জমিয়ে আন্তর্জাতিক পাতায় যা লিখেছেন তা হুবহু নিচে তুলে দিলাম।
আন্তর্জাতিক
১২ টা ৫৫ মিনিট, ৯ মার্চ ২০২৩
কোনো কোনো গাছ এক্ষেত্রে আবার অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারে। যার দৃষ্টান্ত গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের আনো ভাউভস গ্রামের একটি জলপাই গাছ। পাথুরে মাটিতে শিকড় গেড়ে দিয়ে ঈষৎ বাকানো দেহে প্রাচীনত্বের ছাপ নিয়ে মাথা উঁচু করে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে সে।
রোমান সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে হালে ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকস আয়োজনের মতো বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী সে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা শতবর্ষী এক থুত্থুড়ে বুড়ির মতো হলেও আশ্চর্যের বিষয় হলো আজও সে সেই আগের মতোই ফল দিয়ে যাচ্ছে।
মানুষ যে সময় থেকে গাছ লাগাতে শুরু করে, শুরু করে গাছের পরিচর্যা, সেই সময় যে গাছগুলো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তার মধ্যে অলিভ বা জলপাই গাছ অন্যতম। এখন থেকে ৬ হাজার বছর আগে ভূমধ্যসাগরের পাড়ে আনাতলিয়া অর্থাৎ এখনকার তুরস্কে এর আদি জন্মভূমি বলে মনে করা হয়। এরপর অলিভ গ্রিসের ক্রিট দ্বীপে পৌঁছে যায় সেই তাম্রযুগে অর্থাৎ আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে।
এই ক্রিট দ্বীপে এখন থেকে ৩ হাজার বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে জলপাই চাষ শুরু হয়। দ্বীপের ভাউভস গ্রামের জলপাই গাছটি সেই সময়ের বলেই ধারনা। এর সঠিক বয়স নির্ণয়ন করা যায় না। কারণ এটা কখন লাগানো তা অন্যান্য অনেক গাছের মতোই কোথাও লেখা নেই। তবে গাছের গুড়ি দেখে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ একে দুই হাজারের আবা কেউ কেউ একে ৪ হাজার বছরের পুরনো বলে মত দিয়েছেন।
একটি গাছের বয়স দুই হাজার বা তিন বছর, এমনটা শুনলে যে কারও ধারণা করা খুবই স্বাভাবিক যে গাছটি হয়ত শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেছে। কিন্তু গ্রিসের এই জলপাই গাছটি তেমন নয়। গাছটি আজও সজিব। ঝকঝকে সবুজ পাতার ডালগুলো চারপাশে শোভা ছড়াচ্ছে। তবে গাছটিতে ফল ধরার ব্যাপারটি ঘটে মূলত কলম করার মাধ্যমে।
ভাউভস গ্রামে এমন আরও কিছু জলপাই গাছ আছে এবং সেগুলো এখনও বেশ সুরক্ষিত। তবে এটাই বিশ্বের একমাত্র প্রাচীন গাছ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে ‘গ্রেট বেসিন ব্রিস্টলকোন পাইন’ নামে একটি প্রাচীন গাছ রয়েছে। যার বয়স প্রায় ৪ হাজার ৮৫৪ বছর। অর্থাৎ এটি সেই সময় অঙ্কুরিত হয়েছিল, যখন একটু একটু করে গড়ে উঠছিল মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলো। যে সময় মিশরে দ্বিতীয় রাজবংশের সূচনা হচ্ছে।
এছাড়া লেবাননে ‘দ্য সিস্টারস’ অথবা ‘সিস্টারস অলিভ ট্রিস অব নোয়াহ’ নামে আরেকটি জলপাই গাছ রয়েছে। যার বয়স ৬ হাজার বছর। হাজার হাজার বছরে অগণিত যুদ্ধ, মহামারি, খরা ও দাবানল মোকাবিলা করে এই গাছগুলো সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
|
বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত জয়তুন গাছটি গ্রিসের ক্রিতি দ্বীপে …
8 Jul 2024 —
বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত জয়তুন গাছটি গ্রিসের ক্রিতি দ্বীপে রয়েছে।বিশ্বের প্রাচীনতম জয়তুন গাছটি গ্রিসের ক্রিতি রাজ্যের চানিয়ার কিসামোসের আনো ভাউভস গ্রামে অবস্থিত। প্রাচীন গাছটি ৩০০০ বছর বয়সী, …।[ফেইচবুক]
Mon Emon
3 দিন
গ্রিসে ৪০০০ বছরের পুরোনো একটি জলপাই গাছ! এই গাছটি প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে, ব্রোঞ্জ যুগের সময় বেড়ে উঠতে শুরু করেছিল, যখন শেষ বাচ্চা তুষার হাতি শিকার করা হয়েছিল, মিশরের সপ্তম রাজবংশের অবসান ঘটেছিল এবং মানবরা কাঁচের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল।
এই গাছটি মানুষের ইতিহাসের সঙ্গী হয়েছে, ব্রোঞ্জ যুগ থেকে পারমাণবিক যুগ পর্যন্ত এটি আমাদের পরিবর্তিত পৃথিবীকে দেখেছে। এটি বহু যুদ্ধ, রাজা, রাজনীতিবিদ, যোদ্ধা এবং ধর্মপ্রচারকদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাক্ষী থেকেছে, এবং এখনও প্রতি বছর জলপাই উৎপাদন করে! [ফেইচবুক]
এভাবে উপরে বর্ণিত অগণিত মাধ্যম তাদের ইচ্ছেমত করে গ্রীসের এ “জলপাই” গাছটি নিয়ে লিখেছেন। তারা তাদের নিজের মত করে তথ্য সংযোজন করে লিখেছেন। এতো জীবন বিশ্বের সাধারণ মানুষ আমরা এসকল লিখা-লিখির সত্য-মিথ্যা গবেষণা করে যাচাইয়ের সুযোগ পাইনি। এখন এই অন্তর্জালের যুগে হাতের আঙ্গুলের একটি চাপের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে এসকল মিথ্যা কথন চোখের সামনে ভেসে উঠছে। হাতে-নাতে ধরা পড়ছে অসত্য লিখন। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না! শুধু অবাকই হতে হয়!
দার্শনিক লালন ফকিরের ভাষায় বলতে হয়- “কি আজব কারখানা”(?)
ফলে আমরা সাধারণ মানুষের বিভ্রাট লেগেই আছে। কা’কে গ্রহন করি আর কোনটাকে গ্রহন করি! কি বর্জন করি!
এভাবে চিন্তা করলে কি দাঁড়ায়(?)। বলতে কি পারা যায় না যে হাজার হাজার বছর ধরে গবেষণা আর খোঁজাখুঁজি ছাড়া নকলের উপর ভর দিয়ে নিজের মনের মত করে যে বা যারা লিখে গেছেন এবং লিখে চলেছেন, এতে করে যে আসল বিষয়টিকেই একেবারে তলানিতে নিয়ে একসময় বিলীন করে দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন তা-কি সত্য নয়।