হারুনূর রশীদ॥
সমস্যা আর সমস্যা।মানুষের অন্যায় অপকর্ম থেকে সৃষ্ট এসব সমস্যা। জীবনের চারিদিকে সমস্যার পাহাড় জমে উঠেছে। যেখানেই যাবেন সেখানেই পাওয়া যাবে মানুষের অপকর্মে সৃষ্ট সমস্যা নাগিনীর ফনা তুলে সকল মানবিকতার হুমকি হয়ে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। কারো টু শব্দটি করার সুযোগ নেই। আলাপে-মজলিশে সর্বত্রই শুধু সমস্যার কথা শুনার জন্য সময় দিতে হয়। কি নিয়ে সমস্যা, জীবন চলার পথে সবকিছুতেই সমস্যা। রাস্তায় হাটতে সমস্যা। কখন যে কোথায় কোন গাড়ী কিংবা অটো এসে জান কবজ করে নেবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ঘরে-বাইরে সর্বত্র সমস্যা। অনেক সময় মনে হয় এ সমূহ সমস্যা মানুষের জানাজানিতে তৈরী সমস্যা। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজতো করোণা মহামারী সারা বিশ্বময় বন্ধ করে দিয়েছে। ধনীদেশগুলো ‘অন্তর্জাল(ইন্টারনেট’) ব্যবহার করে কোনভাবে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ কিন্তু পারছে না। স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখলে অভিভাবকরা বলেন- ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত কি হবে? ব্যবসায়ীরা বলেন ব্যবসা লাঠে উঠবে! খুলে দিতে বললে অন্যরা বলেন করোণা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে দায়ী হবে কে? সমস্যা! কি ভয়ঙ্কর সমস্যা! |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
‘শাখের করাত’ এতোদিন শুধু শুধুই শুনে আসছিলাম। এখন সত্যি সত্যিই সারা বিশ্ব শাখের করাতের সামনা-সামনি পড়েছে। কারো কোনভাবে রেহাই পাওয়ার উপায় নেই। দুনিয়ার ধনী দেশগুলো হয়তোবা এসব হজম করে নিতে পারবে কিন্তু আধা গরীব বা পুরো গরীব দেশগুলো অবশেষে কি করবে? আসলে কেউ জানেনা। বড় বড় ধনী দেশগুলোতে বিশেষ করে বৃটেনে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বড় বড় ব্যবসা দেউলিয়া ঘোষণা দিয়েছে। ওদের তো সমস্যা কিছুই না। দেউলিয়া ঘোষণা দিয়েই দায় শেষ। সমস্যাতো কর্মজীবী মানুষদের। তারা চাকরীহারা হচ্ছেন। ধনী দেশের সরকার হয়তো চাকুরীহারাদের একটা ভাতা দেবে সত্য। কিন্তু সে ভাতায়তো দীর্ঘকাল চলা যায় না। একটা আপদকালীন সময় কষ্টেসৃষ্টে চালানো যায়।কিন্তু দীর্ঘকাল কাটানোর চিন্তা মাথায় আসলে ভবঘুরে সাজতে হবে।অতএব সমস্যা। এ সমস্যার বীজ যে কত গভীরে পুঁতা আছে তা এখন পর্যন্ত কেউ হলপ করে বলতে পারছেন না। মনে হয় পারবেন না ও। বিশ্ব বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর বড় অংশই করোণা সমস্যার গভীরে কি রয়েছে তা বুঝতেই পারছেন না। বুঝতে পারলে তারা তা বলতেন। অন্ধের হাতী দেখার মত, সংবাদ মাধ্যমে কতিপয় বিশেষজ্ঞের সাথে সাথে শুধু বলেই যাচ্ছেন- এ মহামারী ভয়ঙ্কর এক মহামারী! আর শুধু কি মহামারী বলেই শেষ। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষকে ইতিমধ্যেই এই করোণায় জীবন বলি দিতে হয়েছে। ফলে ধনী-গরীব, সারা দুনিয়ার প্রায় সকল সমাজেই নেমে এসেছে মরণব্যাধির কালো পাহাড়। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
করোণা’র প্রকোপ ধনী দেশগুলোর উপর। অনেকেই বলছেন গরীব দেশগুলো বরং পাড় পেয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ধনীদেশগুলো। আবার অনেকেই মনে করেন, ঘটনাটি এমন নয়। ক্ষতিগ্রস্থের তালিকায় সকলেই আছেন। অবশ্য দুনিয়াব্যাপী এমন সমস্যার সময়েও কিছু কিছু দেশ ও সমাজ আছে, আমরা সংবাদ মাধ্যমের প্রচারিত খবর দেখে বুঝতে পারি যে এসব দেশ ও মানুষকে, এ করোণা মহামারি, তাদের ভাগ্য গড়ে নেয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী মানবিক এমন বিপর্যয়ের মাঝেও তারা তাদের পুরোনো ধান্ধাবাজী লজ্জ্বা-শরমের মাথা খেয়ে, অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন ভাগ্য গড়ে নেয়ার তালাশে। অতএব, সমস্যা। দেশে দেশে, সমাজে সমাজে সমস্যা ডাল-পালা বিস্তার করে নব নব রূপে সকল মানবিকতাকে পেছনে ঠেলে একেবারে সামনে চলে এসেছে। চারিদিকে মানবসৃষ্ট অপকর্মের সমস্যা জমে জমে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মহামারীর এমন ভয়ঙ্কর সমস্যার মাঝে একটি দেশের ঔষধ কোম্পানী করোণা’র টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। সাথে সাথেই অন্য আরেকটি দেশ সে টিকাকে অনুমোদন করেছে। অথচ আবিষ্কারক টিকা কোম্পানীই বলেছে যে তাদের টিকা শতভাগ সফল নয়। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। অনুমোদনকারী দেশটি এতটুকু সময় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। কেনো করেনি তা জানার সুযোগ হয়নি এখনও। অনুমোদন দিতে আমাদের কোনই সমস্যা নয়, কোন আপত্তিও নেই। একটু সময় নিয়ে ভালকরে দেখে-শুনে না দেওয়াতেই যাকিছু সমস্যা। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এই করোণা’কে নিয়ে প্রথম প্রথমতো এমনও শুনা গিয়েছিল যে, করোণা আবার কি! সাধারণ সর্দিকাশী সকল দেশে সকল মানুষেরই আছে বা হয়ে থাকে। শীতের দেশে এর প্রকোপ ও ব্যাপকতা এবং ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেশী হয়। এতো নতুন কিছু নয়। অনেকেই ঘরোয়া আলাপে প্রশ্ন তুলে বলতেন এই অসুখকে এমনভাবে সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরার কারণ কি? তাদের সে জিজ্ঞাসার জবাব কোথায়ও কেউ দেয়নি। এখনও সে প্রশ্নের সুর নিঃশ্বেস হয়ে যায়নি। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বিগত মার্চ মাসের কথা। ছোট্ট একটি গল্পের মতই ঘটনা। আমি আমার ঘরে আসছি। চোখে পড়লো আমার নিকট প্রতিবেশীকে, কেঁদে কেঁদে তার মা’কে নিয়ে আসছেন, ঘরে যাবেন। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে, আপনি কাঁদছেন কেনো? উত্তরে তিনি সেদিন যা বলেছিলেন তা কোন দিন আমি ভুলতে পারবো না। তিনি বললেন- ভাই, আমার মা কাছের ওই ঘরে একা থাকেন। যেহেতু তিনি এখন একা মানুষ, তাই তার চার কক্ষের ঘর বদল করে আমার কাছের ওই দুই কক্ষের ঘরে এসেছেন। আমরা বোনেরা মিলে তাকে দেখা-শুনা করে থাকি। আজ এই এক্ষুনি হঠাৎ করে ‘এম্বুলেন্স’ এসেছে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে। আমি মায়ের কাছে ছিলাম। আমি এম্বুলেন্সের প্যারামেডিকসদের কাছে জানতে চাইলাম তাদেরকে আমাদের কেউ কি ডেকেছে। ওরা বললো না। তখন জানতে চাইলাম, তা’হলে তারা কি করে মা’কে নিতে আসলেন। এসময় আমি আমার অন্যান্য বোনদের ফোনে আসতে বললাম। ওরাও সাথে সাথে এসে পৌঁছালো। আমরা সকল বোন মিলে এ নিয়ে যখন প্যারামেডিকসদের সাথে, বিনা কারণে আমাদের মা’কে হাসপাতাল আমরা নিতে দেবো না বলে বাদানুবাদ করছিলাম তখন দেখি আমাদের দরজায় পুলিশও এসেছে একই উদ্দেশ্যে। আমরা তখন খুব ক্ষেপে গিয়ে তাদের বললাম, আমাদের মায়ের কোন অসুখ হয়নি। তাকে আমরা হাসপাতালে নিতে দেবো না। তোমাদের কে পাঠিয়েছে? আর পুলিশ এখানে কেনো তোমাদের সাথে? অনেক সময় বাদানুবাদের পর ওরা যখন বুঝতে পারলো আমরা কোন অবস্থায়ই এভাবে মা’কে নিয়ে যেতে দেবো না তখন দেখি পুলিশও চলে গেছে। পরে এম্বুলেন্স ও প্যারামেডিকসরাও চলে গেলো। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আমি, তখন আমার প্রতিবেশী বোনকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে বললাম- আপনারা কেউ না ডাকলে এম্বুলেন্স আসবে কেনো? জবাবে তিনি বললেন, আমরা কেউ ডাকিনি। আমাদের মায়ের কোন অসুখ হলেতো আমরা ডাকবো। ওরা স্ব-উদ্যোগে এসেছে। সত্যি সত্যি আমরা ডাকলে পুলিশ নিয়ে আসবে কেনো? তা’হলে বুঝুন ওদের মতলবটা! আমি আসলেই আজো ওদের মতলবটা বুঝতে পারিনি। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আমার প্রতিবেশী ওই বৃদ্ধ মহিলা এখনও সুস্থ দেহে খুবই সুস্থতা নিয়ে ভালই আছেন। আমি মাঝে-মধ্যে তাদের ঘরে আলাপচারিতার জন্য যাই। এটি আমার জীবনের এক অকল্পনীয় অভিজ্ঞতা যা আমি ভাবতেই পারি না। ভদ্রতা আর সভ্যতার আড়ালে মানুষ এমন ভয়ঙ্কর জীব হতে পারে! |