মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।। মনুনদী সেচ প্রকল্প’র অধীনে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরের ২৪ হাজার ১শ ৭৮ হেক্টর এলাকার ১৯হাজার ২শ ২৮হেক্টর চাষযোগ্য জমির বন্যা নিয়ন্ত্রন, নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা প্রদান করার লক্ষ্য নিয়ে কাউয়াদীঘি হাওরের কাশিমপুর পাম্প হাউজে দ্বিতীয় বারের মত স্থাপন করা হয়েছে নতুন পাম্প মেশিন। পূনরায় নতুন মেশিন স্থাপন করায় স্থানীয় কৃষকরা বেজায় খুশি। এর আগে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ যাবৎ এই হাওরে পানি সেচের অভাবে জলমগ্ন হয়ে থাকতো প্রায় বারো মাস। এতে কৃষকেরা কৃষি ক্ষেতে তেমন একটা লাভমান হতে পারেন নাই। এবার নতুন পাম্প স্থাপনের পর বিশাল এই হাওরে আগের মত পানি নাই। পাহাড়ি ঢল অথবা বৃষ্টির পানি হাওরে ঢুকে পড়লে পাম্প মেশিন দিয়ে সেচ করে কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেয় পাউবো কর্তৃপক্ষ। এর আগে ১৯৭৫-৭৬ সালে পাম্প হাউজ স্থাপন করা হয়। পাউবো প্রকৌশলীরা বলছেন এ মেশিনগুলো স্থাপন হওয়াতে প্রকল্পের আওতার সকল কৃষকেরা নির্বিঘ্নে কৃষি ক্ষেত করতে পারবে। বন্যা কিংবা বৃষ্টির পানি হাওরে লেগে থাকলেও নতুন সংযোগের কারনে সহজে সেচ করে কুশিয়ারা নদীতে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।
এদিকে রুপা আমন চাষাবাদ করতে কাউয়াদীঘি হাওর এলাকার কৃষকেরা জমি আবাদ করতে ব্যস্থ সময় পাড় করছেন। তবে হাওর এলাকার সিংহভাগ যায়গায় পানি এখনো লেগে থাকায় রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ, ফতেপুর ও সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কৃষকদের দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি।
ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য ও বেড়কুড়ি(মোল্লাবাড়ি) গ্রামের বাসিন্দা হাজি মোঃ ইসমাঈল আলী বলেন, “মেঘে পানি বাড়ের অইলে মিশিনে হিছের না(সেচ করছে না)। জমিন পানিতে তল অইগেছে। দুই-চাইর দিনের মধ্যে হাইল(সাইল) ধানর চেরা রুয়াইমু।” তিনি তার ভাষায় আরো বলেন, “এবার ১২কিয়ার হাইল জমি ক্ষেত করমু। আরো ১০-১২কিয়ার জমি পানির তলে আছে এখনো। তারা(পানি উন্নয়ন বোর্ড) হিচলে(সেচ করলে) ক্ষেত করমু”। তিনি আরো জানিয়েছেন, ফতেপুর ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী শাহাপুর মৌজায় প্রায় ৫শ কিয়ার সাইল জমি এখনো পানির নীচে। এছাড়াও ইউনিয়নের গন্দিপুর, ভেড়িগাঁও, ছোয়াব আলী, মুনিয়ার পাড়, রামপুর, গালিমপুরসহ অনেক এলাকায় জমি তলিয়ে যাওয়ায় ধানের চারা রূপন করতে পারছেনা কৃষকেরা।
পানি সেচ করে কুশিয়ারা নদীতে দ্রুত নিস্কাসন করা হলে এসব এলাকায় সাইল(রূপা আমন) ক্ষেত করা যায়। বেড়কুড়ি(মোল্লাবাড়ি) গ্রামের বাসিন্দা ও মৌলভীবাজার জজ কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেড়কুড়ির পূর্ব ও দক্ষিণ এলাকায় এবার ১০কিয়ারের মত জমিতে আমন ধানের চারা রূপন করা যাবে। অবশিষ্ট ৫ থেকে ১০একর জমি পানির নীচে তলিয়ে আছে এখনো।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার অন্যবারের চেয়ে কাউয়াদীঘি হাওরে পানি একটু কম। জলাবদ্ধতা তেমন একটা সমস্যা বলে মনে হচ্ছেনা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিধ কাজী লুৎফুর বারী সোমবার, ৩০জুলাই বলেন, গত বারের চেয়ে এবার কাউয়াদীঘি হাওরে ৩ফুট পানি কম দেখা যাচ্ছে। হাওরের উচু এলাকায় রূপা আমনের মধ্যে ৪৯বিআর ২২ জাতের ধান রূপন করা হচ্ছে বেশী। জেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ৯৬ হাজার ২শ ৪৬ হেক্টর। এ পর্যন্ত চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার ২শ ৭৫ হেক্টর জমি। কাউয়াদীঘি হাওরে আমন চাষের পরিমান ২শ ৯৩ হেক্টর জমি এবং জেলায় রূপা আমন চাষে জমির পরিমান ৯৬হাজার ৪শ ৩৫হেক্টর।
এদিকে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নতুন ৮টি পাম্প মিশিন চালু হয়েছে। হাওরের পানি সেচ করতে ৫-৬টি মিশিন চালু থাকে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর হান্নান বলেন, শুনেছি ধানের চারায় পানি উঠেছে। তবে নতুন করে পাম্প মেশিন চালু হওয়াতে কৃষকেরা উপকার পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কাউয়াদীঘি হাওরে পানির পরিমান ৮.১মিটার ও কুশিয়ারা নদীতে ৮.২ মিটার। নদীতে পানির পরিমান বেশি থাকায় সেচ করে হাওর থেকে পানি নিস্কাসন করতে হচ্ছে।