রাষ্ট্রপতি তখন বিশ্রামে ছিলেন। গায়ে চাদর আর লুঙ্গি পরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ এসেছেন এ খবর পেয়ে লুঙ্গি পরা অবস্থায়ই বেরিয়ে আসেন অতিথিদের সাথে সাক্ষাৎ করতে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, নির্বাচন কমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলে আবদুল হামিদের কাছে বঙ্গভবনে পৌঁছে দেন গত শুক্রবার। সাধারণ বাঙ্গালী মানসের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ওই চাদর লুঙ্গিপরা পোশাকেই চলে আসেন অতিথিদের কাছে। গ্রহণ করেন মনোনয়ন ফরম। ছবিসহ এমন মুখরোচক মহিমান্বিত খবর পরিবেশন করেছে ‘ডেইলিশরিয়তপুর.কম।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের একবিংশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী ভোটের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। ৫ই ফেব্রুয়ারি এই মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে। ফরমটি পূরণ করে আবদুল হামিদ নিজেই সই করবেন। এ জন্যই তার হাতে মনোনয়ন ফরমটি তুলে দেয়ার জন্য চীফ হুইপ ফিরোজকে যেতে হয়।
অনলাইনটি আরো লিখেছে, এর আগে গত বুধবার রাতে দ্বিতীয় মেয়াদে আবদুল হামিদকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড। পরদিন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেষ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গভবনে গিয়ে দলের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন। জৌলুসহীন দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তিনি যে সাধারণ মানুষেরই একজন সে পরিচয়কে কখনও কোন ছল-ছুঁতায় ঢেকে রাখার চেষ্টা করেননি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে তার সে অবস্থানের প্রকাশ করেছেন অকপটে।
আবদুল হামিদ বরাবর তার এই সাধারণ মানুষের ভাবমূর্তি কখনও পাল্টাতে চান না মন্তব্য করে অনলাইনটি লিখেছে, ২০১৭ সালের মার্চে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন সফরে গিয়ে রিকশায় করে রাষ্ট্রপতির বাজার পরিদর্শনের ছবিতে মানুষ চমকিত হয়েছিল। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে হোটেলে নামি হোটেলের স্যুইট ভাড়া দিনে সাত হাজার ডলার শুনে কম দামি হোটেলে ৬০০ ডলারের স্যুইটে থেকেছেন। ফলে আগের সফরে গ্র্যান্ড হায়াতে রাষ্ট্রপতির হোটেল স্যুইটের ভাড়া যত ছিল সে সময় ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের (নিরাপত্তাকর্মীসহ) সবার হোটেল ভাড়া মিলেও তত হয়নি।
এটি ঠিক যে আবদুল হামিদ সবসময়ই বাঙ্গালী সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে সাচ্ছন্দ বোধ করেন এবং পছন্দ করেন। দেশে বিদেশে বহুবার তিনি খোলামেলাভাবেই বিষয়টি বলেছেন সাধারণ মানুষের সভায়। ভাল না লাগলেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নিরাপত্তার ওই ঘেরাটোপে তাকে থাকতে হয় কথাটি তিনি বহুবার বলেছেন। জানা গেছে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও তিনি, বিশেষ করে নিজ এলাকার লোকদের জন্য তার দুয়ার সব সময় খোলা রেখেছেন।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নিজের কথার উদ্বৃতি দিয়ে শরিয়তপুর.কম লিখেছে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার এক বছর পূর্তির পর গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বঙ্গভবন তার ভালো লাগে না। আবদুল হামিদ সেদিন বলেছিলেন, ‘খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। মনটা অনেক কিছু চায়।’