আজ ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের ঐতিহাসিক বিজয় আর উল্লাসের দিন। এই দিনে পাকাহানাদারদের পরাজিত করে মৌলভীবাজারকে মুক্ত ঘোষণা করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। একাত্তরের এই দিনে মৌলভীবাজার শহর তথা জেলার সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা বাতাসের তালে উড়তে থাকে। পাক হানাদারবাহিনীকে হটিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুমুক্ত এলাকা হিসেবে মৌলভীবাজারকে ঘোষনা করেন।
মৌলভীবাজারের প্রাক্তন এমপি ও সংসদের সাবেক হুইপ প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আজিজুর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক সমন্বয়কারী। এই এলাকায় জেড ফোর্সের সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন। ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় আক্রমণ আরও তীব্র করেন। ৪ ডিসেম্বর জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। ৫ ডিসেম্বর জেলার সর্বত্র শুরু হয় আক্রমণের পর আক্রমণ। জেলার চারদিক দিকে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে একের পর এক এলাকা শত্রুমুক্ত হতে থাকে। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর দুই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা রাজনগর,শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া ও মুন্সীবাজার এলাকামুক্ত করে মৌলভীবাজার শহর অভিমুখে আসার জন্য অভিযান শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর মিত্র ও মুক্তিবাহিনী শহর ঘেরাও করে। এখানে মহকুমা হেড কোয়ার্টার থাকার কারণে পাকবাহিনীর ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার ছিল।
জানা যায়, জেড ফোর্সের ১৭টি ইউনিটের মধ্যে জব্বার (কুলাউড়ার সাবেক এমপি) ও মুহিবের নেতৃত্বে ২টি ইউনিট কুলাউড়ার দিকে গেলেও বাকি ১৫ টি ইউনিট নিয়ে তারা মৌলভীবাজার শহরে ঢুকার চেষ্টা শুরু করেন। তুমুল যুদ্ধ আর অনেক হতাহতের পর ৭ ডিসেম্বরই মৌলভীবাজার পুরো মহকুমা এলাকা থেকে পাকবাহিনীকে হটিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকে পড়েন। কিন্তু শহরের বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী প্রচুর মাইনসহ অস্ত্র পুতে রাখায় রাস্থা থেকে এগুলো অপসারণ ও নিষক্রিয় করার পর ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার এক মুক্তিযোদ্ধা জানান, মৌলভীবাজার শত্রু মুক্ত ঘোষণাকালে প্রয়াত মির্জা আজিজ আহমদ বেগ প্রথমে যুদ্ধ শেষ করে মৌলভীবাজার এসে পৌছান। তারপর আসেন প্রাক্তন এমপি মোঃ আজিজুর রহমান, সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলী,মির্জা ফরিদ আহমদ বেগ,খুরশেদ আহমদ,আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী।
তিনি আরো বলেন, সরাসরি পাক সৈন্যের সাথে যুদ্ধে মোকাবেলা করে মৌলভীবাজার ফিরেন- আশরাফ চৌধুরী,আব্দুল লতিফ। তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ৮ ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। তার সাথে ছিলেন- মির্জা আজিজ আহমদ বেগ, সৈয়দ মহসীন আলীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক এডভোকেট হারুনুর রশীদ বলেন, মৌলভীবাজার মুক্ত দিবসে সহযোদ্ধারা অনেকেই বেচে নেই। বছর পর পর যখন ওই দিনটি আসে তখন আবেগ আপ্লুত হয়ে মনটা ভরে যায়।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের আয়োজনে ৮ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি স্মৃতিচারণ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আগামীকাল ৯ ডিসেম্বর শনিবার প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের কৃতি সন্তান কিংবদন্তি আলোকবর্তিকা লীলা নাগ নিয়ে এলিজা এলাহীর নির্মিত ‘লীলাবতী নাগ: দ্য রেবেল’।
লীলা নাগ শুধুই একজন মেধাবী ও বিদূষী নারী নয়, কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মেয়ে শিক্ষার্থীই নয়, তিনি ছিলেন এক জীবন উৎসর্গ করা বিপ্লবী যোদ্ধা।
নারী জাগরণ থেকে স্বদেশি আন্দোলন—ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশে লীলাবতী নাগের অবদান অনস্বীকার্য। অবিভক্ত বাংলায় নারীশিক্ষা ও নারীর অধিকারের মতো অনেক ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যেমন আলোচনা হয় না, তেমনি নেই স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ। লীলাবতী নাগের স্মৃতি রক্ষার গুরুত্ব উঠে এসেছে ‘লীলা নাগ: দ্য রেবেল’ তথ্যচিত্রটিতে।
প্রায় ৬০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে স্থান পেয়েছে লীলা নাগের সংস্পর্শে আসা বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক মানুষের বক্তব্য। অবিভক্ত বাংলায় লীলা নাগ যত জায়গায় বসবাস করেছেন, সেসব স্থান উঠে এসেছে এতে। সমাজসংস্কারে লীলা নাগের অবদান উঠে এসেছে তাঁদের কথায়।
তাঁর জীবনী পড়লে যে কারও রক্ত গরম হয়ে যাবে- দেরিতে হলেও এমন একজন মানুষকে নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র ‘লীলাবতী নাগ: দ্য রেবেল’ নির্মিত হয়েছে, সেটা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অভিনন্দন নির্মাতাকে।
লীলা নাগের যোগসূত্র- লীলা নাগের পিতৃভিটা মৌলভীবাজারের রাজনগরে অবস্থিত। ভিটা জবরদখল হয়ে গেলেও এখনও তার ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে। এখনও সেখানে রয়ে গেছে প্রাগ্রসর চেতনার উত্তরাধিকার, কিছু অমূল্য স্মৃতি, যা কালের চক্রে স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে পড়ে লুপ্ত হতে চলেছে। ‘লীলা নাগ’কে নিয়ে আরও বিস্তারিত জানবেন অতি শ্রীগ্রই।
‘লীলাবতী নাগ: দ্য রেবেল’ নির্মাতা এলিজা বিনতে এলাহী এক ঝুঁকিবহুল শখের পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সারা পৃথিবী, তার মাঝেও প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অভিনন্দন তাকে।
‘লীলাবতী নাগ: দ্য রেবেল’ প্রদর্শিত হবে নিউ ইয়র্কে আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২৪ এ। গত ৮ নভেম্বর ২০২৩ আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় তথ্য চিত্রটি।
‘মুক্তকথা’ পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ লীলানাগ স্মৃতি পরিষদের প্রতি এ প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য। তাদেরকে আরও ধন্যবাদ, লীলা নাগের পিতৃভিটা উদ্ধার করে জনকল্যাণে ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।
শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদর্শন কুমার রায়ের (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) সঞ্চালনায় মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম(বার)। সভায় জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, নিখোঁজ জিডি ও মুলতবি স্পর্শকাতর মামলা সমূহের অগ্রগতি ও জেলার গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়।
সভায় জেলার সকল থানা ও পুলিশ সদস্যদের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পুরস্কারের অভিন্ন মানদন্ডের আলোকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে জেলার শ্রেষ্ঠ থানার পুরস্কার গ্রহণ করেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার ।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন এবং আসামি গ্রেফতার করায় শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলামকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
সদর কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক মো: ইউনুস মিয়া শ্রেষ্ঠ কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক নির্বাচিত হন।
এছাড়া সদর কোর্টের মোঃ ইমতিয়াজ সরকার শ্রেষ্ঠ সিএসআই এবং এএসআই মুসিবুর রহমান শ্রেষ্ঠ জিআরও নির্বাচিত হন। পাশাপাশি সন্তোষজনক পারফরম্যান্সের জন্য
সদর ট্রাফিক জোনের মোশারফ হোসেন শ্রেষ্ঠ টিএসআই পুরস্কার লাভ করেন।
এসময় পুলিশ সুপার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী থানার অফিসার ইনচার্জ ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত অফিসারগণের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও ধন্যবাদপত্র তুলে দেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহসিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ সারোআর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) দীপংকর ঘোষ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আজমল হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমানসহ অনেকে।