হারুনূর রশীদ
এ দুনিয়া আদিতে কেমন ছিল! এখন যেভাবে আছে এনমুনায়ই ছিল না-কি অন্য কোন নমুনায়। বাংলাদেশ-অষ্ট্রেলিয়ায় সীমান্ত ছিল! না এমন চিন্তা কোন পাগলামো নয়। মানব মনের গভীরে এমন জানার আগ্রহ থাকতেই পারে। চিন্তাশীল মানুষের জানার এমন আগ্রহ থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শুধু চিন্তশীল কেনো, আমরা সাধারণ মানুষের মাঝেও এমন জিজ্ঞাসা ঘুরপাক খায়। যদিও গবেষক বিজ্ঞানীগন সময়ের একটি ঠিকানা দিয়েছেন, এরপরও বলতে হয় সে ঠিকানা অনুমানের ঠিকানা। সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না।
‘মাইক্রোসপ্ট সংবাদ’(এমএসএন) এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজার চেষ্টা করতে গিয়ে একটি মানচিত্র প্রকাশ করে দেখাতে চেয়েছে অনাদি আদিতে এ দুনিয়ার রূপ কেমন ছিল! তাদের তৈরী ওই মানচিত্রে দেখিয়েছে যে ইউরেশিয়া, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশ, এন্টার্কটিকা ও অষ্ট্রেলিয়া তথা সারা বিশ্ব দুনিয়া ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে একত্রে ছিল। গবেষক আর বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন প্রায় ৩৩৫ মিলিয়ন বছর আগে আমাদের এ পৃথিবী পৃথক পৃথক আদলে থেকে যুক্তছিল। পরে, আজ থেকে প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয় তার পৃথক হওয়া। ছোট ছোট খন্ডে ভাগ শুরু হওয়ার সময় পৃথিবীর অবস্থান বিজ্ঞানীদের মতে দক্ষিণ গোলার্ধে ছিল। সময়ের বিবর্তনে কালের ধারায় ধীরে ধীরে শুরু হয়েছিল আগলে যাবার নিয়তি যাত্রা!
চিন্তার অসীম ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তার মাঝে শিল্পীর কল্পনা ভাব-পরিমাপের বাইরে, অপরিসীম। এ না হলে শিল্পী হওয়াও যে যায় না। শিল্পী তার কল্পনায় যেমন আল্লাহ’কে মানবের রূপে দূত বানিয়ে নামিয়ে আনতে পারে ধূলোর ধরায়। তেমনি তার কল্পনার ফানুস হাতি হয়ে মঙ্গলগ্রহেও যেতে পারে। তেমনি এক অংকনশিল্পী হলেন মাসিমো পিয়েত্রবন, পৃথিবীর সেই আদিম সময়ের এক ছবি একেঁছেন ভিন্ন ভিন্ন দেশের বর্তমান অবস্থা ও মানচিত্রের অবলম্বনে। অবশ্য এটি নিছক একজন শিল্পীর কল্পনার একখানা চিত্র বা চিত্রকল্প! কখনও দুনিয়া এমন হবে বিষয়টি তেমন কিছুই নয়। শুধুমাত্রই মহাপরাক্রমশালী এক শিল্পীর মনোজগতের কল্পনার দৌড়-ঝাঁপ! হ্যাঁ, শিল্পীর এমন ভাবনাই চাই। না হলে শিল্পী হওয়া যায় না।
শিল্পী মাসিমো পিয়েত্রবনের কল্পনার সেই মানচিত্রে বাংলাদেশও আছে। তার চিন্তার প্রখরতা যেকোন দর্শকের মাঝে মুগ্ধতা এনে দেবে। মুগ্ধ নয়নে দেখার ইচ্ছে হবে। খুবই নিখুঁত এক চিন্তার প্রতিফলন তার এই কল্পনার মানচিত্রাঙ্কন। অত্যন্ত প্রখর এক চিন্তাশক্তি দিয়ে শিল্পী একেঁছেন পুরো মানচিত্রটি। খুবই মনোনিবেশে তিনি একেঁছেন বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ভারত, নেপাল ও ভুটান। দক্ষিনে অষ্ট্রেলিয়া। শিল্পীর কল্পনার সেই ভূ-মানচিত্রে মহাশক্তিধর বৃটেন কোন দ্বীপদেশ নয়। তিনি দেখিয়েছেন বৃটেনের সীমান্ত ছিল দক্ষিনে ফ্রান্স, উত্তরে নরওয়ে আর পশ্চিমে আয়ারল্যান্ড। ধ্যানী সাধক সেই শিল্পী চোখ বোঝে দেখেছেন আমেরিকার পূর্বে ছিল মরক্কো, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল ও গিনিবিসাও, দক্ষিনে কিউবা আর অনেকটা পশ্চিমেই মেক্সিকো! তার দুরন্ত চিন্তায় এসেছে ক্যানাডার সীমান্তে ছিল ডেনমার্ক, পর্তুগাল এবং মরোক্ক আর স্পেনের সীমানা রয়েছে আলজিরিয়ার সাথে। ইটালির সীমান্তে রয়েছে তিউনিশিয়া, লিবিয়ার রয়েছে গ্রীসের সাথে আর সমুদ্র সৈকত সমৃদ্ধ ব্রাজিলের কোন সমুদ্র লাগুয়া কিছুই ছিলনা বরং ব্রাজিলের চারদিক ঘিরে ছিল বর্তমানের নামবিয়া ও লাইবেরিয়াসহ বহু রাষ্ট্র। তার সেই সাধক চোখ দেখেছে চীন ও তিব্বত একই দেশ তাদের সীমান্ত অষ্ট্রেলিয়ার সাথে আর অষ্ট্রেলিয়ার পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে এন্টার্কটিকা, আবার এই এন্টার্কটিকার সাথে সীমান্ত রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মোজাম্বিকের। সবচেয়ে দেখার বিষয় শিল্পী মাসিমো পিয়েত্রবন ইরাণ ও আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের পাশে দেখতে রাজী নন। কারণ তার একমাত্র নিজস্ব! সবকিছু মিলিয়ে তার কল্পনার যৌক্তিকতার প্রশংসাই করতে হয়।