হারুনূর রশীদ
সে পঞ্চাশ বছর আগের কাহিনী। আমরা সকলেই তখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েছি। আমি সেসময় মহাবিদ্যালয়ের শেষ পাঠ স্নাতক পাশ করে নিয়েছি। বাকীদের প্রায় সকলেই উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে মহাবিদ্যালয়ে দ্বাদশ-ত্রয়োদশ বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। আমাদের দেশে তখন চলছে ইংরেজদের বানানো কল্পিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ। কিছুসংখ্যকের মতে সেটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধ। সে সময় আমাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাযুদ্ধের ভেতরের মর্মার্থ বুঝতাম না। দু’টোকেই আমরা এককরে দেখতাম।
যাত্রী আমরা ১৩জন। একটি সামরিক ট্রাকে চড়ে রওয়ানা দিয়েছি। গন্তব্য নিজেদের দেশের যাওয়া। একটু খোলাসা করে বলাই ভাল। এই দেশে যাওয়া অর্থাৎ ভারতে যুদ্ধের প্রশিক্ষন শেষে দেশের ভেতরে চোরাগুপ্তা যুদ্ধের জন্য ফিরে যাওয়া। আমরা সকলেই বয়সে বিংশ সংখ্যা পাড় করেছি। গাড়ীতে আমি, ওহাব, মুকিত, রাণু, শহীদ, সুদর্শন, খোকন, রব, সফিক, মতিন ও সাব্বির আহমদ মোমেন।
যতদূর আমার মনে আছে ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল আমি, সিলেটের আওয়ামীলীগ স্বেচ্ছাসেবক নেতা প্রয়াত আখতার আহমদ আমার কাছে থাকা একখানা লক্কড়-ঝক্কড় ধরনের জিপ গাড়ী যোগে ভারতে প্রবেশের নিমিত্তে শ্রীমঙ্গল থেকে গভীর রাতের দিকে ভানুগাছের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। রওয়ানা হওয়ার কিছুক্ষন আগে আমরা দু’জনের সাথে এসে যোগ দেন মাহমুদুর রহমান(তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে আয়কর উকীল)।
আমরা সামরিক প্রশিক্ষন সমাপ্ত করে রাতাছড়া বিশ্রাম তাবুতে দেশের ভেতরে ঢুকার দিন গুণছিলাম। মাসটা তখন আগষ্ট। একদিন আমাদের শেষ বিদায় জানাতে আসলেন আমাদের নেতা আসম আব্দুর রব ও আব্দুর রাজ্জাক। তাদের সাথে ছিলেন সিলেটের আক্তার আহমদ। বেশ কিছুক্ষন আমাদের সাথে সময় কাটালেন রাজনৈতিক কিছু গল্প-ইতিহাসের মধ্য দিয়ে। আমাদের বিশেষ করে আমার খুব ভালই লাগলো। গল্পের শেষ দিকে আমাদের বুঝালেন দেশের ভেতরের বিভিষিকাময় আসল অবস্থা। দু’জনই বললেন দেশের ভেতরে আমাদের ৩পক্ষ শত্রু। প্রথম পক্ষ পাক-সামরিক তস্করেরা। দ্বিতীয় পক্ষ পাকিদের সহযোগী রাজাকার- আলবদরেরা। তৃতীয় পক্ষ চরম বাম দলের সদস্য সমর্থকরা যারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে স্বীকার করে না বরং ধনিক শ্রেণী ও আন্তর্জাতিক ষঢ়যন্ত্রের যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করে আমাদের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে এরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে যা প্রকারান্তরে পাকি বাহিনীকেই সহায়তা করছে।
|