1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
৭ই নভেম্বর অদূরদর্শী রক্তারক্তির দিন তবু বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল
 - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন

৭ই নভেম্বর অদূরদর্শী রক্তারক্তির দিন তবু বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল


সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৮
  • ৬২২ পড়া হয়েছে

মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। ৩রা নভেম্বর থেকে ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫সাল, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তাক্ত বিপ্লবের যেমন দিন বলা যায় তেমনি অদূরদর্শী রক্তরক্তির কয়েকটি দিনও বলতেই হয়। বিশ্বের যেকোন ঘটনাকে ৩ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। শুধু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা কিংবা নেতিবাচক দিক থেকে ব্যাখ্যা অথবা ইতি-নেতি দু’টো মিলিয়ে ব্যাখ্যা করা। আরো সংক্ষেপে বলতে গেলে, যেকোন ঘটনার পক্ষে বলা বা বিপক্ষে বলা কিংবা পক্ষে-বিপক্ষে উভয়দিক বিবেচনায় নিয়ে বলা। দুনিয়ার কোন ঘটনাকে এ তিন পথের বাইরে গিয়ে ব্যাখ্যার কোন রাস্তা নেই। ঠিক সেই দৃষ্টিভঙ্গি বা মন ও মনন থেকে ১৯৭৫সালের নভেম্বরের ৩থেকে ৭তারিখের ঘটনা প্রবাহকে ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে গেলে একদিকে যেমন বিপ্লব বলা যায় অন্যদিকে অদূরদর্শী রক্তরক্তির কয়েকটি দিনও বলতেই হবে। বিষয় হচ্ছে যিনি ব্যাখ্যা করছেন তিনি কোন মন ও মনন থেকে লিখছেন। কোন ঘটনা বলায় বা ব্যাখ্যায় লেখক কোন সময়ই নিরপেক্ষ থাকতে পারেননা। যদিও বা বলা হয় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু বস্তুত নিরপেক্ষ থাকা যায় না।
বিচারের এ চিন্তা থেকে ইতি-নেতি উভয় মিলিয়ে বলা যায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫সালের ১৫ই আগষ্ট নৃশংসভাবে জনবাচ্চাসহ নিধন করার অবস্থা থেকে দেশে যে বিশৃঙ্খল নৈরাজ্যকর অবস্থার জন্ম হয়েছিল তারই পরিনতি ছিল নভেম্বরের ওই দিনগুলো।
১৯৭৫সালের নভেম্বরের ৩তারিখের কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয় বলে বিবিসি’র অভিমত। দেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়া সে ঘটনাগুলো ছিল- অভ্যুত্থান এবং ঢাকা কারাগারের হত্যাকাণ্ড। ৩ তারিখের মধ্যরাত পার হবার পরই খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান জিয়াউর রহমানকে আটক করে। এ পর্যায়ে কিছু বলতে গিয়ে বর্তমান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ বিবিসি’কে বলেছেন, “…সেদিন সকাল থেকেই একটি সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। মেজর ডালিম এবং মেজর নুর বেশ কয়েকবার ক্যান্টনমেন্টে এসে খালেদ মোশারফের সাথে দেখা করেন। দিনভর নানা দেন-দরবারের পর সন্ধ্যায় ঠিক হলো তাদেরকে দেশ থেকে চলে যেতে দেয়া হবে। সেদিনই রাতে একটি এয়ারক্রাফ্টে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাদের একটি বিমানে থাইল্যান্ডে চলে যেতে দেয়া হয়।


এদিকে সেই রাতেই কেন্দ্রীয় কারাগারে চলে একটি হত্যাকাণ্ড। কয়েকজন সেনা সদস্যের হাতে খুন হন ১৯৭১ সালের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, তৎকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেলার আমিনুর রহমান সে সময় বিবিসি’র সাথে কথা বলেছিলেন। বিবিসি’কে তিনি বলেছিলেন, রাত একটা থেকে দেড়টার দিকে একটি পিকআপে করে কিছু সেনাসদস্য জেলগেটে উপস্থিত হন। এসময় আইজি প্রিজনের ফোন পেয়ে তিনিও সেখানে যান। এর কিছুক্ষণ পর তার কার্যালয়ের টেলিফোনটি বেজে ওঠে।
“টেলিফোন ধরলেই বললো যে প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সাথে। কথা শেষ করার পরই আইজি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট ফোন করেছিলো। বললো যে আর্মি অফিসাররা যা চায় সেটা তোমরা করো”।এরপর কারা মহাপরিদর্শক আমিনুর রহমানের হাতে চারজনের নাম লেখা একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলেন এদেরকে এক জায়গায় করো।
“সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন সাহেব ছিলেন এক রুমে আর অন্য দুজন ছিলেন অন্য রুমে। তো অন্য রুম খুলে আনলাম”।
“আমি ভাবলাম কথাবার্তা বলবে তো পরিচয় করিয়ে দিই। মনসুর আলী সাহেব ছিলেন সর্বদক্ষিণে। তাকে পরিচয় করানোর জন্য মাত্র ম.. বলা শুরু করার সাথে সাথেই গুলি করে দিলো । গুলি করেই তারা খোলা গেট দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো”।

ছবি-বিবিসি থেকে সংগৃহীত

সাখাওয়াত হোসেন বলছিলেন ঐ জেলহত্যার ঘটনাটি সেনা অফিসারদের কাছে পৌঁছে ৪ঠা নভেম্বর সকালের দিকে।
মীর সাব্বিরকৃত বিবিসি’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, “সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, ১৫ই অগাস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার একটি ফলশ্রুতি হচ্ছে নভেম্বরের অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান। জুনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেকেই গ্রহণ করতে পারেননি’। এর বাইরে আরেকটি দ্বন্দ্বও ছিল, যার সূচনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই।”
সেনাবাহিনীর ভেতরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল সুস্পষ্ট। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের বরাত দিয়ে বিবিসি আরো লিখেছে, “যুদ্ধের পর থেকে সেনাবাহিনীর মধ্যে তিনজন অফিসারের তিনটি প্রভাব বলয় তৈরি হয়েছিল।ব্রিগেডিয়ার হোসেন তখন ছিলেন ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডের মেজর পদমর্যাদার স্টাফ অফিসার। যে তিনজন সেনা কর্মকর্তার কথা তিনি বলছেন তারা ছিলেন জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশারফ এবং কে এম শফিউল্লাহ।”
“এই দ্বন্দ্বটা আগেও ছিল, কিন্তু সেটা প্রকট হলো ১৫ই অগাস্টের পরে। জেনারেল শফিউল্লাহ মোটামুটি বের হয়ে গেলেন, জেনারেল জিয়া ইন হলেন। আবার জেনারেল জিয়া ইন হওয়াতে তার এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফের মধ্য দ্বন্দ্বটা আরো বাড়লো”।
বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ বলেছিলেন, ১৫ ই অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের দিন দশেক পর সেনাপ্রধানের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ঘটনাপঞ্জির পেছনে পড়ে যান। এবং অনেকটা গৃহবন্দী হিসেবেই সেনাপ্রধানের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বিবিসি’র কাছে নভেম্বরের কালো রাতের সে ঘটনাপঞ্জিকে কে এম শফিউল্লাহ বর্ণনা করেন এভাবে-“ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে করে খালেদ মোশারফ জিয়াউর রহমানকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাকে সরিয়ে দিয়ে হাউজ এরেস্টও করে ফেলেছিল এবং নিজেই চিফ অফ স্টাফের র‍্যাংক পরলো।”
“ঐটা শেষ পর্যন্ত সে আর থাকতে পারে নাই এবং সেই ঘটনাটাই লিংগার করে ৭ তারিখে জিয়াউর রহমান তাহেরকে সঙ্গে নিয়ে খালেদ মোশারফের ঐ গ্রুপটাকে সরিয়ে দেয়।”

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। ছবি- বিবিসি থেকে সংগৃহীত

এদিকে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন জাসদের গণবাহিনী পরবর্তী অভ্যুত্থানে একটি মূল ভূমিকা পালন করে। কর্নেল তাহেরের ভাই এবং গণবাহিনীর তৎকালীন ঢাকা মহানগর প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন ৩রা নভেম্বর ভোররাতের দিকে জিয়াউর রহমান ফোন করেন কর্নেল তাহেরকে। “জিয়াউর রহমান বলেন, তাহের ওরা আমাকে বন্দী করেছে। আমার জীবন বিপন্ন”। ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগের পর কর্ণেল তাহের সরাসরি জাসদের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। এসময়ই গঠিত হয় সেনাসদস্যদের নিয়ে সৈনিক সংস্থা এবং গণবাহিনী, যদিও বিষয়গুলো তখনো প্রকাশ্য ছিল না। আনোয়ার হোসেন বিবিসি’কে বলেছেন, নভেম্বরের ৩ তারিখেই কর্নেল তাহের নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন এবং এরপর থেকেই সৈনিক সংস্থার সদস্যরাসহ সেনাসদস্যরা তার সাথে দেখা করতে শুরু করেন। খালেদ মোশারফ ক্ষমতা হাতে নিলেও দ্রুতগতিতে কোন সরকার গঠন করতে পারেননি। এর মধ্যেই অনেকটা অগোচরে ঘটে যায় জেল হত্যাকাণ্ড। এসব মিলিয়ে দেশ অনেকটা ‘সরকারহীন’ অবস্থার মধ্যে ছিল কয়েকটি দিন। এর মধ্যে জাসদ, গণবাহিনী এবং তাহের সৈনিকদের সাথে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে যান। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা চলতে থাকে।
বিবিসি’কে সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, গণবাহিনী যে একটি কিছু করতে যাচ্ছে সেটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ৬ তারিখ বিকেলে, যখন ক্যান্টনম্যান্টের ভেতরে গণবাহিনীর নামে একটি লিফলেট ছড়ানো শুরু হয়। লিফলেটে খালেদ মোশারফ, শাফায়াত জামিল এবং কর্নেল হুদাকে ‘ভারতীয় চর’ বলে প্রচার করা হয়।
এরই মধ্যে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রেসিডেন্ট হিসেব শপথ পরানো হয়। কিন্তু প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীতে ঠিক কী হচ্ছে সেনিয়ে বেশ কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছিলো।
অধ্যাপক হোসেন বলেন- “একটা ক্যু-তে যে হোমওয়ার্ক হয় সেটা ছিলো না। যে যার মতো করে চলছিল। এই বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে যখন ৬ তারিখ রাতে এই লিফলেট জওয়ানদের মধ্যে ছড়ানো হলো তখনি সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে গণবাহিনী নামে একটি ফোর্স ক্যান্টনমেন্টের ভেতর কাজ করছে। গণবাহিনীর বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাটি হয় ৬ তারিখ সন্ধ্যায়। বিশাল একটি হলরুমের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রায় ৬০-৭০ জন সদস্য ছিলেন। সেখানে গণবাহিনীর নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে কর্নেল তাহের, তার পরের অবস্থানেই ছিল হাসানুল হক ইনু এবং অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন নিজেও ছিলেন বলে তিনি নিজেই বলেছেন। তবে তিনি বলেন, দলীয়ভাবে জাসদের সিদ্ধান্ত ছিল প্রস্তুতি নিয়ে ৯ই নভেম্বর অভ্যুত্থান হবে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় সেই রাতেই বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তথ্যসূত্র: বিবিসি থেকে সংগৃহীত

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT