হারুনূর রশীদ: রোববার ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৬।। সিদ্ধার্থ গৌতম, যিনি ২,৫০০ বছর আগে উত্তর ভারতে জন্ম নেন। বহু নামে তিনি পরিচিত তবে সাদাসিদে ছোট্ট একটি নাম “বৌদ্ধ”; এ নামে একবাক্যে দুনিয়ার মানুষ তাকে চিনে। কারণ একটিই। এই ছোট্ট নামটির আড়ালে রয়েছে তার শিক্ষা। আধুনিক জমানার বোধিয় মতবাদ ধর্ম হিসেবে ‘বৌদ্ধ’র ওই শিক্ষার উপরই আজও দাঁড়িয়ে আছে তা’ কে-ই না জানে। ‘বৌদ্ধ’ ছিলেন এবং তার শিক্ষা এখনও দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষের মাঝে অবশ্য পালনীয় একটি ধর্ম। এসবকিছু শুধু পুস্তকেই আছে। তার শারীরিক কোন অস্থিত্ব আমাদের মাঝে নেই। যেমন অনেক প্রাচীন মণিঋষির মাজার রয়েছে, মন্দির রয়েছে; আমরা জানি ওই নবি বা মণি বা ঋষির শেষটুকু ওখানেই আছে। যেমন আমি নিজে তুর্কিতে দেখেছি নবি হযরত মোহাম্মদের (সঃ) দাড়ি, নবি হযরত মুসার (সঃ) লাঠি ইত্যাদি। কবর বা গুরুস্থান তো অসংখ্যই আছে। কিন্তু গৌতম বুদ্ধের বেলায় এ ধরনের কোন কিছুর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। আর শত শত বর্ষব্যাপী গবেষকগন তাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
তবে ইদানিং কিছু প্রত্নতত্ত্ববিৎ বলছেন যে তারা গৌতম বুদ্ধ বা সিদ্ধার্থের মাথার খুলির একটি অংশ পেয়েছেন। তারা পেয়েছেন চীনদেশে, শত শত বর্ষের পুরনো একটি বৌদ্ধ মন্দিরের নিচে গুপ্ত কক্ষে ছিল। খোজাখুঁজির সময় প্রথমে পাওয়া যায় একটি পাথরের বাক্স। বাক্সের ভেতরে পাওয়া যায় চন্দন কাঠের সাথে সোনা রূপার কারুকার্য্যময় খুবই সুসজ্জিত একটি মাজারের নমুনার বাক্স। যা’কে চীনে ‘স্টুপে’ বলা হয় এবং ধ্যান বা সাধন কাজে ব্যবহার হয়।
আর এই ‘স্টুপে’র ভেতরেই রক্ষিত ছিল হাড্ডিখানা। ‘লাইভ সায়েন্স’ ওই ‘স্টুপে’র মাপ দিয়ে লিখেছে মাজারবাক্সটি লম্বা ৪ ফুট আর প্রস্থে ১.৫ ফুট। প্রত্নতত্ত্ববিৎগন এখন খুঁজছেন সত্যই এটি গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধার্থের মাথার খুলির অংশ কি-না? এই হাড্ডির অংশ গৌতমের শরীরের অংশ কি-না! প্রত্নতত্ত্ববিৎগন সঠিক করে এখনও বলতে পারছেন না ঠিকই কিন্তু মন্দিরের ওই গুপ্ত কক্ষে প্রাপ্ত চন্দনকাঠের বৌদ্ধ মাজারের নমুনার ভেতরে পাওয়া লিখায় বুঝা যায় এই হাড্ডি গৌতম বুদ্ধেরই। প্রত্নতত্ত্বগবেষকগনও বলছেন এই মূহুর্তে আমাদের কাছে ‘ওই লিখা’ ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই। তবে এ যদি গৌতমবুদ্ধের না-ই হবে তা’হলে এখানে এ লিখা আসবে কেনো?
কে লিখেছেন? ‘ডেমিং’ নামে একজন লিখে রেখেছেন। গবেষকদের কাছে অপরিচিত নাম এই ‘ডেমিং’ লিখেছেন কি করে মহামতি বুদ্ধের মৃত্যুর পর হিরণ্যবতী নদী তীরে দাহ শেষে তার শরীর হাজারও টুকরা করা হয় এবং মাত্র ১৯টি টুকরা সুদূর চীন দেশে পাঠানো হয়। অনিসন্ধিৎসু আর চমক লাগানো এই গবেষণা বিষয়টি প্রকাশ করেছে “লাইভ সায়েন্স” আর লাইভ সায়েন্সের সূত্র ধরে দৈনিক মেইল।
এই হাড্ডি সংরক্ষিত ছিল যে মন্দিরে সে মন্দির আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়। প্রত্নতত্ত্বগবেষকদের একটি দল ২০১০ সালে চীনের নানজিং এ অবস্থিত ওই মন্দিরে খোজাখুঁজি করতে গিয়ে চন্দনকাঠের তৈরী ওই ‘মন্দির নমুনা’র সন্ধান পান। তা’হলে অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রশ্ন আসে নানজিং এর এই মন্দিরে প্রত্নতত্ত্ববিৎগনের খুঁজে পাওয়া ওই হাড় আসলো কিভাবে?
উচ্চ মার্গীয় গবেষক না হলেও সকল পাঠকেরই মনে এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, কেনো এবং কিরূপে মহামতি বুদ্ধের দেহাবশেষ হাজার ভাগে ভাগ করা হয়েছিল? প্রত্নতত্ত্ব গবেষকদের কাছেও এ এক বিশাল জটিল রহস্যময় তথ্য যা উদ্ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যাবে?
(তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স, অনলাইন মেইল, চীনা রেলিক্স যাদুঘর অবলম্বনে)