হারুনূর রশীদ।।
ব্যবসা! নতুন নুতন ব্যবসা। ব্যবসা ছাড়া উপায় নেই। মানুষ বাড়ছে তো বাড়ছেই। কমিয়ে আনার অনেক চেষ্টা হয়েছে কিন্তু আশানুরূপ ফললাভ হয়নি বলেই মনে হয়। তাই যুদ্ধ আর ব্যবসা এ দু’টির বাজার এখন রমরমা।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে রবি ঠাকুরের “আরব বেদুইন”রা যুদ্ধের এমনই প্রেমে পড়েছে যে কোন কালে সে প্রেমবিচ্ছেদ আর হবেনা, এমন নিশ্চয়তা দেয়া যেতে পারে। অবশ্য যুদ্ধ! এটি আরবীয়দের খুবই প্রাচীন সংস্কৃতি। গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বা মারামারি তাদের এখনও চলমান বহু প্রাচীন ঐতিহ্য। উঠের উপর সওয়ার হয়েও তারা যুদ্ধ করেছে। সেই ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি আজ প্রস্ফুটিত হয়ে সারা আরব জাহানে বারুদের প্রেমগন্ধ বিলিয়ে যাচ্ছে অকাতরে। আর সেই প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে আত্মাহুতি দিয়ে চলেছে অগনিত মানুষ আর বাস্তুহারা বাকিরা দেশে দেশে আশ্রয়হীন যাযাবর হয়ে মৃত্যুরদিন গুনছে কয়েককোটী মানুষ। নিজেদের বাড়ী-ঘর সহায় সম্বল সবকিছু থাকার পরও তারা অন্যের কদর্য দয়ার পাত্র। জীবনে আর কখনও নিজেদের বাপ-দাদার ভিটেয় ফিরে যেতে চাইলেও যেতে পারবে কি-না তা তারা নিজেরা কিছুই জানেনা। জীবন তাদের অসহায় অনিশ্চিত!
এক সময় ছিল আরবীয়ানরা সারা পৃথিবী তাদের পদতলে নেয়ার স্বপ্ন দেখতো। সেই স্বপ্ন থেকেই তারা নির্মাণ করেছিল “মুসলিম উম্মা” বা “উম্মুল মুসলিমিন” নামের আন্তর্জাতিকতাবাদ। বাগদাদ আর ইস্তাম্বুলের সিংহাসনে বসে অর্ধেক দুনিয়াকে শাসিয়েছেও কয়েক শতাব্দি। তাদের সেই আন্তর্জাতিকতাবাদের মূলমন্ত্র ছিল যেখানেই যাবে নিজের স্থায়ী আবাসভূমি গড়ে নেবে আর অন্ধের মত মানুষজনকে ধর্মে বিশ্বাসী করে তুলবে। ধর্মের মূল কথা আল্লাহ নামক শ্রষ্টাশক্তির উপাসনা আর তার একমাত্র মাধ্যম আরবী ভাষা ও সংস্কৃতি। বুঝানোর দরকার নেই অন্ধভাবে মুখস্ত করাবে। দেখবে শ্রষ্টা ঠিকই কবুল করে নিয়েছে। শ্রষ্টা কবুল করেছেন কি-না জানিনা তবে প্রায় অর্ধেক দুনিয়া যে কবুল করেছে তা বাস্তব চক্ষে দৃশ্যমান।
সেই প্রাচীন যুগে যখন যানবাহন বলতে পশু আর নৌকা ভেলা ছাড়া কিছুই ছিলনা, দুনিয়াকে পদানত করার কূটকৌশল নিয়ে আরবীয়ানরা একসময় সেই উট-ঘোড়া কিংবা নৌকা-ভেলায় চড়ে পৃথিবী চষে বেরিয়েছে, স্থায়ী আবাস গড়ে নিয়েছিল যেখানেই গেছে। সাথে ছিল আরবী ভাষা ও সংস্কৃতি। আরবীয়ানদের আগে রোমানরাও অনুরূপ করেছিল কিন্তু অবশেষে সময়ের দাবী মানতেই হয়। আরবীয়ানদের কাছে পরাস্ত হতে হয় রোমানদের।
সেই আরবীয়ানদেরও পরাস্ত হতে হয় ইংরাজদের কাছে। একই পদাঙ্ক অনুসরন করে ইংরাজ শাসককুল। একটি ব্যতিক্রম ছিল। ইংরাজরা যেখানে গিয়েছে আবাস গড়ে তুলতে মন চায়নি। তাই যুক্তিগত কারণেই তাদের লুন্ঠন করতে হয়েছে। যতই অপকর্ম করুক না কেনো নিজেদের দেখাতে চেয়েছে তারা রোমান কিংবা আরবীয়ানদের চেয়ে অধিক সভ্য সংস্কৃতির মানুষ। তারা সকল মানুষের অধিকারে আস্তাবান মানুষ। কিন্তু ভাষার প্রশ্ন সেই একই নীতি। জাতীয় ভাষা হতে হবে ইংরেজী। ওই যে আমাদের গ্রামীন কথায় আছে না-‘সব মানি, তবে তালগাছটি আমার চাই’! ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর কূটকৌশল এখনও বিশ্বসেরা কৌশল। এই ইংরেজরাই তাদের সহোদর ভাই আমেরিকার বুস প্রথমকে দিয়ে কুয়েতের স্বাধীনতা নামক মিথ্যা সাজানো ছলনায় ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাঁধিয়ে সেই যে হানাহানির বিষবীজ রূপন করেছিল তাই এখন বিভিন্ন নমুনার ডাল-পালা গঁজিয়ে সারা মধ্যপ্রাচ্যকে গিলে খাচ্ছে। সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছে এক জঙ্গী সন্ত্রাসী মারামারি-হানাহানির ভয়াবহতা।
আর ঠিক যখন বিশ্বময় এক জঙ্গী অস্থিরতা চলছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকসই অবস্থা থাকছে না, এসব মোকাবেলায় সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস যখন খুবই কাম্যছিল অনেকটা তখনই ইংরেজ ধনিকগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ ইউরোপীয়ান সংঘ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে সামান্যতমও পরওয়া করেনি। অথচ সারা দুনিয়ার সাথে তারাও জানে যে একতাই বল। মানুষের সমাজ এক থাকতে কতই না চেষ্টা চালায়। অথচ কট্টর এই ইংরেজ রক্ষণশীল গোষ্ঠী, বৃটেনের কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে এক এক করে সংঘ থেকে বেরিয়ে আসার সকল ব্যবস্থা নিয়েই চলেছে। প্রশ্ন হলো, এতো কিছুর পরও শেষ রক্ষা কি হবে?
লন্ডন: সোমবার, ১৩ই চৈত্র ১৪২৩