আব্দুল ওয়াদুদ।। “প্রয়োজনে জান দেবো তবু বালু নিতে দেবোনা”। মৎসজীবী সম্প্রদায় নেতারা এমন উক্তি এনে প্রতিবাদ সভাসহ নদী পাড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। নদী ভাঙ্গন থেকে গ্রাম বাচাঁতে তাদের সাথে একাত্বতা পোষণ করে জড়ো হয়েছেন রাজনীতিদ ও নানান পেশার মানুষ। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী’র কেশরপাড়া এলাকায় ৪ যুগের পুরোনো বাজার অংশে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বালির স্তুপ লেগেছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে স্তুপ লাগা এ বালির পাড়ে বাজার গড়ে উঠায় স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন “চড়ারবাজার”। ওই এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সুরিখাল,যোগীকোনা ও কেশরপাড়া গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ বসতি গড়েছেন। অতিথে চড়ারবাজার এলাকা থেকে বালিখেকোরা বালি নেবার চেষ্টা করেছে ৫/৬বার। কিন্তু নদী পাড়ের স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তুলতে পারেনি। কুশিয়ারা নদীতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর থেকে রাজনগর উপজেলার বকশিপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এলাকা জুড়ে শর্ত-সাপেক্ষে বালি তুলার বন্দোবস্ত দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। “শর্তে বলা হয় কোন স্থাপনা কিংবা জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি করে কোন অংশ থেকে বালু তোলা যাবেনা”।
মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দীন আহমদ এক ঠিকাদার এখানে বালু তুলার জন্য গেল কদিন আগে ড্রেজার মেশিন স্থাপন করেন। এতে স্থানীয় মৎসজীবী ও কয়েক গ্রামের লোকজন বাধা দেন। স্থানীয়রা একাট্টা হয়ে বলেন, “প্রয়োজনে জান দেবো তবু বালু নিতে দেবোনা”। পরবর্তীতে স্থানীয়দের আয়োজনে বালু তুলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা গেল বুধবার (০৩অক্টোবর) চড়ারবাজারে অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তব্য দেন, সাবেক রাজনগর উপজেলা পরিষদ’র ভাইস চেয়ারম্যান মাওঃ আহমদ বিলাল, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রিয় সদস্য সাইফুল ইসলাম ছফু, স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবীর, আমীর আলী, আবুল কালামসহ অনেকে। এসময় জেলেরা জানান, চড়ারবাজার এলাকায় চড়া থাকার কারণে ৮-১০টি “মাজাল” দিয়ে প্রায় দেড় হাজার মৎসজীবী জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এখান থেকে যদি বালু উত্তোলন করা হয় তবে চড়া ধসে যাবে নদী গর্ভে। জাল বেয়ে মাছ ধরতে পারবেন না তারা।
জানা যায়, রাজনগর উপজেলার কেশরপাড়া মৌজার কুশিয়ারা নদী (১২১৭ দাগে) থেকে বালু-পলিমাটি তুলার জন্য ২০১৭ সালে ড্রেজার মেশিন স্থাপন করেছিলেন সদর উপজেলার উদারাই গ্রামের আশরাফ উদ্দীন আহমদ। ওই সময়ে তৎকালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের নির্দেশে স্থাপনকরা ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। স্থানীয় তশহীলদার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এসময় তাকে যথাযথ
কাগজপত্র দেখাতে বললেও তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫/৮/২০১৫ ইং তারিখের ১৬১ নং স্মারকের একটি পত্র দেখান। এতে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বালু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে দেখা যায়। তিনি সম্প্রতি বালু উত্তোলনের লিজ নিয়ে এলে চড়ারবাজারে এসে বাধার মুখে পড়েন। সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, চড়ারবাজার এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হলে পাশ্ববর্তী সুরিখাল, যোগীকেনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর ও নদীর পাড়ের সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার মুসলিমাবাদ(ডেকাপুর), আমজুর, হাড়িয়াগাঁওসহ প্রায় ১০/১২ গ্রামে নদী ভাঙ্গন দেখা দিবে।
মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দীন আহমদ বলেন, আমি লিজ নিয়েছি। সরকারের কোষাগারে টাকা জমা দিয়েছি। লিজকৃত এলাকার কয়েকটি স্থানে খনন হয়েছে। এখানে এসে বাধা দেয়া দেয়া হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী বলেন, তালুকধার এন্টারপ্রাইজকে বালু তুলতে ১০/১২টি শর্ত দিয়ে লিজ দেয়া হয়েছে। আমরা নদীতে সার্ভে করবো। সার্ভেতে যদি কোন যায়গা ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া যায়, তবে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবেনা। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নেগম নাজিয়া শিরীন জানান, চড়ারবাজারে বালু তুলার বিষয়টি তিনি জেনেছেন।
স্থানীয় ইউএনও’র মাধ্যমে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
ওয়াই ফাই ছাড়া কিভাবে ইন্টারনেটে নিজেকে টিকিয়ে রাখা যায়। জেনে নিন। |