1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আমাদের ব্যর্থতা - মুক্তকথা
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

আমাদের ব্যর্থতা

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯
  • ৯৪১ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ।।

আমার চেনা কিছু মানুষ আছেন এবং ছিলেন যারা মিথ্যার উপর জীবন চালিয়ে গেছেন। সারাটা জীবন এরা বানিয়ে সাজিয়ে মিথ্যা বলে বলে অন্য মানুষকে প্রভাবিত করে নিজেদের আখের গোছিয়েছেন। সেই আখের গোছানো কিন্তু সাদা মাটা নমুনার ছিল না, একেবারে নিজেকে রাজা বানিয়ে ধরাধাম থেকে বিদেয় নিয়েছেন অনেকেই। এদের অবাক করা মিথ্যে বলার ধরন ধারণ দেখলে যে কেউই স্তম্ভিত না হয়ে পারতো না। এরা এতো কৌশলে তাদের মিথ্যা প্রচারণার কাজ করে গেছে যে খুবই কাছের অন্য কাউকে বুঝতেই দেয়নি। শুধু কি তাই, টের পেতেও দেয়নি। যাদের সামনে নিজের মিথ্যে প্রচার করা যাবেনা খুবই কৌশলে তাদের এড়িয়ে গেছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। এদের মিথ্যা বলার কৌশলের কাছে বহু জ্ঞানী-গুণিকে হার মানতেই হবে। ইতিহাসখ্যাত গোয়েবল্স যা পারেননি আমার পরিচিত মিথ্যা কথনের সেই নারদেরা তাও করে দেখিয়েছেন। অবাক করা সব মিথ্যে কথার কাহিনী সাজিয়ে অবলিলায় এরা বলে বসতো মানুষের কাছে। যারা বুঝতেন ও জানতেন তারা প্রতিবাদ করেননি কিংবা করতে পারেননি! এটি সত্য সেদিন আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
আমি এমনও মানুষ দেখেছি যারা আমারই বাড়ীর সামনে মাইক লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মিথ্যা বয়ান অনর্গল বলে গেছেন আরো দু’জন সুশীলকে সাথে নিয়ে। ইচ্ছে করে মাইকে আমার নাম নিয়ে ডাকা হয়েছে তাদের উলঙ্গ মিথ্যা কথনের মেলায় শরিক হওয়ার জন্য। শরিক আমি হইনি। কিন্তু কোন প্রতিবাদও করিনি! যদিও এমন স্বীকারোক্তি আমার নিজের কাছেই অপমানযোগ্য তার পরও আমার বলতে কোন দ্বিধা নেই যে আমার করার মত কিছুই খুঁজে পাইনি সেদিন। মিথ্যা কথনের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদের বলিষ্ঠতার পরিচয় সেদিন দিতে পারিনি। নির্দ্বিধায় বলতে পারি এটি ছিল আমার ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতা! জেনেশুনেই আমরা প্রতিবাদ করিনি কিংবা করতে পারিনি! এটি সত্য সেদিন আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।

আমরা যাদের দেখেছি, সমাজে তাদের প্রতিপত্তি বলতে কিছুই ছিলনা। তাই এরা মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে বলতো সমাজের কোন একটি ক্ষেত্রে এতটুকু ঠাঁই খুঁজে নেয়ার ইচ্ছায়। মোসাহেব চতুর প্রকৃতির অনেককেই সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠা পেতেও দেখেছি। বিশেষকরে স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরুধীরা ও আলবদর, রাজাকারেরা হারিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠা ফিরে পেতে কি না করেছে সে বিষয়ে সারা দেশের মানুষ কম-বেশী কিছু না কিছু জানেন। অনেকেই যারা এখনও জীবীত আছেন নিজ চক্ষে দেখেছেন। কিন্তু তারা কেউই প্রতিবাদ করেননি কিংবা করতে পারেননি! এটি সত্য সেদিনও আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের এক অংশ মূল থেকেই স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল স্বায়ত্ব শাসনের। তারা স্বাধীনতা চায়নি। আমার মনে আছে সে সময় ছাত্রলীগের এক সম্মেলনে ঢাকায় গিয়ে দু’ভাগ হয়ে আওয়াজ তুলেছি। একপক্ষ আওয়াজ তুলেছিল স্বাধীনতার, তার বিপরীতে অন্য পক্ষ আওয়াজ তুলেছিল সংহতির। অর্থাৎ পাকিস্তানের সাথে থাকা। এরা আজও রাজনীতিতে সক্রিয় আছে। বরং ইদানিং তারা প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের প্রশংসা করে বেড়াতে দ্বিধাবোধ করে না। সেদিনও আমরা প্রতিহত করিনি কিংবা করতে পারিনি! এটিই সত্য যে সেদিনও আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
এই দুষ্টচক্র মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধরত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রীসভায় মুক্তিযুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছিল। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত খন্দকার মোস্তাক প্রস্তাব দিয়েছিলেন যুদ্ধ থামিয়ে দেশে ফেরৎ আসতে। তার ব্যাখ্যা ছিল পাকিস্তান আমাদের দেয়া ৬দফা ও স্বায়ত্ব শাসনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে সুতরাং যুদ্ধের আর প্রয়োজন কি? এর পর অবশ্য অস্থায়ী সরকার মোস্তাককে সরিয়ে আব্দুস সামাদ আযাদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। ৫০বছর আগের সেই কূচক্রিমহল আজও আছে এবং ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর আড়ালে থেকে নানাভাবে তাদের হারিয়ে যাওয়া অতীতকে ফিরে পাবার জন্য মরনপণ যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যে নমুনায় সম্ভব, সে সে নমুনায় মুক্তিযুদ্ধ বিরুধী তথা স্বাধীনতা বিরুধী ষঢ়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আর মিথ্যার বেশাতির উপর যারা জীবন গড়ে তুলেছে বা এখনও তুলছে তারাই নিজেদের সুবিধায় এদের তখনও আশ্রয় দিয়েছে এখনও দেয়। একাজে তারা এতোই সিদ্ধহস্ত যে লক্ষ্য হাসিলের জন্য কেবল জীবন দেয়া ছাড়া মান-সম্ভ্রম সবকিছু দিতে রাজী। এ দুষ্টচক্রের লোকজন দেশের রাজনীতি-অর্থনীতির সকল পর্যায়ে আজও সক্রিয়। তাদের এই সক্রিয় থাকার সুযোগ করে দেয় মিথ্যার বেশাতি দিয়ে যারা সমাজে স্থান করার কাজে লিপ্ত সেসব দুষ্টমতি অপরাধীচক্র। সেদিনও আমরা প্রতিহত করিনি কিংবা করতে পারিনি! এটিই সত্য যে সেদিনও আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
দেশের স্বাধীনতার পর একটা অরাজক উশৃঙ্খল অবস্থা সর্বত্র বিরাজ করছিল। সমাজের দুষ্টলোকেরা এর সুযোগ নেয় এবং এ অবস্থাকে পলে পলে কাজে লাগিয়ে দূর্বৃত্ত্বায়নের মাধ্যমে আখের গোছাতে মারাত্মকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। আমার এলাকায় সেই সময়ের দেখা থেকে আমি বলতে পারি, যার অনেককিছুই আমি সে সময় দূর ও কাছ থেকে দেখার দূর্ভাগ্য অর্জন করেছিলাম। আমার খুব ভাল করেই খেয়াল আছে যুদ্ধপূর্বকালীন সময়ে একপক্ষ রাজনৈতিক কর্মি, যাদের অস্তিত্ব এখনও আছে, আমাদের মুখে দেশের স্বাধীনতার ক্ষীন আওয়াজ শুনে একে পাগলের প্রলাপ মনে করতো, অনেকেই আমাদের প্রকাশ্যে ভেঙচি কেটে বলতো তোরা ভারত আর আমেরিকার দালাল। পরবর্তিতে তাদের ক্ষমতার অলিন্দে হাটতে দেখেছি। অস্থির সময়ের সুযোগ তারাও কাজে লাগায়। সেদিনও আমরা প্রতিহত করা তো দূরের কথা প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারিনি! বরং তাদেরই সাথে গাঁটছড়া বেঁধে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেই। আজকের অবস্থায় মনে হয় সেদিন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বলতেই পারি, সেদিনও আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
আরেক পক্ষ যারা রাজনীতিতো দূরের কথা সমাজের কোথায়ও কোন ভাল কাজের সাথে কোন কালেই জড়িত ছিল না, বরং যেকোন উপায়ে কিছু বানিয়ে নেয়ার খুঁজে থাকতো, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে যাওয়ার অবাধ সুযোগ তাদের দূর্ণীতিপরায়ন জীবনে এক দৈব আশীর্বাদ হয়ে আসে। স্বাধীনতার পরপরই এরা মুক্তিযোদ্ধার লেবাছে চুরি-ডাকাতি, গাছচোরাই, ভূমিদখল, বিলমারা, হাওর দখল, ব্যাঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ ইত্যাদি সমাজবিরুধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এদের অনেকেই এসময় রাজনীতির কর্নধার পর্যন্ত হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। তখনও আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি! আজও পারছিনা।
আমার জানামতে বেশ কয়েকজন, যারা কখনই ভারতে পর্যন্ত যায়নি বরং ভারত বিরুধী মনোভাব পোষণ করতো এবং যুদ্ধের সময় চুটিয়ে অনৈতিক ব্যবসা করে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল সেসব লোক, বেশ নামি-দামি মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে ভূয়া মুক্তিযুদ্ধার সনদ সংগ্রহ করে সরকারী চাকুরীতে গিয়ে অনৈতিক পথে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। সমাজে যাদের তেমন কোন স্থান ছিলনা, অস্থির সেই সময়ের সুযোগে অন্যায় পথে এরা রাতারাতি সমাজের নতুন মুখ হয়ে উঠে। যারা বুঝতেন ও জানতেন তারা প্রতিবাদ করেননি কিংবা করতে পারেননি! এটিই সত্য যে সেদিন আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
আমি এমন মুক্তিযোদ্ধাও দেখেছি যিনি টিভিতে বলছেন তিনি যুদ্ধ করতে করতে হেঁটে যাচ্ছেন আর তাকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক বিষধর গোখরে সাপ। আরেকজনকে জানতাম, যিনি অস্বাভাবিক মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে বলারও প্রয়োজন মনে করতেন না। অবলিলায় তিনি, শুধু কি মিথ্যা, তার ইচ্ছেমত আজগুবি সব মিথ্যা বলেই যেতেন। কারণ একটিই, নিজেকে জাহির করার মধ্যদিয়ে ফায়দা হাসিল। মিথ্যা কাহিনী বলতে গিয়ে তিনি বলতেন, তিনি জানতেনই না যে কুমীরের মাথায় মেশিনগান রেখে যুদ্ধ করছেন বলে তিনি মানুষের কাছে গল্প করতেন। একই গল্প কখনও বাঘের লেজের উপর মেশিনগান রেখে আবার কখনও বিষধর সাপের পেঁচে মেশিনগান রেখে গুলি করছেন, এমন সব আজগুবি মিথ্যা কাহিনী মানুষও খুব করে মজা লুটতো। নিজেকে জাহির করার এমনসব আজগুবি কাহিনীকার একজনের খবর জেনেছিলাম সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে। যার বাড়ীতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম তিনি কথার ফাঁকে ওই লোকের পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন মজার এক কাহিনী। যুদ্ধের শেষ, কিন্তু সকল এলাকা থেকে পাকবাহিনী তখনও সরে যায়নি। ধীরে ধীরে খুব সাবধানে ওরা তখনও প্রধান প্রধান কেন্দ্রে জড়ো হচ্ছিল। এমনি এক সময় সকালে কে একজন এসে খবর দিল পাকহানাদার বাহিনীর কতিপয় সৈনিক রাস্তাদিয়ে যাচ্ছে। আর যায় কোথায়। তাদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা ওই মুক্তিযোদ্ধা ঝপাৎ করে বাড়ীর পেছনের পুকুরে ঝাপ দেয়। শীতে সেই সকালে তাকে পুকুর থেকে তোলাই যাচ্ছিল না। বাড়ীর লোকজন বললো ওরা পাকসেনা নয় পুলিশ। তোমার কোন ভয় নাই উঠে আসো। কিন্তু বীর সেই মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘসময় পানিতে নাক ভাসিয়ে থেকেছিলেন। সেই মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি পরবর্তীতে নেতা হয়ে উঠতে আর মিথ্যা বানোয়াট যুদ্ধকাহিনী বলতে। অথচ এদের মুক্তিযুদ্ধ বলতে ছিল ব্যাংকের টাকা নিয়ে পালিয়ে ভারতে যাওয়া আর স্বাধীনতার পর এ যুগের গাদা বন্দুক জাতীয় থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে ঘরে ফিরে আসা। এদেরও আমরা প্রতিহত করতে পারিনি কিংবা করতে চাইনি! এও সত্য যে সেদিন আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
এদের বহুজনকে আমি চিনি যারা বিভিন্ন নমুনায় ভারতে গিয়েছিলেন। থেকেছেন হোটেলে কিংবা দামী কোন বন্ধুর বাসায়। অনেকে বিয়েও করেছিলেন। অনেকেই প্রেম করতে গিয়ে ধরা পরে গণধোলাই খেয়েছেন। অনেকের মাথার চুল কেটে দেয়া হয়েছিল মেয়ের সাথে অশোভন আচরণের জন্য। ব্যাংক লুটের অর্থের জন্য অনেকের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে বিচার বসতেও দেখেছি। কিন্তু দেশে ফিরে এসে সাত তারাতারি মুক্তিযোদ্ধা সেজে আবার সেই পুরানো কায়দায় আখের গোছিয়েছেন। সেদিনও আমরা এসবের প্রতিবাদ করতে পারিনি আজও পারছিনা।
এদের মিথ্যাচার যে একেবারেই ধরা পড়তো না তা’তো নয়। কিন্তু মানুষ সে গুলোকে পাত্তা দিত না। মানুষ ভাবতো- বলে না, বলেই যাক। ওই মূর্খ্যতো নিজের বাহাদুরী দেখাচ্ছে। দেখিয়ে যায় না। তাতে আমাদের কি যায় আর আসে! হয়তোবা এখানেই মানুষের ভুল ছিল। সত্য স্থাপনের স্বার্থে, ইতিহাসকে মিথ্যা থেকে বাঁচানোর স্বার্থে মানুষের প্রতিবাদ করা কিংবা নিন্দে করা উচিৎ ছিল। অধিকাংশ মানুষই তা করেনি। দায়ীত্ব ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের। কিন্তু তারা করেননি। কিছু লোক সে সময় জাতীয়ভাবে প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলে কিন্তু পরাজিত শক্তি খুবই সুকৌশলে তাদের সে প্রয়াসকে চরমভাবে ব্যর্থ করে দিয়ে নিজেদের গোলায় ফসল তোলে। দুষ্টদের একাজেও তাদের সহায়তা করেন মুক্তিযোদ্ধা নামের কিছু ব্যাংক লুটপাটকারী ব্যক্তি ও মহল। জাতীয়ভাবেই এরা মুক্তিযোদ্ধাদের হটিয়ে তার সম্পূর্ণ বিপরীত মানুষজনদের নিয়ে দেশ পরিচালনায় প্রয়াসি হয়েছিল। সেদিনও আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি কিংবা প্রতিবাদ করতে চাইনি।
এই নিন্দে বা প্রতিবাদ না করার পেছনে কারণ খুঁজে দেখেছি এবং বুঝতে পেরেছি সমাজে অধিকাংশ সুশীল নামের মানুষ কুচক্রিদের বানানো মিথ্যার আশ্রয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠার এক মিথ্যে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। আর সুশীলদের এসব কাজ দেখে আমসাধারণও এককাতারে শরিক হয়ে দেশব্যাপী মিথ্যার এক সর্ববিনাশি জাগরনী রূপ ধারন করেছে সবকিছুতে। তাইতো দেখি দেশব্যাপী একদিকে মিথ্যার বেসাতি অন্যদিকে ক্ষীন কন্ঠে ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ। মিথ্যা সর্বগ্রাসী না হলে কি করে অবলিলায় স্বাধীনতার পর জাতির প্রতিষ্ঠাতাকে সপরিবারে হত্যা করেও দুরাচারগুষ্ঠি কান্ত হয়নি, তার বিচার না হওয়ার জন্য অন্যায় অযৌক্তিক আইন পাশ করা হয়। তাও আবার কোথায়(?) মহান সংসদে! যারা দেশ স্বাধীন করলো সেই মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিঘ্নে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। সারা জাতির সামনে পরাজিত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরুধীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে এসে সিংহাসনে বসানো হয়। দেশ চালানোর ভার তাদের উপর ন্যস্ত করা হয়।
এমন বৈপরীত্ব আমার লেখা-পড়ার কোন কিতাবে পাইনি। যা অবলোকন করেছি বাংলাদেশে আর দেখেছি আমার আশ-পাশের মানুষজনকে। নিজেরা যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তা জাহির করার জন্য এমন মিথ্যার আশ্রয়ে যান। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তার অবসান হয়নি। বিশেষ করে আমাদের দেশের নয় মাসের মুক্তির যুদ্ধ হয়ে পড়েছিল এসব মিথ্যেবাদীদের ভীষন ওজনের এক হাতিয়ার। এসব লোকেরা ভূয়া শব্দটির অন্তরনিহীত তাৎপর্যের চেয়েও আরো বেশী পরিমাণে মিথ্যা দিয়ে জীবন সাজিয়েছেন। যেসব মানুষ তাদের ভাল করে চেনেনা তাদের কাছেই ছিল নিজের বাহাদুরির বিষয়ে মিথ্যা বাখানের কাজ।
আমার জীবন চলার পথে এমন যে কতিপয়ের সাথে জানা শুনার সুযোগ হয়েছিল তাদের অনেকেই আজ এ ধরাধামে নেই। জীবিত থাকলে তাদের কথা কিছু বলতে পারতাম। যেহেতু জীবিত নেই, তাই তাদের টেনে এনে মিথ্যায় সাজানো তাদের জীবনের কতিপয় অংশে কালিমা লেপন করতে চাই না। সময় এদের প্রতিদান দেবে এ যুক্তিতে আমার দৃঢ়তা আছে এবং থাকবে অবিচল।
সময় এমন এক শব্দ, এমন এক অভিব্যক্তি, এমন তার ক্ষমতা যা শুধু অনবদ্য কথা দিয়েও মূল্যায়ন সঠিক হয় না। বলতে গেলে যার কোন সংগ্যা নেই, ব্যাখ্যা নেই, নেই কোন অর্থ কিন্তু আম-আলিম সকলেই সময় বুঝি। আমরা বুঝি সময়ের মাহাত্ম্য। বিশ্বকবিতো বলেই গেছেন-“হে অতীত তুমি ভূবনে ভূবনে কাজ করে যাও গোপনে গোপনে।’ 
এ কাজগুলো করেছে যে বা যারা তা নিরবে নিজের চোখে দেখেছি কিন্তু কেনো জানি না কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। মনে মনে ভাবতাম, এতো পরিচিত লোকজন এসব কি করে!(?) আরো ভাবতাম, একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হ্যাঁ হোতস্মী! পুরাতন সেই কথাকেই বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়- “কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না।” তবে জীবনের এক পর্যায়ে প্রতিবাদ শুধু নয় বিদ্রোহ করেছিলাম কিন্তু সে বৈরী দ্রোহের ফসল গোলায় তুলেছে শত্রুপক্ষ।
কাজ করলে তার স্বীকৃতি আসে। এটিই মানব সমাজের নিয়ম। যে যে কাজ করবে ঠিক ওই নমুনার ততটুকু ফলই তার ঘরে উঠবে। একটুও কম হবে না কিংবা একটুও বেশী হবে না। এ কথাগুলোর প্রতি আমার আস্তা খুব দৃঢ়, কারণ আমি নিজ জীবনচর্চ্চায় এরূপ মানুষ পেয়েছি, এমন অবস্থার দর্শন পেয়েছি। আর তাই মনেহয় মানুষ এ অবস্থাকেই প্রকাশ করে প্রকৃতির বিচার বলে। নিশ্চয়ই সময় ইতিহাসের মিল খুঁজে নেবে।
মৌলভীবাজার সোমবার ২২শে জুলাই ২০১৯সাল

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT