খাবার জোগার, তৈরীর ধরন-ধারন ও তা গ্রহনের নমুনার মাঝেই মানব সংস্কৃতির পরিচয়। আশ-পাশের সামগ্রিক পরিবেশ তার দ্বিতীয় শর্ত। একই দেশের একই মানুষ, ভাষা সংস্কৃতিও একই কিন্তু এরপরও গভীর মনোনিবেশে চাইলে দেখা যাবে ঢাকায় অভিজাত এলাকায় বসবাসকারীগনের চেহারা বেশ একটা ফর্সা ফর্সা ভাবের। বিপরীতে ২-৩ প্রজন্ম ধরে বিলেতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের দিকে চাইলে দেখা যাবে তাদের চেহারায় কোন পরিবর্তন নেই। যে চেহারা নিয়ে তারা ২সিড়ি আগে এদেশে এসেছিলেন সেই একই চামড়া নিয়ে তারা এখনও আছেন। ৩য় প্রজন্মের চেহারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে তাও খুব কম। বরং ঢাকায় বসবাসকারীদের চেহারায় একটু বেশী ফর্সাভাব আর লণ্ডনের বাঙ্গালীদের (সব নয় অবশ্যই) চেহারায় কালচে ভাব সুস্পষ্ট!
জাতিসত্ত্বা ব্যাকরণ ঘাটাঘাটি না করেও অনেকটা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে(knowledge from observation) বলতে পারা যায় যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট প্রভৃতি বড় বড় শহরে যারা বসবাস করেন তাদের জীবনধারা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাহাড়ে বসবাসকারীদের জীবনধারা ও সমতলে বসবাসকারীদের জীবনধারায় তফাৎ রয়েছে বিস্তর। বাংলাদেশে, মূলগতভাবে পাহাড়ে বসবাসকারীদের খাদ্যাভ্যাস ও সমতলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও তফাৎ রয়েছে। পাহাড়ের মানুষ ফল-মূল খেতে ভালবাসে। সমতলের মানুষ মাছ-ভাতে বেশী আগ্রহী। পাহাড়ে মাছের দূষ্প্রাপ্যতা যেহারে আছে সমতলে ফলমূলের দূষ্প্রাপ্যতা সমানহারে না হলেও কাছাকাছি। শহুরে মানুষের জীবন চর্চ্চা আর পাহাড় কিংবা গ্রামীন মানুষের জীবনচর্চ্চায় অনেক কিছুতেই কম-বেশী আছে।
শহুরে জীবন আনন্দ-বিনোদনী ঢংএর জীবন চর্চ্চায় অভ্যস্ত। অন্যদিকে, পাহাড় বা গ্রামীণ জীবন ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতি চর্চ্চায় আগ্রহী বেশী। শহুরে সমাজে জ্ঞানলোক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বেশী। অন্যদিকে পাহাড়ী বা গ্রামীন জীবনধারায় জ্ঞানচর্চ্চার মূলকেন্দ্র মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয় ভিত্তিক। গ্রামে স্কুলের পাশাপাশি মাদ্রাসা রয়েছে। স্কুলের পরিমাণ বেশী থাকার পরেও অধিকাংশ অভিবাবক সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠাতে আগ্রহী বেশী। আমাদের গ্রামীণ বা পাহাড়ী সমাজ এখনও কৃষিভিত্তিক। অন্যদিকে শহুরে সমাজ শিল্প ও সেবা ভিত্তিক। শহুরে জীবন বেশী কর্মব্যস্ত পক্ষান্তরে গ্রামীণ সমাজ ধীর গতির জীবন ব্যবস্থা থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। এই ধরনের আরো বহুবিদ কারণে শহুরে জীবনের চেহারা ও চর্ম, ভিন্ন পক্ষের চর্ম-চেহারা থেকে অনেকটাই আলাদা। মূলতঃ বৃহৎ বাংলার মানুষের চামড়া পাতলা ও রং কালোমত। অবশ্য বঙ্গের পূর্বাঞ্চলের মানুষের চেহারার রংয়ের বিভিন্নতা খুব তীব্র। একটি বহুমিশ্রিত ভাব বিরাজমান।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো বাংলাদেশ উষ্ণবিষুবীয় অঞ্চলের দেশ। সহজ কথায় গরমের দেশ। সেই গরমে শরীরের চামড়ার রং আর ঠাণ্ডার দেশ বৃটেনে বসবাসকারী একই বাংগালীর চামড়ায় একটা ভিন্নতা লক্ষ্যনীয়। কৌড়া থেকে ছবি সংগৃহীত।
হারুনূর রশীদ
, লণ্ডন, শুক্রবার
৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৮সাল