মৌলভীবাজার: পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পর কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে এবার কালবৈশাখী ঝড়ে তিনটি ইউনিয়নে ৮০টি আধা কাঁচাঘর সম্পূর্ণ ও দু’শতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টিতে বহু ঘরের টিন ছিদ্র, চা গাছের কুঁড়ি এবং আম, লিচু ও কাঁঠালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শমশেরনগর চা বাগানের ফাঁড়ি বাগান বাঘিছড়ায় মাটির দেয়াল চাপায় এক ব্যক্তি আহত হয়েছে। গাছ-গাছালি ও ২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। শুক্রবার রাত সাড়ে দশটায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলে এ কালবৈশাখী বয়ে যায়।
এলাকাবাসীর উল্লেখে ইত্তেফাক লিখেছে, কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে শুরু হয় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে কাঁচা ও আধা কাঁচা ৮০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। দুই শতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পতনঊষার ইউনিয়নে ৩০টি ঘর সম্পূর্ণরূপে এবং শতাধিক ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টি দু’শতাধিক ঘরের চাল ঝাঁজরা হয়ে গেছে। মুন্সীবাজার ইউনিয়নে প্রায় ২০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। অর্ধবিধ্বস্ত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক ঘর। শিলাবৃষ্টিতেও টিনের চাল ঝাঁজরা হয়ে গেছে। গাছ-গাছালি ভেঙে পড়েছে। শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাফিজুল হক জানান, এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও চা বাগানের ৩০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। অর্ধশতাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। চা বাগানের ফাঁড়ি বাঘিছড়া বাগানে মাটির দেয়াল চাপায় রাম কুমার মুন্ডা (৪৫) আহত হয়েছেন। তাকে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কমলগঞ্জ পৌর এলাকায়ও ২০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝড়ের সাথে ভারী শিলাবৃষ্টিতে শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ফল আম কাঁঠাল ও লিচু ঝরে পড়েছে। চা বাগানগুলোতে চায়ের নতুন কুঁড়িও ঝরে পড়ে। চা বাগানসহ কয়েকটি উঁচু স্থানে বোরো ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মৌখিক তথ্যে এ পর্যন্ত ৬৫টি ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক দেড় শতাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন জানান, ঝড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক লাইনের ৪টি লাইন খুঁটি থেকে ছিটকে পড়েছে। শরীফপুর ইউনিয়ন এলাকার চাতলাপুর চা বাগান ও নছিরগঞ্জ এলাকায় ২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। আড়াই শতাধিক স্থানে তার ছিঁড়ে পড়েছে। কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে এপ্রিলের প্রথম দফায় পাহাড়ি ঢল, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কেওলার হাওরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে কালবৈশাখী ঝড়ে আবারও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।