লন্ডন।। ভারত,বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শ্মরণার্থীদের জন্য বিমানে ও জাহাজে ত্রাণসমাগ্রী পাঠাচ্ছে। আর ভারতের আভ্যন্তরীন মন্ত্রনালয় রোহিঙ্গাদের নিয়ে শক্তভাবে সঠিক কথাই বলতে শুরু করেছে। এদিকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের দু’জন কর্মকর্তা কক্সবাজারে কাজ করছেন শ্মরণার্থীদের মোট চাহিদা যাচাই বাচাইয়ের জন্য। বলেছেন, নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবরটি প্রকাশ করেছে “কেচ.কম” অনলাইন।
দিল্লীতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর সাথে এক সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে ওই অনলাইনটি লিখেছে যে সৈয়দ আলী আশা করেন, মায়ানমারের উপর প্রভাব খাটিয়ে কাজ করার সম্পর্ক ভারতের আছে এবং সেভাবেই মায়ানমারকে চাপ দেয়ার বিষয়ে জাতিসংঘেও ভারত কাজ করবে। যা’তে এই বিপুল সংখ্যার রোহিঙ্গাদের ফেরৎ নেয়া ও রাখাইনে পুনর্বাসন নিশ্চিত হয়।
“কেচ.কম”এর সাথে ওই সাক্ষাতে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিঘ্ন কারণ ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত ১০দিনে ৩, ৭০,০০০ রোহিঙ্গা শ্মরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সবাই জানে যে, বেশ আগে থেকেই ৪,০০,০০০ রোহিঙ্গা শ্মরণার্থী যারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের জন্য এটি একটি খুব বড় আকারের সমস্যা। কারণ আমরা বড় আকারের বন্যার ধাক্কা এখনও সামাল দিয়ে চলেছি। দেশের ৩৫ ভাগ স্থলভূমি এখনও পানির নিচে রয়েছে।
মায়ানমার বলেছে “আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মি”র সন্ত্রাসী আক্রমনই রাখাইন প্রদেশে এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এরকম একটি জিজ্ঞাসার উত্তরে হাই কমিশনার আলী বলেন, “আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মি” এ নমুনার ক্ষমতা রাখে, এ আমি আগে শুনিনি। আমাদের কাছে এটি খুবই একটি আশ্চর্যের বিষয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘এআরএসএ’ কর্তৃক পুলিশ ষ্টেশন ও গ্রামে আক্রমনের খবর এসেছে কিন্তু তারা কেউই নিশ্চিতভাবে বলেননি কারা ওই লোকগুলো! কারণ তাদের সকলের মুখ ঢাকা ছিল। সুতরাং এটি নিশ্চিত নয় যে ওরা ‘এআরএসএ’ না-কি অন্য কেউ! তিনি আরো বলেন, ঘটনা যাই হোক এবং সন্ত্রাসী ঘটনা যারাই ঘটাক, আমরা কোন সন্ত্রাসী ঘটনাকে সমর্থন করি না। কিন্তু এই সন্ত্রাস বিরুধী অভিযানের অর্থতো এই নয় যে গণহারে নিজের নাগরীককে হত্যা করে তাদের বাড়ী-ঘর সব জ্বালিয়ে দেয়া হবে। সন্ত্রাস দমন আর নিরীহ সাধারণ নাগরীককে গণহারে হত্যা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অবস্থা এ দু’টোকে অবশ্যই আলাদা করে দেখতে হবে। এ দু’টো তো এক হতে পারে না।
আমরা মায়ানমার সরকারের কাছে দাবী করছি, তাদের এই রোহিঙ্গা নাগরীকদের ফিরিয়ে নেয়ার নিশ্চিত ব্যবস্থা করার জন্য যাতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে শান্তিতে নিরাপদে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশে তাই বলা আছে আর এই সুপারিশ মায়ানমার সরকার অনুমোদন করেছে। কিন্তু এর পরেও এই গণহারে হত্যা ও মহা বিতারণ ঘটছে।
আমাদের সহস্র সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রধান মন্ত্রী বলেছেন স্বল্পমেয়াদিভাবে এসব উদ্বাস্তুদের সম্ভব সকল ধরনের সহায়তা আমরা দিয়ে যাবো। ভারতসহ আন্তর্জাতিক সকল সম্প্রদায়ের কাছ থেকেও আমরা সহায়তা চেয়েছি এবং পাচ্ছিও। ভারত প্রচুর সাহায্য দিচ্ছে। এ পর্যন্ত পাওয়া সাহায্য সামগ্রী একটি গণহত্যার শিকার নিরীহ এই লাখো মানুষদের মধ্যে আমরা বন্টনও করে যাচ্ছি।
“কেচ.কম” এর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হাইকমিশনার আরও বলেন, বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ ইতিমধ্যেই এই এলাকা দেখে গেছে। তুর্কির প্রেসিডেন্টের স্ত্রী এসেছিলেন সাহায্য সামগ্রী নিয়ে। ইন্দোনেশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী এসেছিলেন। মালয়েশিয়ার একটি পরিদর্শক দল এসে দেখে গেছে এবং আজারবাইজান সাহাজ্য পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে কোন ঘাটতি নেই।
হাইকমিশনার আলী বলেন, পর্যাপ্ত সাহায্য সহায়তা আমাদের মূল কথা নয়। আমাদের মূল কথা, বিশাল পরিমানের এই বাড়ী-ঘর ছাড়া মানুষদের তাদের নিজ দেশে স্থায়ীভাবে ফেরত নিয়ে শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া যাতে তাদের দেশ-বিদেশে উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেড়াতে না হয়। উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুধু আমাদের নয় সারা এই অঞ্চলের জন্য সমস্যার কারণ হতেই পারে। ইতিমধ্যেই তাদের বেশ কিছুকে জম্মু ও কাশ্মীরে দেখা গেছে এবং ভারত সরকার এ বিষয়ে খুব সতর্ক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এখন আরো ৪,০০,০০০ জন যদি আমাদের অঞ্চলে আসে এবং এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যায়, তা’হলে এটি কোন সঠিক সমাধান নয়। বরং তাদের নিজ দেশে তাদেরকে শান্তি ও সন্মানের সাথে বসবাসের সুযোগ করে দেয়াই হবে উত্তম সমাধান। কিন্তু মায়ানমার সরকার এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।
ভারতের কাছে আপনারা কি আশা করেন(?) এমন এক প্রশ্নের জবাবে জনাব আলী বলেন, আমরা চাই, মায়ানমারের সাথে ভারতের যে খুব ভাল সৎপ্রতিবেশী সুলভ সুসম্পর্ক রয়েছে, ভারত সেই সম্পর্ককে কাজে লাগাক। ভারত মায়ানমারকে বুঝাক যে শুধু আমাদের সমস্যা দেখে নয় তাদের নিজেদের ভালোর কথা ভেবেই বিশাল সংখ্যক এই রোহিঙ্গাদের ‘কফিআনান কমিশন’ মোতাবেক তাদের নিজেদের বাড়ী-ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে নিবাসিত করুক। এতে সকলের নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত হবে।
দ্বিতীয়তঃ তাদের নিজেদের দেশে যদি রোহিঙ্গাদের নিশ্চিন্তে বসবাসের সুযোগ দেয়া না হয় তা’হলে এরা তাদের ভিন্ন যাবার চেষ্টা করবেই। আমাদের এলাকায় এমন বহু জায়গাও রয়েছে এবং এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে রাখার জন্য কিছু দেশও আছে এটি সকলেই আমরা জানি। সুতরাং আমাদের নিজেদের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভারতকে নিয়ে আমরা দু’দেশ মিলে যতশীঘ্র সম্ভব এ সমস্যার সমাধানে পৌঁছা আমাদের মঙ্গল।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সারা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। এ অবস্থায় কেনো আমরা নতুন করে একটি অগ্নিময় সমস্যার পথে হাটতে যাবো! আমি জানিনা এ হাটা আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাবে!
এমনিতেই রোহিঙ্গারা দেশছাড়া হয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সৌদি আরবে ২,০০,০০০, পাকিস্তানে ৫৭,০০০, বাংলাদেশে ৮,০০,০০০ এবং ভারতে ৪০,০০০ আছে। সারা দুনিয়ায় এদের ছড়িয়ে দিলে একটি মারাত্মক নিরাপত্ত্বা ঝুঁকির সৃষ্টি হবে।
এমতাবস্তায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় ভারত সুনির্দিষ্টভাবে গঠনমূলক অবস্থান নেবে বলেই আমার বিশ্বাস।