অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগোচ্ছিলেন ইয়াসিন ব্যাপারি। বয়স ৪৬। কিন্তু এর মধ্যেই ২৮টা বিয়ে সেরে ফেলেছেন। প্রায় প্রত্যেক স্ত্রী-ই এক বার বা একাধিক বার তাঁর সন্তানের মাও হয়েছেন। কিন্তু দুরন্ত গতিতে এক বিয়ে থেকে আর এক বিয়ের দিকে এগোতে থাকা ইয়াসিন ব্যাপারির পথ কেউই আটকাতে পারেননি। পা কাটল পচা শামুকে। ২৫তম স্ত্রীয়ের দায়ের করা যৌতুক মামলায় ২৭তম স্ত্রীয়ের বাড়ি থেকে সোমবার গ্রেফতার হলেন ইয়াসিন।
বাংলাদেশের তালতলি উপজেলার গেন্ডামারা গ্রামের জয়নাল আকনের বাড়ি থেকে পুলিশ ইয়াসিনকে গ্রেফতার করেছে। তালতলি থানার ওসি কমলেশ হালদার বলেছেন, “ইয়াসিন তথ্য গোপন করে ২৮ বার বিয়ে করেছেন বলে শেফালি আখতার তানিয়া অভিযোগ করেছেন। তবে ইয়াসিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কেবল দুটো বিয়ের কথা স্বীকার করছেন।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইয়াসিনের ২৫তম স্ত্রী শেফালি আখতার তানিয়ার বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। ইয়াসিনের বাড়িও খুলনাতেই, তবে রূপসা ঘাট এলাকায়। বছর পাঁচেক আগে ইয়াসিন তাঁকে বিয়ে করেন বলে শেফালি পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে সে সময় ইয়াসিন নিজের অতীত সম্পূর্ণ গোপন রেখেছিল বলে শেফালির দাবি। বিয়ের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শেফালি আখতার তানিয়া জানতে পারেন যে তিনি আসলে তাঁর স্বামীর ২৫তম স্ত্রী। তত দিনে অবশ্য ইয়াসিন-শেপালির একমাত্র কন্যাসন্তান পৃথিবীতে এসে গিয়েছে।
শেপালি আখতার তানিয়া পুলিশকে জানিয়েছেন, ইয়াসিন কাজের অজুহাতে বেশ কিছু দিন করে বাড়ি ফিরতেন না। ইয়াসিন আসলে কাজ করতেন না, পরবর্তী বিয়ের বন্দোবস্ত করতেই বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে যেতেন বলে শেফালির দাবি। কারণ বছর পাঁচেক আগে শেফালিকে বিয়ে করার পর থেকে এ পর্যন্ত ইয়াসিন আরও তিনটি বিয়ে সেরে ফেলেছেন। শেফালি আখতার তানিয়ার পরে পিরোজপুর জেলার রাজাপুর সদর উপজেলার মাটিভাঙ্গা এলাকার পুতুল। তার পরে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি তালতলি উপজেলার গেন্ডামারা এলাকার রুমানা আখতার। সব শেষে নিজের এলাকা রূপসার মেয়ে ফাতেমাকে।
পুলিশকে শেফালি জানিয়েছেন, ইয়াসিনের সব বউয়ের নাম-ঠিকানা তিনি জানতে পেরেছেন। প্রায় প্রত্যেক স্ত্রীয়ের গর্ভেই যে ইয়াসিন এক বা একাধিক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং বেশ কয়েক জন স্ত্রী যে এখনও সন্তানসম্ভবা, সে খবরও পুলিশকে শেফালিই জানিয়েছেন। ২০১৬-র ২৯ সেপ্টেম্বর শেফালি যৌতুক নিরোধ আইনে ইয়াসিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার প্রেক্ষিতেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সোমবার অবশেষে ২৭তম স্ত্রী রুমানার বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইয়াসিন ব্যাপারির ছোট ভাই এসকান্দর ব্যাপারি বলছেন, “আমি পাঁচ’ছটা বিয়ের খবর শুনেছি। এতগুলোর কথা জানি না। সে বাড়িতে আসে না। তবে সে নিয়মিতই এ রকম করে সেটা জানি। কিছু বলতে গেলেই মারধর করতে আসে।” (আনন্দবাজার থেকে)