মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই সময়ের দাবী মিটাতে গিয়ে আমাদের সমাজ থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে অতীতে গহীন গহ্বরে। আর কোনদিন এগুলো ফির আসবে না। এ সবের একটি হলো গরুর গাড়ী। গরুর গাড়ী এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। নদী পথের যোগাযোগ দিয়ে এখনও কোনমতে চলে যাচ্ছে এমন সব এলাকায়, দূরের গহীন কোন গাঁয়ে একবিংশ শতাব্দির এ সময়ে, হয়তো এখনও এঁকে বেঁকে চলে গরুর গাড়ী। হয়তো কোন অচিন গাঁয়ের বঁধু এখনও কানপেতে বসে থাকে আব্বাসউদ্দীনের দরাজ সুরেলা কণ্ঠের সেই সুমধুর গান শুনার অপেক্ষায়-“ও কি গাড়িয়াল ভাই…।”
এমনও সময় ছিল এই গরুর গাড়ী ছিল সারা বাংলার মালামাল পরিবহনের একমাত্র উপায়। প্রাচীন বাংলার সওদাগরী ব্যবসাঘরের সামনে থাকতো লাইন বেঁধে গরুর গাড়ীর বহর। ঝড়-তুফান, গ্রীষ্ম-বর্ষা সকল ঋতুতেই এই গরুর গাড়ীই ছিল একমাত্র পরিবহন।
বাঙ্গালী সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে গরুর গাড়ীর প্রভাব অভাবনীয়। প্রাচীন বাঙ্গালী সমাজ জীবনে গরুরগাড়ী হয়ে উঠেছিল সংস্কৃতির বাহন। গরুরগাড়ী নিয়ে রচনা থেকে শুরু করে গান-গল্প কত যে লিখা হয়েছে তা বেহিসেব। দূর পল্লীগাঁয়ে সদ্য বিয়ে হয়ে আসা গৃহবঁধুর সেই অস্থিরতা, উদ্বেগ নিয়ে গানের ছত্রে ছত্রে ভেসে বেড়ায় বাঙ্গালী মানস।
সবচেয়ে অবাক হবার মত বিষয় যে লেখক কবি সাহিত্যিকেরা তাদের লিখায় গাড়ীয়াল ভাইয়ের অপেক্ষায় গৃহবঁধুর উতাল-পাতাল মনের উদ্বেগই কেবল লিখে গেছেন। কিন্তু কোথায়ও নিরীহ গোবেচারার অশ্রুজলে ঘাঁ হয়ে যাওয়া গোবাদিপশুটির চোখের খবর কেউ রাখেন নি। কষ্ট আর যন্ত্রনায় চক্ষুনেত্রের নিচের দিকে ঘাঁ হয়ে যাওয়া ক্ষত কিংবা কাঠের বা বাঁশের সোয়ারের ঘর্ষনে গরুর কাঁধে মাছি ভন ভন পঁচনধরা অবস্থা কারো চোখে পড়েনি। এ এক অজ্ঞাত অব্যাখ্যাত বিষয় রয়ে গেছে আজো অনুদ্ঘাটিত।