রাজনগরের গৃহবধু মিতু দাশ(২৩) মৃত্যুর রহস্য রহস্যময়ই থেকে যাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হয় তাই। রহস্যময় এ মৃত্যুর কারণ আলোর মুখ দেখবে কি-না বিষয়টি এখন অনেকটা অনিশ্চিত। তবে দুঃখহজনক মর্মান্তিক হলেও একটি দুঃখদায়ক অবস্থার অবশ্য খোলাসা হয়েছে, আর তা’হলো মৌলবীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে বিষক্রিয়া সাড়ানোর কোন ব্যবস্থাও যেমন নেই ঠিক তেমনি হাসপাতালের ডাক্তারও প্রথমে ধরতেই পারেননি মৃত মিতুদাশ কেনো বমি করছেন! শুনা ও জানাগেছে ডাক্তার তাকে প্রথমে পেটের অসুখের ঔষধ খাইয়েছেন। পরে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল, সিলেট-এ স্থানান্তরীত হলে মিতু ডাক্তারদের কাছে বলেন যে তার শ্বাশুরী তাকে বমি ও পেটের বেদনার ঔষধ বলে টেবলেট গলিয়ে পানি খাইয়েছেন। এর পর থেকেই তার বমি ও বেদনা আর কমেনি। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মৃত্যুর কারণ বিষক্রিয়া বলে জানান।
তবে বিষ খাওয়ানোর এ ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি সুস্পষ্ট যে মৌলবীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এ ধরনের বিষ খাওয়া ঘটনারও কোন চিকিৎসা হয় না। এদিকে তার মৃত্যুর ঘটনাকে শাশুড়ি কর্তৃক পরিকল্পিত হত্যা বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার শহরের বসবাসরত টমটম চালক পিতা পান্ডব দাশ।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে গেল বৃহস্পতিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায়। মেয়ের মা মুক্তি দাশ’এর সাথে একজন সংবাদকর্মির একান্ত আলাপচারিতার পরে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার চাটুরা গ্রাম থেকে গেল মঙ্গলবার নিহত গৃহবধু মিতু দাশের শাশুড়ি ফোনে জানান যে তাদের মেয়ে ঘন ঘন বমি করছে। তাকে দেখার জন্য দ্রুত আসতে তিনি জানান। তাৎক্ষনিক তাদের বাড়ি গিয়ে মিতুর মা দেখতে পান তার মেয়ে মরা লাশের মত পড়ে আছে। কারণ জানতে চাইলে মেয়ে কেঁপে কেঁপে জানায় ৩ দিন আগে তার কাঁশি হয়েছিল। কাঁশির জন্য তার শাশুড়ি তাকে ট্যাবলেট জাতীয় কিছু গুলিয়ে খেতে দেন। এর পর থেকে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে মৃত মিতুর মা জানান, বুধবার রাতেই তারা দ্রুত মেয়েকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে মিতুকে পেটব্যথার ঔষুধ দেন পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্রুত স্থানান্তর করে দেন। সাময়ীক চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তাদের মেয়ে। মিতুর মরদেহ মৌলবীবাজারে তাদের ভাড়াটে বাসায় নিয়ে এলে শত শত উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। এসময় আলাপচারিতা করতে দেখা যায় মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ওসি(তদন্ত) হুমায়ুন কবীরকে। পরে ওই রাতেই লাশ নিয়ে যাওয়া হয় রাজনগরে তার স্বামীর বাড়িতে দাহকাজ সম্পন্নের জন্য। ওখানে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুয়ায়ী তাকে দাহ করা হয়।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস ছালেকে’র সাথে বুধবার(১৪ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনায় জানা যায়, ওই ঘটনায় মিতু’র পিতা পান্ডব দাশ শাশুড়ি সাধনা দেব, চয়ন দেব ও ননদসহ আরো বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি দরখাস্থ দিয়েছেন। ওসি বলেন, মেয়ের পিতার অভিযোগ স্বামী পক্ষের ভয়ানক যৌতুকের দাবী এবং অবশেষে তাদের মেয়ে মিতুকে বিষপ্রক্রিয়ায় হত্যা করা হয়েছে।
দায়ীত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ নিবিড় তদন্ত করেছে। এক পর্যায়ে মিতু দাশের মোবাইল টেকিং করে তারা জানতে পারেন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আব্দালপুর এলাকার লোকেশ দেব’এর পুত্র চয়ন দেব’এর সাথে তার সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের জের ধরে সে বিষ পান করতে পারে। তার মোবাইলের বিশদ তথ্যউপাত্তও না-কি পুলিশের কাছে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তারা চয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে রাজনগর উপজেলার চাটুরা গ্রামের মৃত বিনয় দেব’র পুত্র বাহরাইন প্রবাসী বিপুল দেব’র সাথে বিয়ে হয় মিতু’র। এর আগে বিপুল আরেকটি বিয়ে করেছিল। শুনা যায় তার প্রথমা স্ত্রী-ও স্বামী ত্যাগী হয়ে অপর একজনের সাথে পালিয়ে যায়।