আমার অগ্রজ মিলু কাশেমের অকাল মৃত্যুতে
|
![]() সৈয়দ আবুল মনসুর লিলু |
আজ প্রায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমার অগ্রজ মিলু কাশেমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ লিখতে হবে, সেটা ছিল কল্পনাতীত। সব মানুষকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে, সেটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমার অগ্রজ মিলু কাশেমের এই আকস্মিক মৃত্যু আমার মত আরও অনেকেই আমরা মেনে নিতে পারছিনা।
আমার ভাই প্রয়াত মিলুকাশেম সপ্তাহ খানেক আগে বাসায় পা পিচলে পরে গিয়ে বাম পা ভেঙে ফেলেছিলেন। বাসায় ২/৩ দিন থাকার পর তিনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশন করতে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে চিকিৎসার জটিলতায় ৩/৪ দিনের মধ্যেই তিনি লাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসেন। তাই আমার ধারনা তার এই অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী হাসপাতালের ভুল চিকিৎসা।
সিলেটের রাগিব লায়লা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর। আমাকে অনেকে ফোন করে বলেছেন, ভাইকে এ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। এই হাসপাতালের নাকি অনেক বদনাম আছে। ততদিনে আমার ভাই লাইফ সাপোর্টে চলে গেছেন এবং অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। ফলে যা হবার তা -ই হয়েছে। একজন সুস্থ সবল মানুষ ৩/৪ দিনের মাথায় লাশ হয়ে বাসায় ফিরলেন। আমার ভাই পা ভেঙে যখন হাসপাতালে গিয়েছিলেন তখন ডায়াবেটিস ছাড়া তার অন্য কোনও অসুখ ছিল না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তার মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। আমার সম্পর্কিতভাই ডাক্তার যিনি বিদেশে কর্মরত, তিনি ভাইয়ের হাসপাতালে ফোন করে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছিলেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী বড় ভাইয়ের পায়ের ভাঙ্গা থেকে ইনফেকশন এবং টিটেনাস হয়েছিল। যার কারনে তিনি পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তাই আমার মত আরও অনেকেই মনে করেন, তাকে প্রথম থেকেই ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে তার বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল এবং এক পর্যায়ে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। তাই আমি মনে করি, আমাদের বড়ভাই মিলু কাশেমের এই অকাল মৃত্যুর জন্য পুরোটাই হাসপাতালের অবহেলা, অব্যবস্হাপনা এবং ডাক্তারদের অনভিজ্ঞতা দায়ী।
বড়ভাই (মিলু কাশেম) ছিলেন আমাদের দশ ভাইবোনের মধ্যে প্রথম এবং আমি দ্বিতীয়। আমাদের বয়সের ব্যবধান ছিল মাত্র দুই বছরের। তাই ছোটবেলা থেকেই আমরা দুজন একসাথে বন্ধুর মত বড় হয়েছি। আমাদের শৈশব কেটেছে সুনামগঞ্জে। আমাদের চার ভাইয়ের(মিলু, লিলু, হিরু, দিলু) জন্ম সুনামগঞ্জ শহরে। তখন সুনামগঞ্জ একটি মহকুমা শহর ছিল। সুনামগঞ্জ শহর আমার বাবার কর্মস্থল হওয়ার কারনে আমাদের শৈশব সেখানেই কেটেছে। আমার মনে পরে আমরা দুই ভাই এক সাথে তখন স্কুলে যেতাম এবং আমাদের বাবা অফিস থেকে আসার সময় আমাদের নিয়ে আসতেন। পরবর্তীতে আমরা সিলেট শহরে চলে আসি। আমাদের বাসা ছিল সিলেটের দাড়িয়াপাড়ায়, পুরাতন হাসপাতালের পাশে। আমাদের বাসার গেটের সাথেই ছিল পুরাতন মেডিকেল কলেজ যা পরবর্তীতে আবুসিনাহ ছাত্রাবাস হিসাবে মেডিকেল কলেজের আবাসিক হল ছিল। আমার মনে পরে, বড় ভাইয়ের সাথে তখন পুরাতন মেডিকেল কলেজের ভিতর দিয়ে আমরা দুই ভাই এক সাথে হেঁটে স্কুলে যেতাম। আমাদের স্কুলটি ছিল দরগা গেইটে(সুন্নত চৌধুরীর বাড়ীর ঠিক উল্টোদিকে)। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালের দিকে সম্ভবত আমরা আমাদের বতর্মান বাসায়(আম্বরখানা বড় বাজার) চলে আসি।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ কালীন সময়ে বড় ভাই পড়তেন রাজা জি সি হাই স্কুলে ক্লাস সেভেনে এবং আমি পড়তাম সিলেট দরগাহ গেইট পাঠশালায় ক্লাস ফাইভে। আমাদের বাবা আমাদেরকে ১ টাকা দিতেন রিক্সা দিয়ে স্কুলে যাওয়া আসার জন্য, কিন্তু আমরা রিক্সা দিয়ে না গিয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম। রিক্সা ভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে আমরা আইসক্রিম, আচার এবং চটপটি খেতাম। আমাদের ছেলেবেলায় সিলেটের রাস্তাঘাট এখনকার মত এত ব্যস্ত ছিলনা। তাই বাসা থেকে হেঁটে যেতে আমরা ভয় পেতামনা।
আমার আরও মনে পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি ও মিলু ভাই ছোট ভাইবোনদের নিয়ে বাংঙ্কারে লুকিয়ে থাকতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাবা মায়ের সাথে সিলেট থেকে পায়ে হেঁটে আমাদের গ্রামের বাড়ি সৈয়দপুরে গিয়েছিলাম। তখন গ্রামে থাকাকালীন সময় আমরা দু’জন আমাদের গ্রামের কাজিনদের সাথে এক সাথে মাছ ধরতে যেতাম এবং মাঠে খেলাধুলা করতাম। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে আমি যখন অটোপ্রমোশনে ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলাম বড় ভাইয়ের একই স্কুলে(রাজা জিসি হাই স্কুলে) তখন আমরা দুই ভাই এক সাথে স্কুলে যেতাম। তখনকার দিনে সিলেটের বন্দরবাজারে খুব নামী একটি রেস্টুরেন্ট ছিল “মর্ডান রেস্টুরেন্ট “। রেষ্টুরেন্টের মালিক ছিলেন আমাদের বাবার বন্ধু। সে সুবাদে প্রতিদিন আমরা দু’ভাই সেখানে আখনি বিরিয়ানি খেতে যেতাম, খাবারের বিল পরে আমাদের বাবা পরিশোধ করতেন। তখনকার দিনের মডার্ন রেস্টুরেন্ট আখনি বিরিয়ানির জন্য বিখ্যাত ছিল। যে স্বাদ আজও ভুলতে পারিনি। বাসায় আসার সময় আমরা দু’ভাই মিলে চটপটির সাথে লাচ্ছি শরবত পান করে পায়ে হেঁটে বাসায় আসতাম। সিলেটের বন্দর বাজারের হাসান মার্কেটের পাশে দূরগাকুমার পাঠশালার গেইটে বিহারী এক ব্যক্তি তার ছেলেকে নিয়ে খুব মজাদার চটপটি এবং লাচ্ছি শরবত বিক্রি করতো। সেই চটপটি এবং লাচ্ছি শরবতের স্বাদ এখনও ভুলতে পারিনি।
বড় ভাই কৈশোরে ছড়া কবিতা লেখালেখি করতেন। যার সুবাদে সিলেট তথা বাংলাদেশের লেখালেখি জগতের তখনকার অনেকের সাথে তাঁর জানাশোনা ছিল। আমাকেও তখন মিলুর ভাই হিসাবে সবাই চিনতো। লেখালেখির পাশাপাশি বড় ভাই ছিলেন একজন শিশু সংগঠক। সিলেটে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন “চাঁদের হাটের” প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন তিনি। এছাড়াও “কচিকাঁচার মেলা”, “শাপলা শালুকের আসর” সহ অসংখ্য শিশু সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে আমিও জড়িত ছিলাম। তখনকার দিনে আমাদের মত কিশোররা পড়লেখার পাশাপাশি সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল। কলেজে আসার পরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকতো। আমি বড় ভাইয়ের মত এ সবে এতটা সময় দিতে পারতামনা, তবে তাঁর কাজে তাকে সহযোগিতা করতাম।
বড় ভাই মিলু যখন একজন তরুণ ছড়াকার হিসাবে দেশব্যাপী পরিচিত ছিলেন, তখন দেখতাম তাঁর সাথে তখনকার সময়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতের অনেক প্রতিষ্ঠিত লোকেরা আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতেন। তাদের মধ্যে এই মুহূর্তে যাদের নাম মনে পড়ছে তারা হলেন, কবি দিলওয়ার, এনায়েত রসুল, আব্দুর রহমান, খালেক বিন জয়নুদ্দিন, প্রয়াত বুদ্ধদেব চৌধুরী, সাংবাদিক মাহবুব রহমান( যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী), প্রফেসার বিশ্বদেব চৌধুরী, আনোয়ার ইকবাল কচি, মরহুম হানিফ মোহাম্মদ, মরহুম সেলিম ভাই, কবি নুরুজ্জামান মনি, সেলু বাসিত, তুষার কর, প্রয়াত মাহবুব হক, প্রয়াত অজয় পাল, বিশিষ্ট ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, কবি ও সাংবাদিক আবু হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনকে সে সময় থেকেই বড় ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে আমরা জানতাম। পরবর্তীতে তিনি আমাদের পরিবারের আরেকজন ভাই হিসাবে পরিবারের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে উঠেন আর এখনও সে দায়িত্বপালন করে যাচ্ছেন। বড় ভাইয়ের সাথে তখনকার সময়ে আরও যারা লেখালেখি করতেন তাঁর মধ্যে আমার দুই সহদর কাজিন সৈয়দ নাহাশ পাশা( লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট সাংবাদিক) এবং সৈয়দ বেলাল আহমদ উল্লেখযোগ্য। নাহাস ভাইয়ের সাথে বড় ভাইয়ের বন্ধুত্ব ছিল এবং বেলালের সাথে আমার। মনে পরে, বড় ভাই, নাহাস ভাই এবং বেলাল মিলে সম্ভবত ৭৪/৭৫ সালের একটি দেওয়াল পত্রিকা বের করেছিলেন যেখানে আমার জীবনে প্রথম ছড়া ছাপা হয়েছিল। ছড়াটি আজও আমার মুখস্থ আছে। আরও মনে পরে, একই সময়ে বড় ভাই(তখন তিনি সৈয়দ আবুল কাশেম মিলু নামে লেখালেখির জগতে পরিচিত ছিলেন) এবং নাহাস ভাইয়ের যৌথ সম্পাদনায় একটি খুব সুন্দর এবং চমৎকার “আমরা ক’জন নবীন মাঝি’ নামের একটি সংকলন প্রকাশ করেছিলেন। যেখানে সিলেট এবং ঢাকার অনেক গুণী লেখকদের লিখা স্হান পেয়েছিল।
|
বড় ভাইয়ের আরেকটি শখ(হবি) ছিল, দেশ বিদেশের ডাকটিকিট এবং ভিউ কার্ড সংগ্রহ করা। একবার সিলেটে সাংস্কৃতিক সাপ্তাহ উপলক্ষে বই, ডাকটিকিট এবং দেশী বিদেশী ভিউ কার্ডের কালেকশনের উপর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল এবং বড় ভাইয়ের ষ্টোলটি পুরস্কার পেয়েছিল। আমাদের বড় ভাই মিলু কাশেম শুধু একজন লেখক, ছড়াকার বা সাংবাদিকই ছিলেননা; তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন মানুষ। ৭০ এবং ৮০ দশকের সিলেটের লেখালেখি জগতের আরও যাদের সাথে মিলু ভাইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সাহিত্য সভায় আমার পরিচয় হয়েছিল, তাদের মধ্যে রোকেয়া খাতুন রুবী, শাহেদা জেবু, হোসনে আরা হেনা এবং হীরা শামীম প্রমুখ।
যৌবনের প্রথমদিকে ১৯৭৭ সালে মিলু ভাই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারনে কিছুদিন তাকে জেল হাজতে থাকতে হয়েছিল। তার সাথে তখন জেলে ছিলেন আমার আরেক সহপাঠী বন্ধু, প্রতিবেশী সোলেমান আহমদ এবং আমাদের ছোটমামা সৈয়দ মুজিবুর রহমানসহ অরো অনেকে। জেনারেল জিয়ার শাসনামলে যখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, সেই সময়টিতে। তিনি যখন জেলে ছিলেন তখন আমাদের মা তাঁর বড় ছেলেটির জন্য খুব ভেঙে পড়েছিলেন। তখন আমাদের বাসায় তৎকালীন ছাত্রনেতা ম, আ, মুক্তাদির, প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ আনসার আলী, লোকমান আহমদসহ আরো অনেকে আমার মাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে কলেজ জীবনের শুরুতে সমাজ বদলের রাজনীতিতে আমি ও জড়িয়ে পড়ি।
এরপর ১৯৮১ সালের দিকে তিনি পশ্চিম ইউরোপের জার্মানিতে চলে যান ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং পারিবারিক চাপে। জার্মানিতে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রায় বছর দশেক ছিলেন। আমাদের জন্য তিনি জার্মান থেকে ডাকযোগে অনেক উপহার পাঠাতেন। আমরা সিলেট এবং ঢাকার ফরেন পোষ্ট অফিস থেকে সেগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে আসতাম। হল্যান্ড এবং জার্মানীতে তিনি প্রায় দশ বছর কাটিয়ে পরবর্তীতে স্হায়ীভাবে যখন দেশে ফিরে আসেন তখন আমি স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বাসিন্দা। জার্মানিতে থাকাকালীন সময় তিনি ইউরোপের অনেক দেশ ভ্রমণ করেন। সে ভ্রমণের উপর তাঁর লিখা কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছিল।
পরে দেশে ফিরে এসে তিনি বিয়ে করে সংসার শুরু করেন এবং সাংবাদিকতার পেশা শুরু করেন। আমার অনুজ অধ্যাপক সৈয়দ আবু জাফরের সম্পাদনায় আমাদের পারিবারিক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকার তিনি ছিলেন নির্বাহী সম্পাদক। পত্রিকাটির নাম ছিল “স্বচিত্র ক্রাইম”। এর পর এক পর্যায়ে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি সিলেট থেকে প্রকাশিত “দৈনিক কাজিরবাজার” পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন কিছুদিন। সাথে সাথে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিছু দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার মাধ্যমে আমি তখন ঢাকা এবং সিলেটের কিছু পত্রিকায় লন্ডন প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্বে ছিলাম।
আমাদের বাসায় বড় ভাইয়ের সংগ্রহে অনেক বই এবং দেশ বিদেশের ম্যাগাজিন ছিল। আমি এবং আমার আরেক অনুজ দিলু(ছড়াকার দিলু নাসের) এই সব বই পরেই লেখালেখির প্রতি আমাদের আগ্রহ জন্মায়। দিলু পরবর্তীতে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে লেখালেখির জগতে পরিচিতি লাভ করে। আমি পরিবারের ২য় সন্তান হওয়ায় পরিবারের হাল ধরতে বাবার ব্যবসা বানিজ্যে সেই কলেজ জীবনের শুরু থেকেই জড়িয়ে পড়ি। তাই লেখাপড়ার সাথে সাথে টুকটাক ব্যবসায়ও স্থান করে নেই। লেখালেখি করার মত সময় এবং সুযোগ তখন আর ছিলনা। তবে অনিয়মিত ভাবে লিখতাম। আমার মনে পরে, বড় ভাই যেদিন নতুন কোন বই বা ম্যাগাজিন কিনে বাসায় নিয়ে আসতেন তখন আমি প্রথম সেটা পরে শেষ করতাম। কিন্তু নিয়মিত লেখালেখি না করার কারনে হয়ত লেখালেখির জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। তবে এটা নিশ্চিত যে, তাঁর কারনে আজ দিলু দেশে বিদেশে(দিলু নাসের) লেখালেখির জগতে পরিচিতি লাভ করেছে।
আমার অগ্রজ সদ্য প্রয়াত মিলু কাশেমের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় গত দশ পনেরো বছর থেকে আমি অনিয়মিত ভাবে কিছু লেখালেখি করার চেষ্টা করি । মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেও আমাকে তিনি বলেছিলেন, “তোমার অনেকগুলি লেখা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়ে গেছে, আমাকে তুমি ঐ লিখাগুলি পাঠিয়ে দাও। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তুমি যখন দেশে আসবে তোমার সবগুলি ভ্রমন কাহিনী নিয়ে আমি একটি বই বের করবো।” আমি কোন কিছু লিখলে প্রথমে তাঁর কাছে পাঠাতাম ভূল ত্রুটিগুলো দেখে দেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে সব সময় বলতেন, “তুমি লেখালেখি বন্ধ করোনা, সময় পেলেই লিখবে।”
আমাকে আর লিখতে কেউ উৎসাহিত করবেনা। ফোন করে বলবেনা, “লিলু, তোমার ঐ লিখাটি ভাল হয়েছে”। আজ আমার বড় ভাই মিলু কাশেমের মত একজন প্রতিভাবান লেখকের এভাবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাতের জন্য সকলের কাছে দোয়ার প্রার্থনা জানাচ্ছি।