1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আসছে ভাষার মাস ৮ই ফাল্গুন, মহান ভাষা আন্দোলনের দিন - মুক্তকথা
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন

আসছে ভাষার মাস ৮ই ফাল্গুন, মহান ভাষা আন্দোলনের দিন

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৭৯২ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ॥ বিজয়ের মাস চলে গেলো। সামনে আসছে ভাষার মাস ফাল্গুন বা ইংরেজী ফেব্রুয়ারী মাস। ২১শে ফেব্রুয়ারীর সে দিনটি ছিল ৮ই ফাল্গুন বলেই শুনে এসেছি। পুরোনো পাঞ্জি খুঁজলে তা অবশ্যই পাওয়া যাবে। ২১ ফেব্রুয়ারী না বলে ৮ফাল্গুন হিসেবে দিনটিকে পালন করার বহু প্রচেষ্টা হয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু আমরা বলবো ব্যর্থ হয়েছি। আমরা পারিনি। আজো এ চেষ্টা আছে একেবারে লুপ্ত হয়ে যায়নি। কিন্তু কেনো আমরা পারিনি? এ প্রশ্নে কেউ কি কোন কালে ভাবনায় এনে দেখার চেষ্টা করেছেন? এবং এর প্রতিবিধানে কোন ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন? না দেননি বা  করেননি ! কেউ যদি করতেন তা’হলে নিদেন পক্ষে খবরটি কানে আসতো। আমরা কেউ করিনি। করার খুব একটা প্রয়োজনও বোধ করিনি। অবস্থায় তাই মনে হয়। আর এখনতো সারা দেশই ইংলিশ সংস্কৃতির চারণ ভূমি হযে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সিনেমায় একসময় ঘোড়ায় চড়িয়া তলোয়ার হাতে নায়ক আসতেন। গায়ে থাকতো দিল্লী- লাহোরের শাহেনশাহী পোষাক। সে যায়গা এখন দখল করেছে ইংরেজী সংস্কৃতি। নায়ককেতো আগেই দেখা যেতো প্যাণ্ট-সার্ট পড়ুয়া কেতাদূরস্ত বাবু সাব। ইদানিং দেখা যাচ্ছে নায়িকারাও সার্ট প্যান্ট পড়তে শুরু করেছেন। দূরদর্শন নাটকেও একই অবস্থা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পাড় করে তা’হলে আমরা হাটছি কোন পথে? পঞ্চাশ বছরে আমাদের প্রাপ্তি কি?
বদলে যাওয়া এ বিশ্ব প্রকৃতির নিয়ম। এটি বিজ্ঞান। বদলে যাবেই। একই স্থানে কিছুই বসে থাকে না। অমোঘ বিধানের সে বদলকে নিজের করে রাখতেই প্রয়োজন সুশীল মানুষের। তারাই সেখানে হাল ধরবেন।  আমাদের সংস্কৃতিও বদলাচ্ছে কিন্তু সে বদল আমাদের আলোকে নয় বদলাচ্ছে বিদেশী ভাবধারায়, বিদেশী আদলে!
একটি সমাজের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, এগুলো সুশীল সমাজের কাজ। স্বীকার করতেই হবে, স্বাধীনতার পরপরই বুদ্ধীজীবী হত্যা ছিল তেমনি একটি পরিকল্পিত কাজ,  আমাদের সুশীল সমাজকে গড়ে উঠার পথেই গোড়া কেটে দেয়া। সেদিনের সেসব নরপিশাচেরা বুদ্ধীজীবীদের গুনে গুনে ধরে নিয়ে নির্মম ও পৈশাচিকভাবে হত্যা করে আমাদের বিকলাঙ্গ করে দিতে সক্ষম হয়েছিল। যার পরিণাম এখন আমাদের কাছে মূর্ত হয়ে উঠছে বিভিন্ন ঘটনায় ও কর্মে। সুশীল সমাজের নামে চলছে অর্থ-বিত্ত, বাড়ী-গাড়ী, দালান-কোটার মালিক হওয়ার এক দূর্বোধ্য অশালীন দৌড়। তার পাশাপাশি চলছে দূর্ণীতি, দখল, ধর্ষণ আর হত্যা! এমন নীতিহীন ব্যবসায়ীক দৌড় আমরা ধার করেছি আরব আর ইংরেজদের কাছ থেকে। আরবরা করেছে ধর্মের মুখোশে আর ইংরেজরা একই পথে হেটেছে এবং এখনও হাটছে আধুনিকতার মুখোশে। এদের কারো প্রকৃতি সংস্কৃতি আমাদের নয়। ওগুলো তাদের। আমরা ওরা নই। ওরা হতে পারি না।

ইংরেজদের “ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী”র কতিপয় ব্যবসায়ী ১৬০৮সালে ভারত, গুজরাটের সুরাটে ও গোয়ায় প্রথম অবতরণ করে। ১৪৯৮সালে জলপথে ভারত আবিষ্কার করেন ভাস্কো দি গামা। এ পথেই ইংরেজরা ভারতে আসে। তাদের সাথে এই প্রথম ভারতীয়দের পরিচয় ঘটে। ব্যবসার জমি খোঁজে বের করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের পাশাপাশি তারা ভারতেও তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তারা সেসময় ভারতকে “ইষ্ট ইণ্ডিজ” বলেই চিনতো এবং ডাকতো। ইংরেজদের সাথে ভারতীয়দের পরিচয় ভাববিনিময় এখানেই প্রথম ঘটে।
১৭৫৯সালে প্রথম ইংরেজভাষী খৃষ্ঠীয় ধর্মীয় প্রচার দল(মিসোনারিজ) ভারতে আসে। ১৭৮৭সালে রেভারেন্ড সোয়ার্জ নামের একজন খৃষ্টীয় ধর্ম প্রচারকের স্কুল নির্মাণের প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানানো হয়। এর দশ বছর পর ১৭৯৭সালে একজন জন মিলার “দি টিউটর” নামে ইংলিশ শিক্ষার একখানা পুস্তক প্রকাশ করেন। এ বইখানা তদানিন্তন বঙ্গের ছেরামপুরে প্রকাশিত হয়েছিল।
উদারবাদী রাজনীতিক ও ঐতিহাসিক লর্ড মেকাওলে{(১৮০০-১৮৫৯)(ইংল্যাণ্ডের সংসদ বা আইনসভার অধিকারের সমর্থক ও রাজবিরোধী দলের সদস্য। এ দলই বর্তমানের লিবারেল দল)} ভারতে ইংরেজী ভাষার ব্যবহার নিয়ে যে মত পোষণ করতেন তা তারই ভাষায়- advocated the teaching of English in India with his famous notion of creating “a class of persons, Indian in blood and color, but English in taste, in opinions, in morals, and in intellect”.(সূত্র: WOMEN OF POWER, Sunday October 6 2013, article by Ramya Raju)। লর্ড টি বি মেকাওলে ১৮৩৫সালে এ মত দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ইংরেজী শিক্ষার শুরু দক্ষিণ-এশিয়ার দেশে দেশে।
“ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী”র উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ধীরে ধীরে স্থানীয় ভারতীয় রাজনীতিতে তাদের যুক্ত বা অনুপ্রবেশ এবং খুব ধীরলয়ে খণ্ডে খণ্ডে তাদের শাসকে পরিণত হওয়ার কাহিনী ভারতীয় ইতিহাস খুব উল্লেখযোগ্যভাবে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছে। তাদের আগমনের পরের শতকে সারা ভারতের সকল সম্পদের উপর তাদের বেআইনী অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এবং লুণ্ঠনের ক্ষেত্র প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠা করে, শিল্পকারখানার বিস্তার ঘটায়। একই সাথে তারা তৈরী করে একদল কেরাণি যারা তাদের এসব কাজের লিখিত বিবরণ বা হিসেব রাখবে।
মেকাওলে’র উপরোল্লিখিত সিদ্ধান্ত বা মত ইংরেজদের ক্ষমতারোহনের পরবর্তী ১৫০ বছর চলেছে নব নব উদ্যোমে। এই কেরাণীকূলকে ইংরেজরা দিয়েছিল সম্পদ, ক্ষমতা ও পদ। এই কেরাণী চাকরি পেতে একসময় নিয়ম ছিল “passing clerical exams in English”। ফলে মানুষ এমন ধারাকেই জীবন মনে করে নিয়েছিল। যা আজও রয়েছে। প্রায় দেড়শতাব্দি সময়কাল ধরে বড় একপক্ষ ভারতীয় এই আদলে রক্তে মাংসে গড়ে উঠে। এভাবে চলতে গিয়ে একসময় মানুষ মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে অন্যান্য চাকুরীর চেয়ে সরকারী চাকুরীকে দু’হাত তুলে অভিনন্দন জানাতো। মেয়েরাও নিজ থেকে সরকারী চাকুরের নিকট বিয়েকে সৌভাগ্য মনে করতো।

১৯৪৭-এ ভারত বিভক্তির পর এই ‘সাহেব বা সাব’ সংস্কৃতি কোটি কোটি মানুষের জীবনে এক ভয়ঙ্কর বিষাদের ছায়া হয়ে আসে। ইংরেজদের ফেলে যাওয়া পদ পূরণ করে নতুন গড়ে উঠা ইংলিশ শিক্ষিত বাদামী ভারতীয় বা বাঙ্গালী ইংরেজরা। এর ফলে এমনিতেই শ্রেণী বিভক্ত বৃহৎ ভারতে নতুন করে এক দূর্ভাগা শ্রেণী বিভক্তির সূচনা হলো। একপক্ষে অফিসার ও সাধারণ মানুষ বা নন-অফিসার। সামরিক, প্রশাসন, ব্যাঙ্ক সহ ছোট বড় সকল কর্মক্ষেত্রে এমন দুঃসপ্নের ভয়ানক দ্বিধা বিভক্তি আসলো। এতে করে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হলো আদিবাসীজনগন ও গ্রামীণ গরীব জনগোষ্ঠী। কারণ তারা ইংরেজী শিক্ষিত নয়। ওদের তো ওখানে যাওয়ারই সুযোগ ছিল না সে সময়।
ইংরেজরা তাদের ভাষা আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশে চালু করতে গিয়ে প্রথম প্রথম সাহসই পায়নি। ১৭৫৭ থেকে পুরো আটাত্তর বছর পরে ১৮৩৫সালে বৃটিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ফার্সী ভাষার স্থলে ইংরেজীকে প্রতিস্থাপন করেছিল।সেই থেকে শুরু করে দুই দুই স্বাধীনতার পরও আজ অবদি আমরা আমাদের নিজেদের ভাষাকে সমাজের সকল ক্ষেত্রে চালু করতে পারিনি। ডাক্তারী পড়তে গেলে এখনও আমাদের ইংরেজীতেই পড়তে হয়। বিশেষ কোন কোন বিষয়ে গবেষণা করতে গেলে এখনও আমাদের বাইরে যেতে হয়। আর বাইরে মানেই হয় আমেরিকা নয়তো বৃটেন। দু’দেশই ইংরেজী ভাষার দেশ। আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির-সভ্যতার গোড়ার কথা সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। যেসব নিতে পারেনি সেসবেও ভাগ বসিয়েছে আন্তর্জাতিকতার নামে।

সবচেয়ে বড় কথা কি, আজো আমাদের মানুষ নিজের দেশের উপর নির্ভরতা আনতে পারে নি। এখনও মানুষ ভিটে-মাটি বিক্রি করে ওইসব দেশে চলে যেতে চায়। কারণ দেশে কিছু করার মতো স্থানগুলো খুব ছোট সীমিত। হাস্যকর শুনালেও কথাটা সত্যি যে আজ যদি বাংলাদেশে বলা হয় যে কারা কারা বৃটেন-আমেরিকা যেতে চান। কতজন লোক যেতে চাইবেন না, তাদের পরিমান যে একেবারেই নগন্য হবে এটি যেকোন লোক বিনাহলফে বলতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: সকল তথ্য উপাত্ত অন্তর্জাল থেকে। লণ্ডন, রোববার, ১০জানুয়ারী ২০২১

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT