আড়াইশ মণ খাবার একসঙ্গে রান্না হবে একটি হাড়িতে। সংখ্যার হিসেবে একসঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য খাবার রান্না হবে এই পাত্রে। রান্না হবে ফিন্নি, শাহি জর্দা, ভাত এবং সবজি খিচুড়ির মতো পদ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার শরীফের এক কিলোমিটার অদূরে রোসাংগিরী ইউনিয়নে বসানো হয়েছে বিশাল এই পাত্রটি। ‘হজরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী শাহি তবাররক ডেক’ নামে বিশাল এই পাত্রটি বসিয়েছে মোস্তফা হাকিম শিল্পগ্রুপ। মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের পরিকল্পনায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে। খবরটি ‘বিজনেস ষ্ট্যাণ্ডার্ড’ প্রকাশ করেছে। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
গেল শুক্রবার(৮ জুলাই) প্রথমবারের মতো ২৫ মণ ফিরনি রান্নার মাধ্যমে ডেগটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মাইজভান্ডার শরীফের ঐতিহ্যবাহী তিনটি বড় ওরশ- ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন, শব-ই-বরাতের রাতে, শবে-ই-কদরের রাতসহ বিশেষ দিনগুলোতে এই ডেগে বড় আকারে রান্নার পরিকল্পনা রয়েছে শিল্পগ্রুপটির। মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের পরিকল্পনায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে। | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সারোয়ার আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আমরা নিয়মিত ভারতের আজমীর শরীফে যাই। সেখানে এমন একটি ডেগ রয়েছে। সেখান থেকেই আমার বাবা(এম. মনজুর আলম) পরিকল্পনা করেন চট্টগ্রামে ডেগ স্থাপনের। ভাটিয়ারির একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে প্রায় ৩ মাস ধরে চলেছে ডেগটি তৈরির কাজ। ৪-৫ জন ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে ৮-১০ শ্রমিক দিনরাত কাজ করেছেন। স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি ডেগটির ওজন প্রায় ৪০০০ কেজি। এর উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ১১ ফুট। ১০ ফুট উঁচু চুলায় ডেগটি বসানো হয়েছে। ভারত থেকে আনা অত্যাধুনিক ফায়ার ব্রিক স্থাপন করা হয়েছে চুলায়। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে লাকড়ি। ডেগ ঘুরানোর জন্য চুলার ওপর অটোমেটিক ক্রেন বসানো হয়েছে। বন্দরের কনটেইনার পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয় এমন একটি লরি(প্রাইম মুভার) দিয়ে এটি কারখানা থেকে ফটিকছড়িতে নেওয়া হয়েছে। এটি স্থাপনের জন্য চার গন্ডা জমির উপর ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে। শুধু ডেগটি তৈরি করতে ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।” |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে চার বছর আগে আশেকানে মাইজভান্ডার বিশ্রামাগার প্রতিষ্ঠা করে শিল্পগ্রুপটি। মূলত দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা যেন অজু করতে ও বিশ্রাম নিতে পারেন এমন সুবিধা রেখে ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে। এ ছাড়া মসজিদ, রান্নাঘরসহ নারী-পুরুষদের জন্য রয়েছে ৫৬টি টয়েলেট। বর্তমানে মসজিদের পাশে ২২০ ফুট উচ্চতার একটি দৃষ্টিনন্দন মিনার তৈরির কাজ চলছে, যা অনেক দূর থেকেও দেখা যাবে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার গ্রামে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ অবস্থিত। সাধক সৈয়দ আহমদ উল্লাহ তাঁর পীরের নির্দেশে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। দোয়া প্রত্যাশীদের ভিড়ে তার বাসস্থানটি আধ্যাত্মিক দরবারে পরিণত হয়। স্থানীয় লোকসমাজে “মাইজভান্ডার দরবার শরীফ” হিসেবে পরিচিতি পায়। সৈয়দ আহমদ উল্লাহ প্রতিষ্ঠিত মাইজভান্ডারী কাদেরিয়া তরিকা মাইজভান্ডার দরবার শরীফ হিসাবে পরিচিত। এই সাধকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ৮, ৯ ও ১০ মাঘ ৩ দিনব্যাপী ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এটিই এখানকার সবচেয়ে বড় ওরশ। তার ভাইয়ের পুত্র সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারীর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ২২ চৈত্র ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সারা বছর প্রায় ৫০টির মতো ওরশ পালন হয় দরবার শরীফে। এখান থেকেই চট্টগ্রামের ওরশ সংস্কৃতি যাত্রা শুরু হয়। মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আরো বলেন, “ডেগে মাছ-মাংস রান্না হবে না। কারণ মুসলিম ছাড়াও এখানে অন্য ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন। অনেকটা আজমীর শরীফের অনুকরণ করে এটি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আমাদের নিজস্ব বাবুর্চি আছে। কেউ চাইলে এই ডেকে রান্না করে মানুষকে খাওয়াতে পারবেন। ধাপে ধাপে ৫০ মণ, ১০০ মণ, ২০০ মণ এবং ২৫০ মণ খাবার এই ডেগে রান্না হবে।” -বিজনেস ষ্ট্যাণ্ডার্ড থেকে সংগৃহীত |