মোঃ জাকির হোসেন, মৌলভীবাজার।। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মতিগনজ এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘রাজা ফিসারী এন্ড হ্যাচারি’র সত্বাধীকারী বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা রাজা মিয়াকে নৃশংস ভাবে হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর উদ্দোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানবন্ধনে তাহার নিজ গ্রামের শত শত লোক অংশ গ্রহণ করেন। এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন প্রয়াত শিল্পপতি মাস্টার গোলাম মোস্তফা রাজার মিয়ার ছেলে বৃটিশ নাগরিক মাস্টার গোলাম মোরসালিন মোস্তফা।
উক্ত মানববন্ধনে প্রয়াত গোলাম মোস্তফা রাজা মিয়ার ছেলে গোলাম মোরসালিন বলেন, আমার বাবা সহ আমরা সকলেই ব্রিটিশ নাগরিক। কিন্তু আমার বাবা মাতৃভূমির টানে কোন এক সময় অনেক সপ্ন নিয়ে সুদুর বৃটেন থেকে তাহার নিজ জন্মভূমি বাংলাদেশে এসে অনেক পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলেন তিনির সপ্নের রাজা হ্যাচারি এন্ড ফিসারি। যেখানে কর্ম সংস্থান হয়েছিল অনেক বেকার ও অসহায় মানুষের। যারা বেকারত্ব দুর করে অন্ন ঝুটিয়েছিলো তাহাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ রাত ১২টা থেকে ৪ টার মধ্যে আমার পিতা প্রয়াত মাস্টার গোলাম মোস্তফা রাজা’র আকস্মিক মৃত্যু হয়। সে সময় মতিগঞ্জ হাওর এলাকার নির্জন ফিসারির বাড়িতে আমার বাবা ও দেওয়ান নুরজাহান বেগম নামে এক মহিলা বসবাস করতেন।
মাস্টার গোলাম মোরসালিন মোস্তফা বলেন, আমার বাবার রান্না বান্নার জন্য হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং বড় বাজার এলাকার মৃত দেওয়ান গোফরান মিয়ার মেয়ে দেওয়ান নুরজাহান বেগম নামে এক মহিলাকে বাড়িতে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বৃটেনে বসবাসরত আমাদের পরিবারের সকল তাৎক্ষণিক ফ্লাইটে লন্ডন থেকে দেশে চলে আসি। আমরা এসেই লক্ষ্য করেছি আমার বাবার গলায় আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিলো। বাবা মৃত্যুর আগেরদিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন এমনকি ভিডিও কলে পরিবারের সকলের সাথে বিস্তারিত বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথাও বলেছেন। ঠিক পরেরদিনই আমরা খবর পাই আমাদের বাবা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাও আবার হার্ট এটাক করেই নাকি বাবার মৃত্যু হয়েছে। যা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত বলেই আমাদের ধারনা। আমরা নিশ্চিত, সম্পদের লোভে দেওয়ান নুরজাহান বেগম এবং তার ভাই দেওয়ান আলামিন, অন্যান্য লোকজনের সহযোগিতায় হাওরের নির্জন ফিসারির বাড়িতে খুব ঠান্ডা মাথায় আমার বাবাকে হত্যা করা হযেছে। বৃটিশ নাগরিক গোলাম মোরসালিনের বক্তব্যের এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন যে আপনাদের কেন মনে হলো এই মহিলা অর্থাৎ দেওয়ান নুরজাহান বেগমই আপনার পিতাকে হত্যা করেছেন?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোরসালিন মোস্তফা বলেন, বাবা আমাদের ফোন করে প্রায়ই বলতেন যে এই মহিলা বাবার সরলতাকে পুঁজি করে বাবাকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেছে এবং নিজেকে বাবার স্ত্রী হিসেবে দাবী করে প্রচুর অর্থ আত্মসাৎ করেছে। শুধু তাই নয় বাবা যখন আমাদের পরিবারের সকলের সম্মতিক্রমে বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ ট্রাস্টের নামে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ঠিক তখনই অভিযুক্ত এই মহিলা বাবার উপর চড়াও হয়। সেই সাথে তার ভাইয়ের সহযোগিতায় বাবাকে শারীরিকভাবেও নির্যাতন করে। অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রয়াতের ছেলে মাস্টার মোরসালিন মোস্তফা আরো বলেন, আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এই শোকেই আমরা যখন মুহ্যমান তখনই হায়েনার দল শুধু মাত্র সম্পদের লোভে আমার সহজ সরল পিতাকেও আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিলো।
কান্না জড়িত কণ্ঠে মোরসালিন বলেন, বাবাকে প্রাণে শেষ না করে যদি এই মহিলা সরাসরি সম্পদ দাবী করতো আমার বিশ্বাস বাবা কম বেশি ঠিকই দিতেন। আমরা এতিম হয়ে গেলাম।অন্যান্য ভাই বোনরাও শোকে কাতর হযে পড়ে আছে।
আমাদের পরিবারের কেউ এ মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে মাস্টার মোরসালিন মোস্তফা পিতৃ হত্যার রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে সাংবাদিকদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।